আব্দুল মালেক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৪ ১৩:২৪ পিএম
আপডেট : ০৮ মে ২০২৪ ১৩:৩১ পিএম
মাজেদা খাতুন ও হাদিছা খাতুন। প্রবা ফটো
মেয়ের স্কুলেই মা ৫০০ টাকার বিনিময়ে আয়া পদে কাজ করে দীর্ঘ ১৩ বছর পার করেছেন। আশায় বুক বেঁধে ছিলেন মেয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে এ স্কুলেই চাকরি পাবে। যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে চাকরি করার সুযোগ এলে মায়ের পদে আবেদনের পর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ভালো ফল করেও অর্থের কাছে হার মানতে হয়েছে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান পাওয়া প্রার্থীকেই প্রায় চার মাস পর নিয়োগ দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
সামান্য বেতনে চাকরি করা মর্মাহত ওই নারী বিচারের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। ঘটনাটি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত উচ্চবিদ্যালয়ের।
ঈশ্বরগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে ওই বিদ্যালয়টির অবস্থান। দীর্ঘদিন বিদ্যালয়টিতে আয়া ছাড়াও নিরাপত্তাকর্মী, অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন পদ শূন্য ছিল। পাশের বৃ-পাঁচাশি গ্রামের হতদরিদ্র চান মিয়ার স্ত্রী মাজেদা খাতুন ২০১১ সালে ৫০০ টাকা বেতনে ওই বিদ্যালয়ে আয়া পদে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে প্রাইমারি শেষ করে মায়ের বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় হাদিছা খাতুন। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৭১ পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। মাজেদা খাতুন জানান, আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় মেয়েকে আর পড়ালেখা না করিয়ে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে দেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানেই চাকরি করছে। এর মধ্যে গত বছরের ৫ জুলাই একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় বড়হিত উচ্চবিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদ ছাড়াও আয়া পদে লোক নেওয়া হবে। এমন বিজ্ঞপ্তি দেখে মেয়েকে আয়া পদে আবেদন করান। ২৮ ডিসেম্বর নান্দাইল চণ্ডীপাশা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তার মেয়ের পদে আরও পাঁচজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষা শেষে ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করে। বেশ কয়েকবার তাগাদা করেও ফলাফল জানা যায়নি। গত প্রায় চার মাসেও ফলাফল জানানো হয়নি। গত ৩০ এপ্রিল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা নাজমা বেগম নামে একজনকে ডেকে এনে নিয়োগপত্র তুলে দেন। এ ঘটনায় তিনি হতাশ হয়ে ওই দিনই ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ফলাফল প্রকাশ ও সঠিক তদন্ত করার জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মাজেদা জানান, নিয়োগ পাওয়া নাজমা নিয়োগ পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছেন। প্রায় ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে তার চাকরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অনেক আশায় আছলাম এত কষ্ট করে কাম কইর্যা অইলেও মেয়েটাকে এখানে ঢুকাব। কিন্তু যোগ্যতা ছাড়াও ভালো করলেও চাকরিটা হয়নি। যে টাকা দিছে তার চাকরি হইছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান উদ্দিন জানান, আগেই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া পুরো বিষয়টা সম্পর্কে সভাপতি অবগত আছেন।
বড়হিত উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহ জালাল টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘পরামর্শ ও মিটিং করতে করতে দেরি হইছে। অন্য কিছু না।’
নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজির প্রতিনিধি ছিলেন নান্দাইল চণ্ডীপাশা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ওই সময় পরীক্ষা শেষে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করে ফলাফল ঘোষণার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলা হয়। তিনি কেন ঘোষণা করেননি এটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদের উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা করতে হয়। কেন চার মাস পর নিয়োগপত্র দেওয়া হলো তা বোধগম্য নয়।’
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম প্রিন্স জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাটি তদন্ত করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে।