প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪ ২১:৩৬ পিএম
আপডেট : ২০ জুন ২০২৪ ২৩:২৯ পিএম
ভারতের অষ্টাদশ সংসদের অধিবেশন শুরু হবে ২৪ জুন। দুদিন নতুন এমপিদের
শপথ অনুষ্ঠান হবে। এই আনুষ্ঠানিকতা বাদে সবার নজর লোকসভা স্পিকার পদে কে অধিষ্ঠিত হবেন
তার দিকে। বিজেপি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। ফলে লোকসভায় স্পিকার ও ডেপুটি
স্পিকার পদের নানা সমীকরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। লোকসভা স্পিকারের
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৬ জুন। স্পিকার নিয়োগের আগের দুই দিন এমপিদের শপথ নেওয়া
হবে। শপথ শেষে নরেন্দ্র মোদি তার নতুন মন্ত্রিসভার সঙ্গে সবাইকে পরিচিত করবেন। তারপর
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর উপস্থিতিতে লোকসভা ও রাজ্যসভার যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, নির্বাচনের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এনডিএ জোট থেকেই
কাউকে মনোনয়ন দেবেন।
লোকসভার ওপর স্পিকারের ব্যাপক প্রভাব থাকে। লোকসভার বৈঠকের পাশাপাশি
বৈঠকের এজেন্ডা নির্ধারণেও স্পিকারের ব্যাপক প্রভাব থাকে। ঐতিহাসিকভাবে এই পদটি সংসদের
আইনানুগ ক্ষমতার প্রতীক। কোন বিলকে মানি বিল অভিধা দেওয়া বা না দেওয়ার এখতিয়ারও লোকসভা
স্পিকারের ওপরই বর্তায়।
বিশেষ বৈঠকে স্পিকার প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন মোদি
লোকসভা অধিবেশনের বিশেষ বৈঠকে এনডিএ তাদের পক্ষ থেকে একজন প্রার্থী
মনোনয়ন দেবেন। এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও লোকসভা স্পিকারের নাম ঘোষণা করবেন।
নিউজ১৮-এর প্রতিবেদন অনুসারে, প্রার্থী হিসেবে ওইদিন পাঁচ থেকে ছয়জনের নাম ঘোষণা করা
হতে পারে। তবে কাদের নাম উত্থাপন করা হবে তা এখনই জানা যায়নি। লোকসভার স্পিকার পদে
বিজেপি শেষ পর্যন্ত কাকে পছন্দ করবে, তার ইঙ্গিত এখনও তারা দেয়নি; যদিও কয়েকজনের নাম
ভাসিয়ে দিয়েছে। বিরোধী জোট স্পিকার পদে ভোটাভুটির রাস্তায় যাবে কি না, সে আভাসও তারা
দেয়নি। অন্ধ্র প্রদেশের ডি পুরণ্ডেশ্বরী ও ওডিশার ভর্ৎহরি মেহতাব। এ দুই রাজ্যেই বিজেপি
এবার দারুণ ফল করেছে। ওড়িশায় একাই ক্ষমতায় এসেছে। ২১ আসনের ২০টিই তারা দখল করেছে। ভর্ৎহরি
মেহতাব আগে ছিলেন বিজু জনতে দলে। পরে বিজেপিতে যোগ দেন। প্যানেলের সদস্য হিসেবে লোকসভা
পরিচালনার কিছু অভিজ্ঞতা তার আছে। পুরণ্ডেশ্বরীর নাম ভাবা হয়েছে টিডিপির চন্দ্রবাবু
নাইডুর মন রাখতে। পুরণ্ডেশ্বরী টিডিপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এন টি রাম
রাওয়ের কন্যা। সেই নিরিখে চন্দ্রবাবুর শ্যালিকা। কংগ্রেস থেকে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।
মনে করা হচ্ছে, অন্ধ্র প্রদেশের এই নারীকে বাছা হলে নাইডু হয়তো আপত্তি করবেন না। দল
ভাঙনের শঙ্কাও থাকবে না। একটি বিষয় মোটামুটিভাবে স্পষ্ট, নরেন্দ্র মোদি কোনোভাবেই
স্পিকার পদ হাতছাড়া করতে রাজি নন। সে ঝুঁকি তিনি নেবেন না।
গুঞ্জন রয়েছে, ১৭তম সংসদের স্পিকার ওম বিরলাকেও পুনর্বহাল করা হতে পারে। এ ছাড়া অমলাপুরে জয়ী টিডিপির জিএম হরিশ বালাযোগীর নামও শোনা যাচ্ছে। নীতিশ কুমার জানিয়েছেন, বিজেপি থেকে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি সমর্থন জানাবেন। তবে টিডিপির একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘যদি একতরফাভাবে এনডিএ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাহলে লোকসভা স্পিকারের জন্য আমরা তদবির চালাব।
এনডিএ জোট থেকে প্রার্থী মনোনয়ন হতে পারে
ভারতের লোকসভার স্পিকার সচরাচর অনানুষ্ঠানিকভাবেই নির্বাচন করা হয়।
তবে এবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় এবং লোকসভায় শক্তিশালী বিরোধী জোট থাকায়
হিসাব পালটে গেছে। ইন্ডিয়া জোট লোকসভা স্পিকারের পদ না চাইলেও তারা ডেপুটি স্পিকারের
পদ দাবি করেছে। এনডিএ জোটের নেতারা অবশ্য বিজেপি থেকে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার
বিষয়ে একমত হয়েছে বলে জানা গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্টেটসম্যানের এক প্রতিবেদনে বলা
হয়েছে, এনডিএ জোট থেকে লোকসভা স্পিকার নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে বিজেপি বৈঠক করেছে। তবে ডেপুটি
স্পিকার পদটিতেও তারা শরিক দলের কাউকে নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছে।
ইন্ডিয়া জোট এবং এনডিএ নেতাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা মূলত ডেপুটি
স্পিকার পদটি নিয়ে। বিজেপির একাধিক সূত্রের দাবি, স্পিকার পদটি তারা নিজেদের কাছেই
রাখছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা এখনও কোনো ঘোষণাই দেয়নি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে
বৃহস্পতিবার জানানো হয়, বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা রাজনাথ সিং জোটের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার
করছেন। মোদির জোট সরকারে টিডিপি ও জেডিইউ স্পিকার পদের জন্য প্রাথমিকভাবে দাবি জানিয়েছিলেন।
তবে সম্প্রতি তারা নিজ রাজ্যের অর্থনৈতিক বরাদ্দ ও বিশেষ সুবিধার কথা চিন্তা করে এই
দাবি কিছুটা শিথিল করেছেন। রাজনাথ সিংয়ের আবাসন এনডিএ জোটের সদস্যরা ২০ জুন এক বৈঠকে
সিদ্ধান্ত নেয়, স্পিকার পদে জোট থেকেই কোনো প্রার্থী মনোনীত করা হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের
একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, বিজেপি থেকে প্রার্থী দেওয়া হলেও কারও আপত্তি নেই।
ইন্ডিয়া জোটের চোখ ডেপুটি স্পিকার পদে
ইন্ডিয়া জোট এবার বেশ শক্ত অবস্থানেই রয়েছে। লোকসভা স্পিকারের পদে চন্দ্রবাবু নাইডুকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইন্ডিয়া জোটের নেতারা। তবে তারা একই সঙ্গে ডেপুটি স্পিকার পদটির দিকে চোখ রেখেছে। মূলত ভবিষ্যতে লোকসভায় চন্দ্রবাবু নাইডুকে যদি নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা যায় তাহলে এক ঢিলে দুই পাখি মারার হিসাব কষেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি রাহুল গান্ধীও জানিয়েছেন, এনডিএ শরিকদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। প্রায় এক যুগ পরে লোকসভায় কংগ্রেস শক্ত অবস্থানে ফিরেছে। তারা এই বড় সুযোগটিকে কৌশলগতভাবে ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে লোকসভার স্পিকার পদ নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের অবস্থানও ধোঁয়াশায়। নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয় মেয়াদে লোকসভায় ডেপুটি স্পিকারের পদটি শূন্য ছিল। নিয়ম অনুসারে এই পদটি বিরোধী পক্ষের কাছেই যায়। তবে বিজেপি ডেপুটি স্পিকার পদটি শরিক দলের কারও জন্যই রাখতে চাচ্ছে। এভাবে এনডিএ জোট সরকারকে ক্ষমতার কেন্দ্রে রাখার সুবিধা পাওয়া যাবে। বিষয়টি ইন্ডিয়া জোট বুঝতে পেরেছে। তারা জানিয়েছে, ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থীকে ডেপুটি স্পিকার পদটি দেওয়া না হলে তারা নিজেরাই স্পিকার পদে প্রার্থী দেবে। বিজেপি বুঝতে পেরেছে, এনডিএ জোটের শরিক দলের কাউকে যদি ডেপুটি স্পিকারের পদ দেওয়া হয় তাহলে ইন্ডিয়া জোটের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে। বিগত পাঁচ বছর ধরে ডেপুটি স্পিকার পদটি খালি।
সূত্র : ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস