প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৪৬ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়। তবে ষাটোর্ধ্ব ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি তিন গুণ বেশি। ইনফ্লুয়েঞ্জায় সবচেয়ে বেশি ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়। বুধবার (১৭ এপ্রিল) সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
২০০৭ থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ১৯টি হাসপাতালে পরিচালিত ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স’ থেকে পাওয়া ফল এ সেমিনারে উপস্থাপন করা হয়। সেমিনারে বলা হয়, ১৯টি হাসপাতালের ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৮০ জন রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ১৩ হাজার ২৩৪ জনের ইনফ্লুয়েঞ্জা পজেটিভ পাওয়া গেছে। আক্রান্তের হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। আইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। সহায়তায় ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন। দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৌসুমি বৈচিত্র্য জানার পাশাপাশি এ ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন শনাক্ত করা গবেষণার মূল লক্ষ্য।
সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের মৌসুম। এ সময় প্রতি চারজন রোগীর একজনে ইনফ্লুয়েঞ্জা পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় জুন ও জুলাই মাসে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে জুনে মোট আক্রান্তের ২৯ দশমিক ১০ শতাংশ এবং জুলাইয়ে ৩০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর পরের মাসগুলোয় ২৫ জনের একজনে এ রোগ শনাক্ত হয়। সংক্রমণের ধরন বিবেচনায় নিয়ে সুরক্ষার জন্য প্রতিবছর মার্চ মাসের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা।
সেমিনারে দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন ও আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী ডা. ফাহমিদা চৌধুরী। ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, বাংলাদেশে সারাবছরই ফ্লু শনাক্ত হয়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর তা বাড়ে। এ কারণে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এজন্য মৌসুম শুরুর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিয়ে সুরক্ষিত রাখতে হবে। পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারেও সতর্ক থাকতে হবে। ফ্লু সংক্রমণের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে ডা. ফাহমিদা চৌধুরী বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ ৯৯০ হাজার থেকে ৬ লাখ ৫০৯ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘২০০৮ থেকে ২০১০ সালে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ড. কে জামান গবেষণা করে দেখেছিলেন, গর্ভাবস্থায় মাকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দিলে মায়ের পাশাপাশি নবজাতকের রোগের ঝুঁকিও ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। ওই গবেষণার ফল আমলে নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভাবস্থায় মাকে ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেয়।’
সেমিনারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে বাঁচতে টিকা নেওয়া যায়। তবে এই টিকার দাম এবং সবাইকে এই টিকা দেওয়া যাবে কি না তা একটা প্রশ্ন। এজন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এতে আক্রান্ত না হতে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। কাশি শিষ্টাচার এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে এটা সম্ভব।
সেমিনারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনফেকশাস হ্যাজার্ড ম্যানেজমেন্ট অফিসার ডা. এএসএম আলমগীর, ইউএস-সিডিসির অ্যাপিডেমিওলজিস্ট গ্রেচেন কাওম্যান, গ্লোবাল হেলথ ডেভেলপমেন্ট (জিএইচডি) ও ইস্টার্ন মেডিটার্নিয়ান পাবলিক হেলথ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান ব্ক্তৃতা করেন।