সেমিনারে বক্তারা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪ ২১:৫৯ পিএম
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমের সমস্যার কারণে দেশের একটি বিরাট অংশের মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। দীর্ঘদিনের নিদ্রাহীনতায় একদিকে যেমন বাড়ে রক্তচাপ, নিয়ন্ত্রণহীন হতে থাকে ডায়াবেটিস, অন্যদিকে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগও গোপনে বাসা বাঁধে শরীরে। এমনকি ঘুমজিনত ‘সিপ্ল অ্যাপনিয়া’ রোগে ভুগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
সোমবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোডে অফিসার্স ক্লাবের হাউজি রুমে অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া বাংলাদেশ (অ্যাসাব) আয়োজিত ‘ঘুম ও নাক ডাকা’ বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা এসব বিষয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করেন।
সেমিনারে আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাসাব মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু, বিশেষ অতিথি ছিলেন অফিসার্স ক্লাব ঢাকার কোষাধ্যক্ষ মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী ও নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ ফিরোজ আলমগীর ও আলমগীর হোসেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ডা. এস এম খোরশেদ আলম মজুমদার।
মূল প্রবন্ধে সংগঠনটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা নির্ভর করে এর প্রকার ও তীব্রতার ওপর। এটি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ও সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া আক্রমণের ওপর নির্ভর করে। সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া ব্রেন বা মস্তিষ্কের কারণে হয়। এর মূল কারণ সাধারণত হার্ট ফেইলিওর, লিভার ফেইলিওর এবং এ ধরনের অ্যাপনিয়ার চিকিৎসার মানে ওই সব রোগের চিকিৎসা করা।
ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, সুস্থ থাকতে হলে সবার আগে অভ্যাসগত জীবনযাত্রার কিছু দিক পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে ঘুমানোর স্টাইল পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, চিৎ হয়ে শুয়ে থাকলে স্লিপ অ্যাপনিয়া বাড়ে। সেজন্য একপাশে কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস করুন এবং যদি সাইনাস বা ফুসফুসের ফ্লেমের কারণে নাক বন্ধ থাকে তাহলে যেদিক দিয়ে বন্ধ থাকে তার বিপরীত দিকে কাত হয়ে শোয়া ভালো। বালিশ দিয়ে ঘুমালেও খুব বেশি নরম বা ফোম জাতীয় তুলার বালিশ দিয়ে না শোয়া ভালো এবং বুকে জড়িয়ে ধরার বালিশ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে-শোয়ার বালিশ চার ইঞ্চি উঁচু থাকা ভালো।
তিনি আরও বলেন, ওজন কমানোর চেষ্টা করে বা মেদ ভুঁড়ি বেশি থাকলে তা নিয়ন্ত্রিত করার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে শরীরের ১০ শতাংশ ওজন কমাতে পারলে ২৫ শতাংশ স্লিপ অ্যাপনিয়া এমনিতেই কমে যায়। এছাড়াও অ্যালকোহল, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি পান থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ঘুমের ওষুধ সেবন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
টনসিলের প্রদাহ থাকলে তা যাতে রাতের বেলায় একটু স্থিতি হয়ে থাকে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম, যেমন নিয়মিত ব্যায়ামের মধ্যে হাঁটা, সাঁতারকাটা এবং সাইকেল চালানোই সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম বলে জানান অধ্যাপক মনিলাল।
আলোচকরা বলেন, ভালো থাকার জন্য ভালো ঘুম হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তবে অনেকেই আছেন যাদের মোটেও ভালো ঘুম হয় না। আমেরিকার জাতীয় নিদ্রা ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সেখানে বড়দের মধ্যে শতকরা ৬০ জনই সপ্তাহে দুইরাত বা তার বেশি সময় ঘুমজনিত সমস্যায় ভোগেন। শতকরা ৪০ জনের বেশি লোক মাসে অন্তত দুইদিন অতি দিবা নিদ্রালুতায় আক্রান্ত হয়ে দৈনন্দিন কাজে বাধাগ্রস্ত হন। সপ্তাহে দু'দিন এ ধরনের সমস্যায় পড়েন, এমন আছেন শতকরা ২০ জন। আমেরিকায় অন্তত ৪ লাখ লোক নিয়মিত ঘুমের সমস্যায় ভোগে। বয়স্কদের ৫ শতাংশ স্লিপ অ্যাপনিয়া আক্রান্ত। শিশুর মধ্যে এই হার ২ থেকে ৩ শতাংশ। তবে যেসব শিশু নাক ডাকে, তাদের মধ্যে ভেতর স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগী আছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ।
সেমিনার শেষে মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্লিপ অ্যাপনিয়া ও ঘুমের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা নানা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে চান।