প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ০৯:১২ এএম
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪ ১০:৩৭ এএম
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি : সংগৃহীত
আজ রবিবার সন্ধ্যায় টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করবেন বিজেপিপ্রধান নরেন্দ্র মোদি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় নরেন্দ্র মোদি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ২০১৪-২০২৪ সাল পর্যন্ত শক্তিশালী প্রতিপক্ষহীনতায় ভুগছেন তিনি। তিনি আত্মতুষ্ট হয়েই যেন বলেছিলেন, ‘আমার জীবনে যদি কোনো শূন্যতা থাকে তবে তা হবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ না থাকা।’ মোদির সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। লোকসভা সংসদে শক্তিশালী বিরোধী জোটই পাচ্ছেন এবার।
ভারতের রাজনীতির গতিবিধি পাল্টে গেছে। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি মাত্র ২৪০টি আসন পেয়েছে। মিত্রশক্তির ওপর নির্ভর করে জোট সরকার গঠন করায় অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারের অবস্থা আলাদা। নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় যে বড় রদবদল আসতে চলেছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কেমন হবে মোদির শপথ অনুষ্ঠান?
ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় প্রধানমন্ত্রী ভবনে নরেন্দ্র মোদি ও মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা শপথ নেবেন বলে জানা গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, মোদির সঙ্গে শপথ নেবেন মোট ১৮ জন। এর মধ্যে ৭ জন পূর্ণ মন্ত্রী রয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ২ জন বিজেপির। বাকিরা শরিক দলের সদস্য। লোকসভা নির্বাচনে সরকার গড়তে শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে মোদি-শাহদের। এই সুযোগে বিজেপির ওপর চাপ বাড়িয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু, নীতিশ কুমারের মতো শরিক নেতারা। ক্যাবিনেট মন্ত্রিত্ব ভাগাভাগি নিয়ে দরকষাকষি চলেছে।
সূত্রের খবর, এদিন রবিবার মোদির সঙ্গে যে ৭ জন পূর্ণমন্ত্রী শপথ নেবেন তাদের মধ্যে দুজন চন্দ্রবাবুর টিডিপি, দুজন নীতিশ কুমারের জেডিইউ এবং একজন শিব সেনার সদস্য। বাকি দুজন বিজেপির। বাকিরা প্রতিমন্ত্রী বা স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত দেশি-বিদেশি অতিথিদের অনেকেই ইতোমধ্যে দিল্লি পৌঁছেছেন। মোদির শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথি হিসেবে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ডা. মোহাম্মদ মুইজ্জু, সেইশেলসের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আফিফ, মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ কুমার জগন্নাথ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহল প্রচন্দ এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পাশাপাশি একই দিন সন্ধ্যায় আমন্ত্রিত নেতারা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মু আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেবেন রাষ্ট্রপতি ভবনে।
তবে গতকাল শনিবার বিকাল পর্যন্ত ইন্ডিয়া জোটের কোনো নেতাকেই শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ। কংগ্রেস নেতার প্রশ্ন, ‘মোদি মুখে বলছেন বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে এগোবেন। এটাই কি সঙ্গে নিয়ে এগোনোর নমুনা?’
মোদি ৩.০ : নতুন রাজনৈতিক কৌশল?
প্রায় ১০ বছর শাসনের পর শুরু হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদ। আধুনিক প্রযুক্তির যুগের ভাষায় যাকে বলা হচ্ছে ৩.০। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মেয়াদে মোদির একচ্ছত্র শাসনকৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে চলেছে। শুধু বিরোধী জোটই নয়, নিজ জোটের ভেতরেও মোদিকে কৌশলী হতে হবে। লোকসভা নির্বাচনের ফল যাচাই করে মোদির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে এমনটি নয়। এনডির শরিকরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার ওপরই আস্থা রেখেছে। পার্থক্য এবার মোদিকেই কেন্দ্র করে যে সরকারের কাঠামো নিয়ন্ত্রিত হবে না, তা স্পষ্ট।
সঙ্গত কারণেই মোদিকে রাজনৈতিক কৌশলে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক কৌশলে যে তাকে ইতোমধ্যে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে, তাও অনেকটা স্পষ্ট। মোদির সঙ্গে জোট সরকার গঠন করলেও টিডিপি এবং জেডিইউর নেতাদের মতানৈক্য নেই। জেডিইউর নীতিশ কুমার গোষ্ঠীভিত্তিক শুমারির দাবি জানিয়েছেন। শুমারির ভিত্তিতে দেশের মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম, প্রণোদনা ও নীতি বাস্তবায়ন সহজ হবে বলে দাবি করেছেন তিনি। এর আগে মোদি তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশে মুসলমান গোষ্ঠীর জন্য আলাদা সুযোগসুবিধা বাতিলের কথা বললেও টিডিপি তা পুনরায় ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই দুই শরিকের দাবি-দাওয়ার প্রতি তাই মোদিকে মনোযোগ রাখতে হবে, যাতে এনডিএ জোটে ফাটল না ধরে।
পাশাপাশি লোকসভায় শক্তিশালী বিরোধী জোট থাকায় সংসদে মোদিকে নানা সমালোচনার মুখোমুখি হতে হবে। লোকসভায় তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপস্থিতি বিজেপির জন্য ইতোমধ্যে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঞ্জাবে অমৃতপাল সিং ও শরাবজিৎ সিং খালসা এবং জম্মু-কাশ্মির আসনে আব্দুর রশীদ শেখÑ এ তিনজনের মধ্যে দুজন ভারতবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে জেলে রয়েছেন। পাঞ্জাবের দুই বিজয়ী খালিস্তান বিদ্রোহের সমর্থনকারী বলেও পরিচিত। কাশ্মিরে সেপারেটিস্ট আন্দোলনের প্রধান রশীদ লোকসভায় বড় সংযোজন।
রাজনৈতিক কৌশলের পাশাপাশি মোদিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির তিন সংকটÑ গ্রামীণ অঞ্চলে কর্মসংস্থান তৈরি, বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি ঠেকানোর জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জোর মোদির
শপথগ্রহণের আগে পরবর্তী রাষ্ট্রপরিচালনা কৌশল নিয়ে মোদি অল্প কিছুই জানিয়েছেন। তার মধ্যে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টিকে রেখেছেন সর্বাগ্রে। মোদির এই বক্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সহযোগীদের মধ্যে প্রত্যাশা বাড়িয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সমুদ্রসীমায় চীনের আধিপত্য বিস্তার ঠেকাতে ভারতের সহায়তা পাওয়ার প্রত্যাশা করছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সামরিক সহযোগিতা বিগত কয়েক বছরে অনেক বেড়েছে।
বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্প্রতি পাকিস্তানের সহযোগিতা বেড়েছে। ফলে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও ভালো হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। লোকসভায় বিরোধী জোট মোদির সামরিক সংস্কার নিয়ে আপত্তি না জানালেও সীমান্তে চীনের সঙ্গে সংঘাত মোকাবিলায় তার তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। আবার ক্ষমতায় ফিরে মোদি প্রতিরক্ষা মেনুফ্যাকচারিং খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালাবেন, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। সামরিক খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ফ্রান্স, ইসরায়েলের সঙ্গেও ভারত কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে পারে।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য হিন্দু