× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হার্টের রিং বাণিজ্যের নতুন সিন্ডিকেট

রাজবংশী রায়

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:১১ এএম

আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫৪ এএম

হার্টের রিং বাণিজ্যের নতুন সিন্ডিকেট

হার্টের রিংয়ের (করোনারি স্টেন্ট) দাম কমানোর সরকারি ঘোষণায় হৃদরোগ চিকিৎসাপ্রার্থীরা এ খাতের দীর্ঘদিনের নৈরাজ্য কমবে বলে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। মনে করেছিলেন, এই রিং নিয়ে বছরের পর বছর যে সিন্ডিকেটের বাণিজ্য চলছে তা-ও শেষ হতে যাচ্ছে। কিন্তু দাম কমানোর পর দেখা গেল, এ খাতে তৈরি হয়েছে নতুন সিন্ডিকেট। আগে সবাই মিলেমিশে বাণিজ্য করলেও এখন সেই সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। তিনটি কোম্পানির রিংয়ের দাম আগের মতো রেখে অন্যগুলোর কমানো হয়েছে। ওই তিন কোম্পানির রিং ছাড়া বাজারে এখন অন্য কোনো কোম্পানির রিংয়ের সরবরাহ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ওই কোম্পানিগুলোর রিংয়ের মূল্য অন্যগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে না কমানোয় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। 

বিশেষ গ্রুপকে সুবিধা দিতে মূল্য কমানোর নামে একটি চক্র নতুন করে রিং বাণিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বঞ্চিত সরবরাহকারীরা রিংয়ের মূল্য নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারি পাঁচ হাসপাতালে হার্টের রিং সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। একই সঙ্গে আদালতের দারস্থও হয়েছেন। হার্টের রিংয়ের দাম পুনর্নির্ধারণ কেন বৈষম্যমূলক, অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে ইতোমধ্যে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে নতুন দাম নির্ধারণের আদেশ বা সিদ্ধান্ত কেন বাতিল করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। গত ১৮ ডিসেম্বর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সচিব ও মহাপরিচালক রুলের জবাব দিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। কিন্তু আদালত থেকে এখনও এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও মুখপাত্র নুরুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আদালতের বিষয়টি আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবিলা করব। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো সমস্যা হবে না।

আন্দোলনকারীদের একজন কনসেপ্ট মেডিকেল নামে রিং সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ফজলে রাব্বী শুভ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, রিংয়ের দামের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বাণিজ্যের নতুন সিন্ডিকেট

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে রিংয়ের দাম নির্ধারণের পর তিনটি কোম্পানি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাবোট ভাসকুলার, বোস্টন সায়েন্টিফিক ও মেডট্রোনিক নামে তিনটির প্রত্যেকটির রিংয়ের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা করে। অ্যাবোট ভাসকুলার হার্টের রিংয়ের আমদানিকারক কার্ডিয়াক কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ। মেডট্রোনিক কোম্পানিক রিংয়ের আমদানিকারক মেডট্রোনিক বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহাবুবুর রহমান ডালিম। আর বোস্টন ভাসকুলার কোম্পানির আমদানিকারক ভাসটেক লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক।

মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করে বলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর হার্টের রিংয়ের বাজার তিনটি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। নতুন নির্ধারিত মূল্যে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ২৪টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে জাতীয় নীতিমালা বা মার্কআপ ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়নি। ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম মূল্য নির্ধারণের আদেশ এর বড় প্রমাণ। অপরদিকে মার্কআপ ফর্মুলা অনুসরণ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের ওই তিনটি রিংয়ের মূল্য ৭০ হাজার টাকার বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা করে। সিন্ডিকেট করে ওই তিন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক আমদানিকারক বলেন, ইউরোপের দেশগুলো থেকে আমদানি করা রিংয়ের দাম সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় রিংয়ের ক্রয়মূল্য বেড়ে গেছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নির্ধারিত দামে রিং বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে। এ কারণে তারা রিং বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। সরকার থেকে পুনঃসিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তারা বিক্রি বন্ধ রাখবেন।

তবে আনোয়ার হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘২০১৭ সালে দেশে প্রথমবারের মতো মেডিকেল ডিভাইস বিক্রির গাইডলাইন করা হয়। পরবর্তী সময়ে জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী সরকার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ মার্কআপ ফর্মুলা করে। প্রথম ধাপে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি কোম্পানিকে মার্কআপ ফর্মুলা অনুযায়ী রিংয়ের মূল্য নির্ধারণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু অন্য কোম্পানিগুলোকে কেন প্রস্তাবনা দেওয়া হয়নিÑ এটি ঔষধ প্রশাসনের বিষয় এবং তারা ভালো বলতে পারবে।’ 

মাহাবুবুর রহমান ডালিম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘দেড় থেকে দুই মাস আগে তিনটি কোম্পানির রিংয়ের দাম কমানো হয়েছিল। ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৯ থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়। তখন ২৭টি কোম্পানির রিংয়ের দাম কমানো হয়নি। অন্যান্য কোম্পানির সরবরাহকারীরা কেন আন্দোলন করছেন তা তারাই বলতে পারবেন।’

অভিযোগ পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাবোট ভাসকুলার কোম্পানির জিয়েন্স অ্যালাপাইন, বোস্টন সায়েন্টিফিক কোম্পানির সিনার্জি মেডট্রোনিক কোম্পানির রিসোলুট অনিক্স নামে তিনটি রিং ভারতে বিক্রি হয় ৫০ হাজার ৮৯২ টাকা করে। আর বাংলাদেশে এসব রিংয়ের প্রত্যেকটির মূল্য ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা। প্রায় ৩ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশে বিক্রি হয় এসব রিং। চিকিৎসক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মিলে রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে রিং বাণিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়েও অতিরিক্ত ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে এসব রিং। প্রতিদিন এ চক্রটি রোগীদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকার অনৈতিক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে নির্বিকার।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও মুখপাত্র নুরুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, হার্টের রিংয়ের দাম নিয়ে একধরনের অরাজকতা চলছিল। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়মূল্যের চেয়ে ৪৫ শতাংশের বেশি দামে রিং বিক্রি করায় রোগীর ওপর আর্থিক চাপ পড়ে। বিষয়টি অনুধাবন করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যের মূল্য নির্ধারণ কমিটি করা হয়। ওই কমিটিতে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কমিটির সদস্যরা রিং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের দফায় দফায় বৈঠক করে দাম নির্ধারণ করেছেন। এই দামের মধ্যে সরবরাহকারীর ট্যাক্স ও লাভ অন্তর্ভুক্ত করার পরও ১১ দশমিক ৫ শতাংশ খুচরা কমিশন রাখা হয়েছে। সরবরাহকারীদের সংগঠন ওই সভায় উপস্থিত থেকে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছে। এরপরও কোনো কথা থাকলে তা আলোচনা করে ঠিক করা যেত। কিন্তু হাসপাতালে রোগীদের রিং সরবরাহ বন্ধ রাখা গ্রহণযোগ্য নয়।

দাম কমার পরও ভারতের তুলনায় বেশি

গত ১২ ডিসেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ২৭টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৪ ধরনের হার্টের রিংয়ের দাম কমানোর আদেশ জারি করে। আদেশে জার্মানির জিলমুসের দাম ৬০ হাজার থেকে কমে হয়েছে ৫৩ হাজার টাকা। আয়ারল্যান্ডের মেডট্রোনিকের রেজোলুটে ওনিক্সের দাম ১ লাখ ৪৩ হাজার থেকে কমে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন সায়েন্টিফিকের প্রোমুস প্রিমিয়ারের দাম ৭৫ হাজার থেকে কমে ৭৩ হাজার টাকা, প্রোমুস এলিটের দাম ১ লাখ ১২ হাজার থেকে কমে ৯৩ হাজার টাকা এবং একই কোম্পানির সিনার্জি ব্র্যান্ডের রিংয়ের দাম ১ লাখ ৫২ হাজার থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

সুইজারল্যান্ডের বায়োম্যাট্রিকস নেওফ্লিক্সের দাম ৬২ হাজার ৫০০ থেকে কমে ৫৮ হাজার টাকা, একই কোম্পানির বায়োম্যাট্রিকস আলফা ৮৬ হাজার থেকে কমে ৬৫ হাজার টাকা। নেদারল্যান্ডসের অ্যালবুমিনাস ডিইএস প্লাসের দাম ৭২ হাজার থেকে কমে ৫৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। পোল্যান্ডের অ্যালেক্স প্লাসের দাম ৬২ হাজার ৫০০ থেকে কমে ৫৩ হাজার টাকা, আয়ারল্যান্ডের জিয়েন্স প্রাইম ৭২ হাজার ৫০০ থেকে কমে ৬৬ হাজার ৬০০ টাকা, একই কোম্পানির জিয়েন্স এক্সপেন্ডিশন ১ লাখ ৮ হাজার ৬২৮ থেকে কমে ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং জিয়েন্স অ্যালপাইন ১ লাখ ৪৯ হাজার থেকে কমে হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

নেদারল্যান্ডসের কমবো প্লাস ৫৩ হাজার টাকা, ভারতের বায়োমিমে ৪০ হাজার টাকা, এভারমাইন-৫০ ৪০ হাজার টাকা, মেটাফর ৩৫ হাজার টাকা, জার্মানির সিসি ফ্লাক্সে ১৫ হাজার টাকা, ইকা লিমুস ৫৩ হাজার টাকা, ইউকোন চয়েস পিসি ৫৩ হাজার টাকা, অর্থস পিকো ১৫ হাজার টাকা, আবিরস ৫৩ হাজার টাকা, করোফ্লিকস আইএসআইআর ৫৩ হাজার টাকা, ম্যাগমা ৩৭ হাজার টাকা এবং সুনা স্টেন্ট ১৪ হাজার টাকা, যুক্তরাষ্ট্রের কোবাল্ট ক্রোমিয়াম ৫৫ হাজার টাকা, ডিরেক্ট স্টেন্ট সিরো ৫৫ হাজার টাকা, ডিরেক্ট স্টেন্ট ২০ হাজার টাকা, দক্ষিণ কোরিয়ার জিনোস ডিইএস ৪৫ হাজার টাকা। ইতালির অ্যাভেন্টগার্ড ১৫ হাজার টাকা, সিআরই-৮ ৫৩ হাজার টাকা, পোল্যান্ডের অ্যালেক্স ৫৩ হাজার টাকা, ফ্রান্সের অ্যামাজোনিয়া ৫৩ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের বায়োফ্রিডম ৬৫ হাজার, প্রি-কিনেটিক ১৫ হাজার টাকা, আইট্রিক্স ৩৬ হাজার টাকা, ওসিরা মিশন ৬৫ হাজার টাকা, আয়ারল্যান্ডের ডিইএসওয়াইএনসি ৫৫ হাজার, সুপরাফ্ল্যাক্স ৫৩ হাজার, জাপানের আল্টিম্যাস্টার ৬০ হাজার, স্পেনের এনজিওলাইট ৫৩ হাজার, আইভাসকুলার এনজিওলাইট ৫৩ হাজার টাকা, আইএইটি ডেস্টিনি ৫৩ হাজার টাকা।

এসব রিংয়ের দাম ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকারভেদে রিংপ্রতি ৩ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত দাম কমেছে। ১৬ ডিসেম্বর থেকে এ দাম কার্যকর হয়েছে। এরপরও প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে রিংয়ের দাম ২ থেকে ৩ গুণ বেশি। আয়ারল্যান্ডের অ্যাবোট ভাসকুলার কোম্পানির জিয়েন্স প্রাইম ও বোস্টন সায়েন্টিফিকের প্রমুস এলিট রিং ভারতে প্রত্যেকটি বিক্রি হয় ২৯ হাজার ৯২৫ টাকা করে আর বাংলাদেশে বিক্রি হয় যথাক্রমে ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা ও ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা করে। 

দামে ফারাকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও মুখপাত্র নুরুল আলম বলেন, ভারতে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় সেখানে রোগীর সংখ্যাও অনেক বেশি। একই সঙ্গে বিদেশ থেকেও চিকিৎসা নিতে রোগীরা সে দেশে যায়। বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে রিং বেশি বিক্রি হয়। তাই প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো ভারতের জন্য কিছু সুবিধা দেয়। যা বাংলাদেশ পায় না।এ কারণে দাম বেশি।

বিপাকে রোগীরা

মূল্য বৈষম্যের প্রতিবাদে ১৬ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে হার্টের রিং সরবরাহ বন্ধ রেখেছে সরবরাহকারীরা। এ প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন। এ পাঁচটি হাসপাতালে মূলত হৃদরোগে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা নেয়। ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের যুক্তরাষ্ট্রের ওই তিন কোম্পানি ছাড়া অন্য কোনো রিং এই পাঁচ হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে রোগীরা বিপাকে পড়েছে। বাড়তি দাম দিয়ে রিং পরাতে হচ্ছে তাদের। 

বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কম দামের রিং রোগীদের সরবরাহ করা যাচ্ছে না। কারণ কোম্পানিগুলো রিং সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এতে করে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ সমস্যায় পড়েছে। অনেকে চিকিৎসা ছাড়াই ফিরে যাচ্ছে। দ্রুত এ অবস্থার নিরসন হওয়া প্রয়োজন। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, হার্টের রিং নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা এখনও তার নজরে আসেনি। বিষয়টি কেউ তার নজরে আনেনি। খোঁজখবর নিয়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন। তবে রিংয়ের মতো স্পর্শকাতর সামগ্রী নিয়ে বাণিজ্য হওয়া উচিত নয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা অবশ্যই বন্ধ করা হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা