বিশেষ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৪ ০৮:৫৮ এএম
আপডেট : ০৩ মে ২০২৪ ১০:৫৫ এএম
প্রতীকী ছবি
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী ও এমপিদের অবৈধ প্রভাব ঠেকাতে জাতীয় সংসদের স্পিকারের দ্বারস্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চার ধাপে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবের কারণে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে কমিশন। সম্প্রতি ডিসি-এসপিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকেও এ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ পায়। সেই ধারাবাহিকতায় ইসি এবার স্পিকারকে চিঠি দিয়েছে। ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্পিকারকে এই চিঠি পাঠান। অন্যদিকে ভোটে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগে রেলমন্ত্রীর ছেলেকে সতর্ক করেছে ইসি। এ ছাড়া চাঁদপুরের মতলব থানার ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, কমিশন সংসদ সচিবালয়ে একটি চিঠি দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবৈধ প্রভাব বিস্তার না করার জন্য বলেছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের এমপি-মন্ত্রী যেই হোন না, কোনো অবৈধ প্রেশার দিলে তা আমলে না নেওয়ার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব প্রার্থী আমাদের কাছে সমান। কে কার আত্মীয় সেটা দেখার দরকার নেই। সব প্রার্থীর প্রতি সমান আচরণ করতে হবে। কোনো প্রার্থী যদি আচরণবিধি না মানেন বা অবৈধ প্রভাব বিস্তার করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মো. আলমগীর আরও বলেন, কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ইসি সচিব সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে একটি পত্র দেবেন। স্পিকারের দৃষ্টিতে আনবেন, আমরা কী ধরনের নির্বাচন চাই, সেটা ওখানে থাকবে। চিঠি সম্ভবত চলে গেছে। বার্তাটা হলো, মন্ত্রী ও এমপিদের আত্মীয়স্বজন প্রার্থী থাকতে পারেন, কিন্তু কোনো অবৈধ প্রভাব বিস্তাব করতে পারবেন না।
ভোটের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। উৎসবমুখর। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। গোয়েন্দা রিপোর্টেও কোনো থ্রেট নাই বলা হয়েছে। যেহেতু কয়েক ধাপে ভোট হচ্ছে, তাই ফোর্স বেশি দেওয়া সম্ভব হবে। জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে বেশি ফোর্স মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্ষমতা দেওয়াই থাকে। প্রয়োজন হলে তিনি অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করতে পারবেন।
মো. আলমগীর বলেন, প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ আসে, প্রমাণের প্রয়োজন নেই। কোনো প্রার্থী যদি বলে উনি অমুকের আত্মীয় বা ওই পক্ষের হয়ে কাজ করেছেন, তাহলে প্রমাণ ছাড়াই তার নিয়োগ বাতিল করা হবে। শুধু শুধু তো কারও প্রতি অভিযোগ আসবে না। এক্ষেত্রে আমাদের প্যানেল থেকে অন্য একজনকে নিয়োগ দেব। যোগ্য লোক না পেলে প্রয়োজনে পাশের জেলা বা উপজেলা থেকে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হবে। আমাদের প্রিসাইডিং অফিসারের অভাব নেই। তবে পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে, রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলে প্রমাণ দিতে হবে। যেহেতু রিটার্নিং অফিসার আমাদের বেশি নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাঠের প্রস্তুতি সবাই ভালো বলেছে। সংসদ নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদেরকেই ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কোনো চাপ পাচ্ছেন না। তাদের বলা হয়েছে, প্রেশার দিলে সে যেই হোক না কেন, তা আমলে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
অপর এক প্রশ্নে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, কোনো প্রার্থী নির্বাচনে থাকবে কী, থাকবে না তা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের বিষয়। নির্বাচন কমিশন যেটা দেখবে তা হলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হওয়ার যোগ্য কি না।
ইসির বার্তা মন্ত্রী ও এমপিরা না মানলে কী হবেÑ এমন প্রশ্নে মো. আলমগীর বলেন, তারা বিধি না মানলে দেখতে হবে, কোন বিধি ভঙ্গ করলেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনও এমন কোনো অভিযোগ আসেনি যে, মন্ত্রী মহোদয় মঞ্চে গেছেন, পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন।
রেলমন্ত্রীর ছেলেকে সতর্ক
আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের ছেলে আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিমকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছেন রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার। চেয়ারম্যান প্রার্থী ফরিদ হাসানের লিখিত অভিযোগে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মন্ত্রীপুত্রকে সতর্ক করা হয়। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, আমি রাজবাড়ীতে অবস্থানকালে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। তাকে মোবাইল ফোনে যেকোনো ধরনের হুমকি-ধমকি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে এবং তাকে সতর্ক করা হয়েছে। আগামী ৮ তারিখের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যদি তার বিরুদ্ধে ভোটারদের হুমকি দেওয়া, পোলিং এজেন্ট দিতে না দেওয়া বা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমনকি আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিম যার পক্ষ নিয়েছেন তার প্রার্থিতাও বাতিল করা হতে পারে।
মতলবে ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি
গতকাল চাঁদপুরের মতলব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলির নির্দেশ দিয়েছে ইসি। গতকাল ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ শাহজালাল নির্দেশনাটি মহাপুলিশ পরিদর্শককে পাঠিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদ হোসেন এবং সাব-ইন্সপেক্টর মো. আবু হানিফকে প্রত্যাহার করে তাদের স্থানে উপযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়নের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মাঠে থাকবে পাঁচ হাজার পর্যবেক্ষক
উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের নজরদারিতে থাকবেন প্রায় পাঁচ হাজার পর্যবেক্ষক। কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ২৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৬৭ জন এবং স্থানীয়ভাবে ৪ হাজার ৬৯২ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি।