× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে ডেঙ্গু, বড় দুশ্চিন্তা

রাজবংশী রায়

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ০৯:১৭ এএম

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪ ১১:৩৩ এএম

জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে ডেঙ্গু, বড় দুশ্চিন্তা

দেশে দীর্ঘদিন ধরে ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ থাকলেও গত বছর এ রোগটি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বছরজুড়েই ছিল সংক্রমণ। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। এর বিপরীতে ২০০০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮৬৮ জনের। অর্থাৎ ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে যত মানুষ মারা গেছে, গত এক বছরে মারা গেছে তার প্রায় দ্বিগুণ। বর্ষা এখনও না এলেও চলতি বছরও চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ সাত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে চলতি বছরও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে করে দুশ্চিন্তা বাড়ছে সংশ্লিষ্টদের।

গত মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নির্মূলে করণীয় নিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সমন্বিত কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার সাত বছর মেয়াদি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। তবে ওই কৌশলপত্র কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্য বিভাগ ও সিটি করপোরেশনের সমন্বিত পরিকল্পনার অভাবে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে বলে মনে করেন অনেকে।

তাদের অভিমত, একসময় বাংলাদেশে ডেঙ্গুকে মৌসুমি রোগ বলে মনে করা হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বছরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ লক্ষ করা যাচ্ছে। এর পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, মশক নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা, স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থাসহ বেশকিছু কারণ রয়েছে। একই সঙ্গে ভাইরাসটির ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। অথচ সংশ্লিষ্টরা সেদিকে নজর না দেওয়ার কারণে ভাইরাসটি মারাত্মক হয়ে উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গু বৃদ্ধির যে ১৩টি কারণের কথা উল্লেখ করেছে তাদের প্রতিবেদনে, সেখানেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি রয়েছে। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন হয়েছে। এটি এখন আর মৌসুমি রোগের পর্যায়ে নেই। সুতরাং রোগটির নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসার ধরনেও পরিবর্তন আনতে হবে। এ লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে প্রতিরোধে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মানুষকে সচেতন করতে হবে। ডেঙ্গু কীভাবে হয়, মানুষকে সেটা বোঝাতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক রোগী দেরিতে হাসপাতালে যায়। তখন কিছু করা যায় না। সুতরাং ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। তাহলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে। 

অপরদিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীতে এডিস মশা বা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি। এটা হচ্ছে ডেঙ্গু প্রতিরোধের ৯০ শতাংশ হাতিয়ার আর বাকি ১০ শতাংশ টেকনিক্যাল বা ওষুধের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

বছরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপের নেপথ্যে

একটা সময় ধারণা করা হতো, বর্ষাকাল মানেই ডেঙ্গুর মৌসুম। দেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বরÑ এই চার মাসকে ডেঙ্গুর ভর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। কারণ, এই সময়ে বর্ষাকাল শুরু। তখন বৃষ্টির পানি বিভিন্ন স্থানে জমে থাকে। আর এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই এই সময়টাকে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজননকাল ধরে নিয়ে এ সময়টাকে ডেঙ্গুর ‘পিক সিজন’ বলা হয়। কিন্তু গত বছর সেপ্টেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চলে। অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরেও প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ডেঙ্গুতে মারা গেছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য-উপাত্ত বলছে, দেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। ওই বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ৯৩ জনের। এরপর ডেঙ্গুর সবচেয়ে বড় প্রকোপ দেখা দেয় ২০১৯ সালে। ওই বছর মারা যায় ১৭৯ জন। করোনা মহামারি শুরুর বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে মারা যায় ৭ জন এবং পরের বছর ২০২১ সালে ১০৫ জন। ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয় ডেঙ্গু রোগে। কিন্তু ওই বছর প্রথম ছয় মাসে আটজনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে ২০২৩ সালে বছরজুড়েই ছিল ডেঙ্গুর ভয়াবহ সংক্রমণ। এক বছরে আক্রান্ত হয় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ৬১৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে মারা গেছে ২১ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে আক্রান্ত ১ হাজার ৫৫ জন এবং মৃত্যু ১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৩৯ এবং মৃত্যু ৩ এবং ২২ মার্চ পর্যন্ত আক্রান্ত ২২২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। 

গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে মোট মারা যায় ৩৪ জন। গত বছর ডিসেম্বরের ২৫ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৮৩ জন, যা গত ৫ বছরে ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর প্রায় আড়াইগুণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের ধারণা পাল্টানোর সময় এসেছে। কারণ এখন শুধু বর্ষাকাল নয়, শীত ও গ্রীষ্মকালেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকছে। আগে শীতকালে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়লেও ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার উপদ্রব দেখা যেত না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে অর্থাৎ ডিসেম্বরেও এডিস মশার উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে, যার অন্যতম কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন। 

সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, শীতকালে অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। তাপমাত্রা উষ্ণ থাকায় এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ঘটে। আর তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেলে এডিস মশার ডিম থেকে লার্ভা বের হয় না। বাংলাদেশে গত বছর শীতকালে তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। পঞ্চগড়, সীতাকুণ্ড দিনাজপুরসহ কিছু জেলায় হয়তো তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির নিচে নেমেছে। কিন্তু সারা দেশের তাপমাত্রা ছিল অনেকটা উষ্ণ। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গত বছর ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মূল কারণ আবহাওয়া এডিস মশার বংশবিস্তারের পক্ষে সহায়ক ছিল। উচ্চ তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের কারণে এডিস মশা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। যেসব এলাকায় শীত বেশি পড়েছে, সেখানে ডেঙ্গুর বিস্তার কম হয়েছে। সুতরাং আবহাওয়ার যে বার্তা পাওয়া যাচ্ছে তাতে চলতি বছর গরম আরও বেশি পড়বে। এটি হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। 

কতটা কাজে আসবে কৌশলপত্র

দীর্ঘ দুই দশক পর প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ২০২৪ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সাত বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশলপত্রে বলা হয়, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সাত বছরের মধ্যে প্রতি লাখে ডেঙ্গু সংক্রমণ ১০০-তে এবং মৃত্যুহার ০.১ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে।

এই লক্ষ্য অর্জনে মোট ৬টি কৌশল বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, সমন্বিতভাবে কীটনাশকের সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা, সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্ত ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, বিভিন্ন দপ্তর বা সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাজের সমন্বয় করা, দেশজুড়ে বাসাবাড়ি পর্যন্ত ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, গবেষণার মাধ্যমে টিকা উদ্ভাবন থেকে শুরু করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গৃহীত সকল কর্মসূচির দুর্বলতা নির্ণয় করে নীতি ও কৌশলগত পরিবর্তন আনা।

চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে করা এই কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করা কঠিন কাজ। এটার অ্যাকশন প্ল্যান পরিপূর্ণ না। কে কোন কাজ করবে, বাজেট কোথা থেকে আসবে এগুলোর উল্লেখ নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে স্থানীয় সরকার বিভাগের সমন্বয় দরকার। স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ। অর্থাৎ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও মশা নিয়ন্ত্রণ করা। মশা নিয়ন্ত্রণ না হলে হাসপাতালে রোগী কমবে না। তখন এক বিভাগ আরেক বিভাগকে দায়ী করে বক্তব্য দেবে। অতীতেও এমন হয়েছিল। সুতরাং এই কৌশলপত্রটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি বলে মনে করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কোনো ভূখণ্ডে একবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ দেখা দিলে সেটিকে পুরোপুরিভাবে নির্মূল করার উপায় নেই। তবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন। কিন্তু গ্রামে এসবের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে চলতি বছর গ্রামে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়বে বলে ধারণা করা যায়। সেখানে এডিস মশার চাষবাস হচ্ছে। এছাড়া গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে মশা নিধনের অভিজ্ঞতা, সম্পদ, জনবলের কোনোটাই নেই। ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার বৃদ্ধির পেছনের প্রধান কারণ অতিমাত্রায় কেন্দ্রীভূত স্বাস্থ্যব্যবস্থা। গত বছর ঢাকাসহ দেশের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের বড় হাসপাতালগুলোতে এমন অবস্থা হয়েছিল যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিল। মেঝেতেও জায়গা দিতে পারছিল না। সব রোগী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অথবা ঢাকায় চলে আসে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যকর করতে না পারলে এই সংকট বাড়বে। 

শীর্ষ সাত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০২৩ সালে সাতটি দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ তীব্রতর হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ডেঙ্গুর প্রকোপ তীব্রতর হওয়া দেশগুলোর তালিকায় আছে ব্রাজিল, বুরকিনা ফাসো, ফিজি, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম। বলা হয়েছে, কোনো কোনো দেশে ডেঙ্গু জরুরি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ১৩টি কারণে সারা বিশ্বে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। 

সম্প্রতি ‘ডেঙ্গু : বৈশ্বিক পরিস্থিতি’ শিরোনামে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুই দশকে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে দেখা গেছে। ২০০০ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ৫ লাখ মানুষ, ২০১৯ সালে বেড়ে হয় ৫২ লাখ। অর্থাৎ আক্রান্তের সংখ্যা ১০ গুণ বেড়েছিল।

১৩টি কারণে বিশ্বে ডেঙ্গু বাড়ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এগুলো হলোÑ এডিস মশা পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও মশার বসবাসের উপযোগী অন্যান্য কর্মকাণ্ড বাড়ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ডেঙ্গুর উপযোগী আবহাওয়া, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে থাকা ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা, একই সঙ্গে ডেঙ্গুর একাধিক ধরনের বিস্তার, সুনির্দিষ্ট লক্ষণ না থাকায় ডেঙ্গু শনাক্ত করার সমস্যা, ল্যাবরেটরি ও পরীক্ষাব্যবস্থার অপ্রতুলতা, কোভিড-১৯সহ একই সময়ে দীর্ঘস্থায়ীভাবে চলা প্রাদুর্ভাব, ডেঙ্গুর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার অনুপস্থিতি, ডেঙ্গু সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা ও আচরণ বিষয়ে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি, কমিউনিটিকেন্দ্রিক স্বাস্থ্য উদ্যোগ ও মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ডের ঘাটতি, মশার ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ দক্ষতার ঘাটতি, স্থায়ীভাবে অর্থায়নের ঘাটতিসহ অংশীজনদের কাজে সমন্বয়ের অভাব এবং মানুষ ও পণ্যের ব্যাপক চলাচল।

বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে উল্লেখযোগ্যভাবে ডেঙ্গু বেড়েছে। বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল ৬২ হাজার ৩৮২ জন। আর ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত ছিল ৩ লাখ ৮ হাজার ১৬৭ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে সংক্রমণ বেড়েছে যথাক্রমে প্রায় ৪৯৪ ও ২৯৩ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে মৃত্যু ও মৃত্যুহার দুই-ই বেড়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৫৯৮ জনের মৃত্যু হয়। তখন মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সাত বছর মেয়াদি যে কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে তা ধরে কাজ শুরু হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু কমিয়ে আনা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সাফল্য এসেছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণেও সাফল্য আসবে বলে মনে করেন তিনি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা