প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩৪ পিএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:৫৫ পিএম
সফল বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর সংবাদ সম্মেলন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। প্রবা ফটো
দেশে অঙ্গ সংযোজন আইন সহজ করা গেলে অঙ্গ দানে চিকিৎসা পদ্ধতি আরও অগ্রসর হবে বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘বিদেশমুখী চিকিৎসা কমাতে আমাদের এখানেই উন্নত সব চিকিৎসা করা হচ্ছে। কিডনি, লিভার, কর্নিয়া ও সবশেষ বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনে সফল হয়েছি আমরা। দেশে অঙ্গ সংযোজন আইন সহজ করা গেলে আমাদের এখানে অঙ্গ দানে চিকিৎসা পদ্ধতি আরও অগ্রসর হবে।’
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ ব্লকে বিএমটি ইউনিটে প্রথম সফল বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে রক্তের জটিল ক্যানসারে (মাল্টিপল মাইলোমা) আক্রান্ত ৬৩ বছর বয়সি এনামুল হকের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নবগঠিত ‘সেন্টার ফর ব্লাড, বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট অ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপিতে প্রথমবারের মতো সফলভাবে তার বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট (অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন) সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে বিচ্ছিন্নভাবে হেপাটোলজি বিভাগে এ ট্রান্সপ্ল্যান্ট হলেও স্থায়ী সেন্টারে এটিই প্রথম। বোনম্যারো প্রতিস্থাপনের ফলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন।
সম্মেলনে হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালা্হউদ্দিন শাহ্ বলেন, ‘হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল বা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ৪৭ রোগের আধুনিকতম চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীতে লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মায়েসনাসহ রক্তের ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। লিউকেমিয়াসহ রক্তের ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রেও স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল না বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন।’
ওই রোগীর তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারের বাসিন্দা এনামুল হক গত চার মাস আগে নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিএসএমএমইউর হেমাটোলোজি বিভাগ নিশ্চিত করেন এনামুল হকের শরীর মাল্টিপোল মায়েলোমা বা জটিল রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত। এর পর হেমাটোলোজি বিভাগে তার চিকিৎসা শুরু করা হয়। একপর্যায়ে চিকিৎসকরা তার বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের সিদ্ধান্ত নেন।’
তিনি বলেন, ‘গত ৭ ডিসেম্বর তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। গত ১৭ জানুয়ারি রোগীর শরীর থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করা হয়। ওইদিনই রোগীর কন্ডিশনিং থেরাপি দেওয়া হয়। গত ১৮ জানুয়ারি রোগীর শরীরে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করানো হয়। ৩০ জানুয়ারি রোগীর নিউটোফিল রিকভারি হয়। ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ১৮ দিন পরে রোগীর শরীরের কোনো ধরনের জটিলতা দেখা যায়নি যা স্বাভাবিক ও ইতিবাচক।’
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশের বাইরে বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে যেখানে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ হয় সেখানে ৩ লাখ টাকায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে। আমাদের দেশে এ খরচ সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার মতো।’
তিনি বলেন, ‘থেমে গেলে হবে না, আগের মতো আমরা চাই এই চিকিৎসার ধারাবাহিকতা থাকুক। আর সেটাই স্বল্প খরচে মানুষকে সেবাটা দিতে চাচ্ছি।’