প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪ ২১:০৩ পিএম
রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সুরক্ষা চুক্তির পর অস্ত্র রপ্তানিকারক
দেশ দক্ষিণ কোরিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল অফিস বৃহস্পতিবার এক
প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউক্রেনকে সরাসরি অস্ত্র রপ্তানির বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তারা নারাজ।
তবে পুতিনের এই সফরের পর তারা এই নীতি ‘পুনর্বিবেচনা’ করে দেখতে চায়। এর আগে বুধবার
পিয়ংইয়ংয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন ঐতিহাসিক
সুরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের পর এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। সুরক্ষা
চুক্তি অনুসারে, যেকোনো নিরাপত্তা সংকটে রাশিয়া-উত্তর কোরিয়া একে অপরকে সহযোগিতা করবে।
সুরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টা পর সিউল প্রেসিডেন্সিয়াল অফিস
সিবিএস নিউজের রিপোর্টারকে জানিয়েছে, সিউল প্রশাসন ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে
যে কড়া নীতিমালা অনুসরণ করছিল তা পুনর্বিবেচনা করে বদলাতে পারে। অস্ত্র রপ্তানিকারক
দেশ হলেও সংঘাতময় অঞ্চলে অস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে সিউল বরাবরই কিছু কঠোর শর্ত আরোপ
করে। ওয়াশিংটন এবং কিয়েভ একাধিকবার এই শর্ত শিথিল করার আবেদন জানিয়েছিল তবে সিউল তাতে
কর্ণপাত করেনি।
দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার
চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশটিতে উৎপাদিক ট্যাংক ও হোয়িটজার ইউরোপীয় দেশগুলোতে তারা নিয়মিত
রপ্তানি করে আসছে। বিশেষত কিয়েভের অন্যতম প্রধান সহযোগী পোল্যান্ডের সঙ্গে তাদের বিলিয়ন
মার্কিন ডলারের চুক্তি রয়েছে। তবে মস্কো-পিয়ংইয়ং প্রশাসনিক সম্পর্ক পোক্ত হওয়ায় দেশটি
নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছে।
‘দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তরভাগের প্রায়শই আঞ্চলিক সংঘাত ঘটে। এমন
সময়ে এই সুরক্ষা চুক্তি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। উত্তর কোরিয়ার সামরিক সক্ষমতা
বাড়ানোর মতো যেকোনো সহযোগিতায় এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা বাড়তে পারে। বিশেষত এই চুক্তির
মাধ্যমে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিধিমালাও ভঙ্গ হচ্ছে’Ñ মন্তব্য করেন দক্ষিণ কোরিয়ার
জাতীয় নিরাপত্তা-বিষয়ক উপদেষ্টা চ্যাং হো জিন। তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের
পাশাপাশি রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে যে সহযোগিতা দিচ্ছে তা মস্কোর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার
সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’ রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে একটি সার্বিক কৌশলগত
অংশীদারত্ব চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তিতে কোনো পক্ষ আগ্রাসনের শিকার হলে পারস্পরিক সহযোগিতার
কথা বলা হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পিয়ংইয়ং সফরকালে দৃশ্যত এ প্রতিরক্ষা
চুক্তি সই হয়।
দুই দিনের সফরে গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৩টার দিকে পিয়ংইয়ং বিমানবন্দরে
পৌঁছান পুতিন। বুধবার পুতিন ও উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-উনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক
হয়। সেখানে এই চুক্তিতে সই করেন দুই নেতা। বৈঠক শেষে পুতিন বলেন, দুই দেশের মধ্যে সার্বিক
অংশীদারত্ব চুক্তি সই হয়েছে। এতে আগ্রাসনের শিকার হলে পারস্পরিক সহযোগিতার কথা বলা
হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক কারিগরি সহযোগিতা গড়ে তোলার বিষয়টিও নাকচ করেননি
তিনি। চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ তাদের উদ্বেগ
প্রকাশ করেছে। সুরক্ষা এই চুক্তি অনুসারে রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র পাবে। রাশিয়া
অন্যদিকে উত্তর কোরিয়াকে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে। ফলে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে
অস্ত্র আমদানি না করেও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে তার আগ্রাসন চালিয়ে যেতে পারবে বলে শঙ্কা
অনেকের। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা, এই চুক্তির মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার
পরমাণু অস্ত্র ও মিসাইল ব্যবহারের শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
পিয়ংইয়ং প্রশাসন রাশিয়াকে সরাসরি অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’
বলে অভিহিত করেছে। তবে সুরক্ষা নীতির আওতায় অস্ত্র সহযোগিতার বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়া
যাচ্ছে না। গত মার্চে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে অবৈধ অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ
ওঠে। সেবার রাশিয়া তাদের ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি
দেয়। এজন্য উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সফরকালে কিম জং-উন
পুতিনকে ‘কোরিয়ানদের নিকট বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সর্বাত্মক
সহযোগিতার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
মস্কো-পিয়ংইয়ং সম্পর্ক পর্যবেক্ষণ করে দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, তারা উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার একাধিক অস্ত্র ও তেলের শিপমেন্টে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউশন ফর নর্থ কোরিয়া স্টাডিজের গবেষক আহন চ্যান লি জানিয়েছেন, ‘সিউলের তরফে ইউক্রেনকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে স্পষ্ট ধারণা গড়ে তুলতে হবে আগে। তারা যদি আর্টিলারি শেল, ল্যান্ডমাইনের মতো যুদ্ধরসদ চায় তাহলে সে সহযোগিতা করতে আগ্রহী আছে দক্ষিণ কোরিয়া। তবে ইউক্রেনকে সহযোগিতায় দক্ষিণ কোরিয়া অস্ত্র সরবরাহ নীতিতে এবার কিছুটা শিথিল হবে।’
সূত্র : এবিসি নিউজ