× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গায়ে গা ঘেঁষে থাকতে হচ্ছে শত শত রোগীকে

জামশেদ নাজিম

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৩ ০৯:৪২ এএম

আপডেট : ১০ জুলাই ২০২৩ ০৯:৪৩ এএম

হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই। ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে এসে শরীরের ব্যথায় মেঝেতে বসে থাকতে দেখা যায় যাত্রাবাড়ী থেকে আসা সোহাগকে। রবিবার রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে। ছবি : রুবেল রশীদ

হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই। ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে এসে শরীরের ব্যথায় মেঝেতে বসে থাকতে দেখা যায় যাত্রাবাড়ী থেকে আসা সোহাগকে। রবিবার রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে। ছবি : রুবেল রশীদ

দুপুর সাড়ে ১২টা। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের পাশের বেঞ্চে কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে একটি শিশু। কিছু সময় পরপর এক ব্যক্তি এসে ছেলেটির কপালে হাত দিচ্ছেন, খোঁজ নিচ্ছেন আর সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ‘আর একটু ধৈর্য ধরো, বাবা’- বলে ছুটে যাচ্ছেন জরুরি বিভাগের লাইনে। কয়েকজন ব্যক্তির পরই তার সিরিয়াল।

মো. আকাশ নামে এই ব্যক্তি এসেছেন ছেলে মো. ফজলুকে নিয়ে। আকাশ বলেন, ‘গত শনিবার ফজলুর জ্বর ছিল। শনির আখড়া থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে এসেছি। পরীক্ষার ফল পেয়ে আর দেরি করব না বলে এখানেই ছেলেকে ভর্তি করালাম।’

মুগদা হাসপাতালে শিশু, নারী ও পুরুষদের জন্য তিনটি ফ্লোরে অস্থায়ী ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অল্প সময়ে জরুরি বিভাগের কাজ শেষ করে সন্তানকে নিয়ে আটতলায় শিশু ওয়ার্ডের দিকে ছুটছেন আকাশ। লিফটের সামনে মানুষের লাইন। সেখানে রোগীর পাশাপাশি আছে রোগীর স্বজনরা। গাদাগাদি করে লিফটে উঠছেন সবাই। অযত্ন-অবহেলার কমতি নেই লিফটে। দুর্গন্ধের পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমে এখানেই সুস্থ মানুষ অসুস্থ হওয়ার অনেক জীবাণু নিতে শুরু করবেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাসপাতালের লিফটে সকাল থেকে দুপুরে পর্যন্ত মানুষের ভিড় থাকে। এ সময় অনেক রোগী উঠতে পারেন না। আবার জরুরি প্রয়োজনে অনেকেই আট ও নয়তলা পর্যন্ত হেঁটে ওঠানামা করেন।

লিফট থেকে নেমে শিশু ওয়ার্ডের যেদিকে চোখ যায়- শুধু মানুষ আর মানুষ। হাতে গোনা কয়েকটা সিট বাদে সবাই ম্যাট্রেস বিছিয়ে ফ্লোরে শুয়ে আছেন। দেখতে অনেকটা গারদখানার মতো। একজন আরেকজনের বিছানায়, কেউ গায়ে গা মিশিয়ে, কেউ ছোট শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে এক কোনায় জায়গা নিয়েছেন। হঠাৎ দেখে বোঝার উপায় নেই কোথায় দরজা আর কোথায় বারান্দা। কোথায় হাঁটার জায়গা আর কোথায় রোগীর বিছানা।

ফজলুর বাবা আকাশ কাগজপত্র নার্সদের কাছে জমা দিয়ে খোঁজা শুরু করেন ফাঁকা বিছানা। তাড়াহুড়ো করে এক নার্স রোগীর তালিকা হাতে নিয়ে পাশের নার্সের কাছে জানতে চান, আজ কোন কোন রোগী ছুটি পাবেন। কোনো উত্তর না পেয়ে শিশু ওয়ার্ডের ফ্লোরে একজনের ফাঁকা বিছানায় বসতে দিয়ে ফজলুর জন্য বিছানা খোঁজা শুরু করলেন নার্স।

মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ১০ তলায় পুরুষ, আটতলায় শিশু ও তিনতলায় মহিলা ওয়ার্ড নির্ধারণ করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেল। হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসার জন্য যে পরিবেশ দরকার, তার কিছুই চোখে পড়েনি এখানে। এমনকি ডেঙ্গু রোগীদের মশারি টানানো নেই কোনো ওয়ার্ডে।

পুরুষ ওয়ার্ডে কথা হয় র‌্যাব সদস্য হাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি তার সহকর্মী র‌্যাব-৩-এর হাবিলদার স্বপনের বিছানার পাশে একটা টুলে বসে আছেন। স্বপন শনিবার জ্বর অনুভব করার পর পরীক্ষা করলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা দুজন খিলগাঁও ক্যাম্পে কর্মরত। সেখান থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত বলে তারা ধারণা করছেন। তাদের পাশেই ফ্লোরে শুয়ে ছিলেন ছোটন চন্দ্র মল্লিক। গত বৃহস্পতিবার ভর্তি হন। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় চিকিৎসকরা আসেননি। রবিবার সকালে একবার চিকিৎসক এসে তাকে চিকিৎসা দিয়ে গেছেন।

এই ফ্লোরে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। ২০৩ জন রোগীর সেবা দিচ্ছেন মাত্র পাঁচজন নার্স। কাঞ্চনা হালদার বলেন, সকালে পাঁচজন, বিকালে চার ও রাতে তিনজন নার্স দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু নার্স মাত্র এ কজন দায়িত্ব পালন করছেন। 

২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পায়। তখন থেকে মুগদা হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দিয়ে আসছে। মূলত প্রতিটি ওয়ার্ডের সামনের সিঁড়ির পাশের খোলা স্থানে কিছু বিছানা পেতে চিকিৎসা শুরু হয়। এ বছর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ৫৭ জেলায় ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। প্রতিদিন হু-হু করে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তের ৬০ ভাগই ঢাকার। এর বেশি সংখ্যক রোগী ভর্তি আছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন এ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সবাই। 

জানা গেছে, ৫০০ শয্যা হাসপাতালে শনিবার পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৩ জন। এর মধ্যে ৪১৪ ডেঙ্গু রোগী। তাদের মধ্যে ৮ জন ভর্তি আছেন আইসিইউতে, শিশু ওয়ার্ডে ৬০ জন, আর পরুষ বোর্ডে ২০৩ জন। বাকি সবাই মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। অবশ্য চিকিৎসক সংকট দূর করতে রবিবার দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে জরুরি রোস্টার তৈরি করছে। ওই রোস্টার অনুসারে হাসপাতালের যেকোনো বিভাগের চিকিৎসক পর্যায়ক্রমে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেবেন বলে জানা গেছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর হাসপাতালের পক্ষ থেকে ১০ জন চিকিৎসক, ৩০ জন নার্স ও ৫০টি ম্যাট্রেস চাওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। কিন্তু সে বিষয়ে কোনো সাড়া দিচ্ছে না কেউ।

এসব বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার রোগীর সংখ্যা বেশি। এই হাসপাতালে তিনটা অস্থায়ী ওয়ার্ডে ৪১৪ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ১১ ও ১২ তলায় দুটি ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, প্রতিদিন বহির্বিভাগে পরীক্ষার পর অনেক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। আবার অন্যত্র পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ায় এই হাসপাতালে আসছে। এর মধ্যে ২০২২-২১ সালে আক্রান্ত অনেক ডেঙ্গু রোগী আবার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। চিকিৎসক সংকট ও নার্সের সংখ্যা কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এরই মধ্যে চাহিদাপত্র দিয়েছি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা