প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৪১ এএম
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:১৪ পিএম
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে রোগীরা। ফাইল ফটো
গত জুন-জুলাই থেকেই যাত্রাবাড়ী ও তার আশপাশের প্রায় সব এলাকায় প্রচুর মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। পরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই এলাকায় বিশেষ নজরদারির কথা জানানো হয়। অথচ চলতি সেপ্টেম্বরেও এখানকার ডেঙ্গু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এখনও ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী যাত্রাবাড়ীতেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাপ্তাহিক ডেঙ্গুবিষয়ক বার্তায় বলা হয়, ঢাকা শহরের ডেঙ্গু রোগীর প্রায় ৩০ শতাংশ যাত্রাবাড়ী ও সবুজবাগে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং সবুজবাগে ডেঙ্গু রোগী ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এ নিয়ে রবিবার রাতে কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যাত্রাবাড়ী এলাকার দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে। তারা দুজনই নিজেদের এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি করেন। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ অনু বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দুই বেলা মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। যে বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে, তার ১০০ গজের মধ্যে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা জানান, মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে কাজ করছেন। তা ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড (সবুজবাগ) কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাসের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রবিবার রাতে বক্তব্য নিতে তার ব্যক্তিগত মোবাইলে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ ছাড়া কদমতলীতে ৮ দশমিক ২৯, মোহাম্মদপুরে ৪ দশমিক ৩, খিলগাঁওয়ে ৩ দশমিক ৭২, কেরানীগঞ্জে ৩ দশমিক ৭১, ক্যান্টনমেন্টে ৩ দশমিক ৭৪, উত্তরায় ২ দশমিক ৯২, ধানমন্ডিতে ২ দশমিক ৬৭ এবং পল্লবীতে ২ দশমিক ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী রয়েছে।
এদিকে, বর্তমানে সারা দেশে ৯ হাজার ৮৭১ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যার মধ্যে ৪ হাজার ২৯৭ রোগী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং ৫ হাজার ৫৭৪ রোগী ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন করে ২ হাজার ৯৯৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৯৪ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ১ হাজার ৯৯৯ জন চিকিৎসা নিচ্ছে। এ নিয়ে দেশে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩২৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৬২ হাজার ২৪১ এবং ঢাকার বাইরে ৭৫ হাজার ৪৭৬ রোগী রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি সেন্টারের ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ঢাকায় ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬ জন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে ৭৩০ জন মারা গেল; যার ৫২১ জন ঢাকার এবং ২০৯ জন ঢাকার বাইরের।
এদিকে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনেই ডেঙ্গুতে ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আক্রান্ত হয়েছে ২৪ হাজার ৫২০ জন। গত আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে ৩৪২ জন মারা গেছে এবং আক্রান্ত হয় ৭১ হাজার ৯৭৬ জন। তার আগের মাস জুলাইয়ে ডেঙ্গুতে ২০৪ জনের মৃত্যু ও আক্রান্ত হয় ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন, জুনে ৪৩ জনের মৃত্যু ও ৫ হাজার ৯৫৬ জন আক্রান্ত, মে মাসে ২ জনের মৃত্যু ও ১ হাজার ৫৬ জন আক্রান্ত, এপ্রিলে ২ জনের মৃত্যু ও ১৪৩ জন আক্রান্ত, মার্চে ১১১ আক্রান্ত, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জনের মৃত্যু ও ১৬৬ জন আক্রান্ত এবং জানুয়ারিতে ৬ জনের মৃত্যু এবং ৫৬৬ জন আক্রান্ত হয়।
সিটি করপোরেশনের কাজ আমরাও করছি : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘আমাদের কাজ চিকিৎসা দেওয়া এবং আমরা তার বাইরেও সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছি। আমরা টেলিভিশন-পত্রিকায়ও বিজ্ঞাপন দিই। যে কাজটি সিটি করপোরেশনের, সে কাজটিও আমরা করছি। মাইকিংও আমরা করছি। এর বেশি করার মতো আমাদের আর কিছু নেই।’
রবিবার সাভারের আশুলিয়ায় বাংলাদেশ-কোরিয়া মৈত্রী হাসপাতালের হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রোগীরা যাতে দ্রুত বেড, ওষুধ ও স্যালাইন পায়Ñ সেই কাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করছে। বাইরে আমরা দেখলাম স্যালাইনের অভাব দেখা দিচ্ছে, কিন্তু আমাদের হাসপাতালে স্যালাইনের অভাব নেই। তারপরও আমরা সরকারিভাবে নির্দেশনা দিয়েছি যেন ৭ লাখ স্যালাইন দ্রুত বাজারে ইমপোর্ট করে আনা হয়। সেটার কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্যালাইন চলে এসেছে। আর লোকাল স্যালাইন তো তৈরি হচ্ছেই।’
অযোগ্যতা ও দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার ব্যর্থ : ফখরুল
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ডেঙ্গু সমস্যা সমাধানে এই সরকার ও ঢাকার দুই সিটির মেয়র ব্যর্থ হয়েছে। অযোগ্যতা ও দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু প্রতিরোধে চরম ব্যর্থ সরকার। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বিকার।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ডেঙ্গু জ্বরে কাঁপছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য খাতে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গু মৃত্যুদূত হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর হচ্ছে এখন প্রধান শিরোনাম।’