প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ২১:৪৫ পিএম
ঠিক ৯ বছর আগে বাবা মইনুল হক ও মা আয়শা রুমার সঙ্গে বাংলাদেশ
থেকে বিমানে চেপে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায় ছোট্ট আহনাফ আবিদ
মাহির। জীবনে প্রথম বিমানে চড়ার সময়
থেকেই নীল আকাশে যন্ত্রের ডানা মেলানো আর ঝাপটানোর স্বপ্ন গড়ে ওঠে। ছেলের স্বপ্নের কথা জানতে পেরে
বাবা-মাও উৎসাহী হয়ে ওঠেন। মাহিরকে লস
অ্যাঞ্জেলেসের একটি ফ্লায়িং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। শুরু হয় দীর্ঘ
প্রশিক্ষণ। গত রবিবার সকালে তার এই স্বপ্নপূরণ হয়। অবশেষে উড়োজাহাজ নিয়ে বেশ কয়েকবার নীল গগনের সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে আবার মাটিতে
নেমে আসে মাহির। ছেলের আকাশে ভেসে বেড়ানোর স্বপ্নপূরণ দেখে আনন্দে ভাসেন মা-বাবাসহ
বিমানবন্দরে উপস্থিত শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
নিজের ১৬তম জন্মদিন। আর এই দিনটি তার কাছে সবিশেষ হয়েই থাকবে একাধিক কারণে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে একক উড়োজাহাজ
উড্ডয়নের বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আহনাফ আবিদ মাহির। গত রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় লস অ্যাঞ্জেলেস হোয়াইটম্যান বিমানবন্দরে প্রথম
বাংলাদেশি হিসেবে একা বিমান নিয়ে উড্ডয়ন এবং অবতরণ করে মাহির। প্রশিক্ষণকালীন
প্রশিক্ষককের পাশে বসে বিমান চালায় সে। তারপরও এটি অবশ্যই একটি বড় অর্জন তার
জন্য।
মাহির ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টর ছিলেন বাংলাদেশি ইলিয়াস খান।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নিয়ম অনুযায়ী ১৬ বছরে পা
রাখার দিন থেকে একা বিমান চালানোর অনুমতি নিয়ে সে প্রথম বিমান চালিয়েছে। ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টরের বিশেষ লিখিত অনুমোদন সাপেক্ষে পরবর্তী এক বছর
যাত্রীবিহীন কেবলমাত্র প্রশিক্ষণ নেওয়া বিমানই চালাতে পারবে মাহির। এরপর ১৭ বছর
পূর্ণ হলে প্রাইভেট পাইলট সার্টিফিকেট পাবে। তখন বাণিজ্যিক নয় এমন এক ইঞ্জিন
বিশিষ্ট বিমান চালানোর অনুমতি পাবে মাহির। ধাপে ধাপে হবে দক্ষ পাইলট।
গত রোববার সকালে মাহির বাবা-মা ও শুভানুধ্যায়ীরা
বিমানবন্দরে জড়ো হন তার বিমান উড্ডয়ন দেখতে। মাহিরের সাদা মেঘের মধ্যে দিয়ে বিমান
চালনা এবং নিরাপদে একাধিকবার অবতরণ করার দৃশ্য তাদের অপরিসীম গর্ব ও আনন্দে ভরিয়ে
দেয়। মাহিরের বাবা বলেন,
‘এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। মাহিরের মা বলেন,
সবার কাছে দোয়া চাই যাতে সে ভবিষ্যতে এটা ধরে রাখতে পারে’। আকাশ ভ্রমণের ভালো লাগাকে পেশা হিসেবে নিতে আগ্রহী মাহির
জানায় তার অনুভূতির কথা। সে বলে, ‘আমি খুবই এক্সাইটেড। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কোনো বাংলাদেশি হিসেবে মাহিরের এ
সাফল্যে খুশি প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নতুন
প্রজন্মের অনেকেই পাইলটকে এখন বেছে নিচ্ছেন তাদের অন্যতম প্রধান পেশা হিসেবে। বর্তমানে
চাহিদার নিরিখে এই পেশায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ-সুবিধাও দেশটিতে বাড়তে শুরু করেছে। প্রবাসী
বাংলাদেশিদের অনেকেই মনে করছেন, মাহিরের এই অর্জন অন্যদেরও অনুপ্রেরণা জোগাবে। আরও
অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠবে পাইলট হওয়ার পেশা বেছে নিতে। ইতোমধ্যে মাহিরের অর্জন যুক্তরাষ্ট্রের
বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।