গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৫৩ পিএম
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:২২ পিএম
মঙ্গলবার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ক্যান্সার প্রতিরোধ বিভাগের উদ্বোধন করা হয়। প্রবা ফটো
ক্রমবর্ধমান বিপুল সংখ্যক ক্যান্সার রোগীর পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দেশের প্রথম ক্যান্সার প্রতিরোধ বিভাগের (প্রিভেন্টিভ অনকোলজি) উদ্বোধন করেছে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যান্সার হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় এই বিভাগের উদ্বোধন করা হয়। তিন ধাপে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ক্যান্সার হাসপাতালের প্রকল্প সমন্বয়কারী ও প্রিভেন্টিভ অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন জানান, প্রথম ধাপে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের ৭ম তলায় অবস্থিত ব্র্যাকিথেরাপি ও কেমোথেরাপির ডে-কেয়ার সেন্টার এবং ৬ষ্ঠ তলায় অবস্থিত ক্যান্সার ওপিডি ও ক্যান্সার প্রতিরোধ বিভাগ নিয়ে ক্যান্সার হাসপাতালের ইউনিট-১ গড়ে উঠবে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে। সচেতনতা কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্যান্সার স্ক্রিনিং-এর বিস্তৃত সেবা প্রদান করবে এই বিভাগ।
প্রথম পর্যায়ে স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যান্সার স্ক্রিনিং চালু হচ্ছে। ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট একজামিনেশন, ভায়া ও মুখগহ্বর পরীক্ষার সাথে অন্যান্য অসাংক্রমক রোগের স্ক্রিনিং-এর জন্য ওজন, উচ্চতা, রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার পরিমাপ করে দেয়া হবে বিনামূল্যে। শিগগিরই জরায়ুমুখের ক্যান্সার নির্ণয়ে কলপোস্কোপি এবং ক্যান্সারপূর্ব ও ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য ক্রায়োথেরাপি ও লিপ মেশিন যুক্ত হবে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালের মধ্যে এই ইউনিট ও নগর হাসপাতালের সমন্বয়ে কেবল বিকিরণ চিকিৎসার টেলিথেরাপি (লিনিয়ার এক্সিলারেটর) ছাড়া ক্যান্সারের সব সেবা চালু হবে। ইউনিট-২ চালু হবে মিরপুর পল্লবীতে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনের ৪/৫ টি ফ্লোর নিয়ে। ২০২৪ সালের মধ্যে এখানে ওপিডি, ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও দূর-দূরান্তের ক্যান্সার রোগীদের স্বল্প খরচে থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ গণস্বাস্থ্য ক্যান্সার নিবাস চালু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ইনডোর, ডে-কেয়ার ও ওটি চালু করা হবে। একটি লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন বসানোর সম্ভব্যতা যাচাই করা হবে। তৃতীয় ও শেষ ধাপে ২০২৭ সালের মধ্যে সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধিগ্রহণকৃত স্থানে ৪/৫টি রেডিওথেরাপি মেশিন, ওটি কমপ্লেক্স, কেমোথেরাপির জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার সুবিধাসহ পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। দূর-দূরান্তের রোগীদের স্বল্প খরচে থাকা-খাওয়ার জন্য ডরমিটরি থাকবে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সহযোগিতায় অচিরেই ক্যান্সার সার্জারির অত্যন্ত সাশ্রয়ী প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে দেশের প্রথম সারির সার্জিকেল অনকোলজিস্ট ডা. মো. হাসানুজ্জামান অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় উন্নয়ন কাজ চলছে বলেও জানানো হয়। এর মধ্যে রোটারিয়ান আশেক উল ইসলামের পরিবার ক্যান্সার প্রতিরোধ বিভাগের জন্য প্রায় দশ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করে দিয়েছেন। দেশের প্রথম গাইনি অনকোলজিস্ট অকালপ্রয়াত ডা. খুরশিদ জাহান মাওলার পরিবার জরায়ুমুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিং কক্ষ যন্ত্রপাতিসহ সজ্জিত করে দিচ্ছেন। অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবার সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র চ্যারিটেবল ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা। বক্তব্য রাখেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাই, বারডেমের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা.শুভাগত চৌধুরী, নারীস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ড. হালিদা হানুম আখতার, নারী অধিকার নেত্রী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি শিরীন হক, বিএসএমএমইউয়ের গাইনি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক লতিফা শামসুদ্দিন, বিএসএমএমইউয়ের ইউরো-অনকোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ সালাম, বিএসএমএমইউয়ের প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেজাম উদ্দিন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আফতাব উদ্দিন, ডা. আবু জামিল ফয়সাল, ডা. মো. শহিদুল্লাহ, নিপসমের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আব্দুল হাকিম মজুমদার, হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন, নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন কর্মী শওকত মাহমুদ, চলচ্চিত্র পরিচালক মসিহ্উদ্দিন শাকের, ডা. লেলিন চৌধুরী প্রমুখ। হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক বদরুল হক, ডা. ফারজানা আক্তার, ডা. নিজামুল হক ও অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার।