আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২২ ১৪:০৫ পিএম
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২২ ১৫:৪৯ পিএম
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
রাশিয়ার হামলা বন্ধে সহায়তা চেয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের সুযোগ চেয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি এ হামলা বন্ধের জন্য বেইজিংকে মস্কোর ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান।
চীনের সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের (এসসিএমপি) বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলেনস্কি বলেন, `আমি সরাসরি কথা বলতে চাই। প্রেসিডেন্ট জিন পিংয়ের সঙ্গে আমার একবার কথা হয়েছিল, সেটিও এক বছর আগে। রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে আমরা তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার জন্য চেষ্টা করছি। আমার বিশ্বাস, চীনের সঙ্গে আলোচনা যুদ্ধ বন্ধে আমাদের সহায়তা করবে।'
চীন রাশিয়ার অন্যতম মিত্র রাষ্ট্র। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনকে ‘নাৎসিবাদের প্রভাব থেকে মুক্তকরণ’ এবং ‘নিরস্ত্রীকরণের’ লক্ষ্যে দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করলেও চীন এখনো পর্যন্ত এ হামলার নিন্দা জানায়নি। ছয় মাস ধরে চলা এ যুদ্ধে ইউক্রেনে অন্তত ৫ হাজার ৩২৭ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এ যুদ্ধের কারণে বিশ্বের রুটির ঝুড়িখ্যাত ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানিও বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে সারা বিশ্বে খাদ্য সংকট বাড়তে থাকে। পাশাপাশি পণ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
জেলেনস্কি এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার আক্রমণকে যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছে। কিন্তু বেইজিং বলেছে, রাশিয়াকে এ আক্রমণে যেতে প্ররোচিত করা হয়েছে। ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণের আশঙ্কায় তারা এ হামলা শুরু করে।
জিন পিং এর আগে জুনে বেইজিংয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, এ হামলা মানবতার জন্য উদ্বেগজনক ঘটনা। তবে কীভাবে এ সংঘাত শেষ করা যায় তার কোনো ইঙ্গিত দেননি তিনি।
গত মাসের শুরুতে চীনের প্রেসিডেন্ট জিন পিং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে আখ্যা দেওয়া রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সাক্ষাতে তিনি পুতিনের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
একেই সঙ্গে ইউক্রেন সমস্যা সমাধানে সবপক্ষকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বানও জানান চীনা প্রেসিডেন্ট।
জেলেনস্কি জানান, তিনি বুঝতে পারছেন এ যুদ্ধের বিষয়ে চীন ভারসাম্যমূলক অবস্থান বজায় রাখতে চাইছে। কিন্তু রাশিয়া হলো দখলদার, তারা জোরপূর্বক আমাদের ভূখণ্ড দখল করতে এসেছে। একটি বড় রাষ্ট্র হিসেবে চীনের এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত এবং রাশিয়াকে তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় ফেরানো উচিত।
তিনি আরো বলেন, `আমি সত্যি চাই রাশিয়ার প্রতি চীন তাদের মনোভাব পুনর্বিবেচনা করুক।' এ ছাড়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও বেইজিংকে আহ্বান জানান তিনি।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কোনো দেশ যদি নিজেদের ইচ্ছেমতো আইন ভঙ্গ করতে পারে, তবে নিরাপত্তা পরিষদ থাকার প্রয়োজনীয়তা কী।
জেলেনস্কি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন এ যুদ্ধ শেষ করতে পুতিনকে চাপ দেওয়ার জন্য চীনের অর্থনৈতিক শক্তি ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ বেইজিং মস্কোর অন্যতম বাণিজ্যিক অংশীদার। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক নিষেদ্ধাজ্ঞা থেকে দেশটির অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে অপরিশোধিত তেল আমদানি করছে চীন।
চীনের বাজার ছাড়া রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবে একঘরে হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, অন্তত যুদ্ধ শেষ না হওয়া অবধি চীন রাশিয়ার সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সংকোচনের এ কাজটি করতে পারে।
/এনএস/সাদিক/