প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:০০ পিএম
ডেঙ্গু আক্রন্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। ফাইল ফটো
ডেঙ্গুতে এ বছর মধ্যবয়সিরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে শিশুদের ডেঙ্গু নিয়ে ভয় না পাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অধিদপ্তর বলছে, আক্রান্তদের মধ্যে ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সি ব্যক্তি বেশি। পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে আক্রান্ত হচ্ছে ৮ শতাংশের মতো।
রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানিয়েছেন অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার।
তিনি বলেছেন, ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় আইভি ফ্লুইড স্যালাইন। এ নিয়ে সাময়িক সমস্যা হয়েছিল। জরুরিভাবে ভারত থেকে তিন লাখ প্যাকেট স্যালাইন আমদানি করেছি। এর মধ্যে ৪৪ হাজার প্যাকেট হাতে পেয়েছি। এগুলো সারা দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ডা. হাবিবুল আহসান বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে স্যালাইনের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। ভারত থেকে পর্যায়ক্রমে তা পৌঁছাতে শুরু করেছে। স্যালাইন নিয়ে আর সংকট হবে না।
দেশে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের চিত্র তুলে ধরে ডা. হাবিবুল আহসান বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে বেশি। ঢাকা সিটির বাইরে সারা দেশে আটটি বিভাগের মধ্যে রোগী বেশি চট্টগ্রাম ও বরিশালে। ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ীতে ডেঙ্গু রোগী বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও লক্ষ্মীপুর এবং বরিশাল বিভাগের বরিশাল ও পটুয়াখালীতে আক্রান্ত হওয়ার খবর বেশি পাওয়া যাচ্ছে। রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগে ডেঙ্গু শনাক্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
তিনি বলেন, এ বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭১৭ জন। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। সে বছর মোট শনাক্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। এবার বছর শেষ হওয়ার আগেই শনাক্তের সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় অনেক বেশি।
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, দেশের সব জেলা-উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে একই প্রটোকল ও গাইডলাইন অনুসরণ করে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের সব চিকিৎসককে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৯০০ ছাড়াল
রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ জন ঢাকার এবং ঢাকার বাইরের ৯ জন।এতে চলতি বছর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০৯। মৃতদের মধ্যে ৬০৩ জন ঢাকার এবং ৩০৬ জন ঢাকার বাইরের।
গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শুধু চলতি মাসের প্রথম ২৩ দিনে ডেঙ্গুতে ৩১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দুই মাস জুলাই ও আগস্টেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল। এর মধ্যে জুলাইয়ে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন, মারা যায় ২০৪ জন; আগস্টে শনাক্ত ৭১ হাজার ৯৭৬ জন, মারা যায় ৩৪২ জন। সেপ্টেম্বরের ২৩ দিনে ৬৩ হাজার ৯১৭ জন আক্রান্ত হয়েছে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৩ হাজার ৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকার ৮১২ জন এবং ঢাকার বাইরের ২ হাজার ১৯৬ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৫। তাদের মধ্যে ঢাকার ৭৮ হাজার ৯১৫ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ লাখ ৮ হাজার ৮১০ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১০ হাজার ৪৭০ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছে। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৭৯৪ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ৬ হাজার ৬৭৬ জন চিকিৎসা নিচ্ছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৭৪ হাজার ৫১৮ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ লাখ ১ হাজার ৮২৮ জন।