× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মশা নিধনে সফলতা নেই কোনো মেয়রের

ফয়সাল খান

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩ ১১:৫২ এএম

আপডেট : ৩০ মে ২০২৩ ১২:০৩ পিএম

মশা নিধনে সফলতা নেই কোনো মেয়রের

সাম্প্রতিককালে যদি কোনো মেয়র প্রশংসিত হয়ে থাকেন, তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তবে মশা মারতে তিনিও সফল হননি। ‘ঘরে ঘরে মশারি টানিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়’- এমন বক্তব্য দিয়ে নগরবাসীর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি।

শুধু আনিসুল হকই নন, দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের কোনো মেয়রই মশক নিধন কাজে সফলতা দেখাতে পারেননি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসব সিটি করপোরেশনে অন্তত ৩৩ জন মেয়র দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে প্রায় সব মেয়রের আমলেই মশা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। এ কাজে ব্যর্থতার ফলে প্রতি বছরই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া বা ফাইলেরিয়ার আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। কেউ কেউ মারাও গেছেন।

এদিকে চলতি বছর বর্ষার আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা।

সোমবার (২৯ মে) পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ৭২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৪ জন। চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ২৩৫ এবং ঢাকার বাইরে ৬০৮ জন রয়েছেন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩ জন।

দেশের সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোর অন্তত ১৫ নাগরিকের সঙ্গে কথা হয়। মশক নিধনে কোনো মেয়রই সফল হননি বলে তারা মনে করেন।

রাজধানীর জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে পানিসহ নাগরিকদের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আলাপকালে তিনি জানান, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন অত্যধিক জনপ্রিয় মেয়র। মানুষ তাকে ভালোবাসতেন। কিন্তু মশা নিয়ে মানুষ তার ওপরও সন্তুষ্ট ছিলেন না।

নারায়ণগঞ্জের খানপুর এলাকায় ভাড়া থাকেন নাজমা আক্তার। তিনি বলেন, সারা বছরই ফ্যান চালিয়ে রাখি, যাতে মশা থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যায়। কয়েল আর কত কেনা যায়। মাঝেমধ্যে লোকজন এসে কী যেন স্প্রে করে বুঝি না, মশাও মরে না।

রাজশাহীর পদ্মা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মওদুদ রানা বলেন, মেয়র যায় মেয়র আসে, কিন্তু মশার কোনো পরিবর্তন হয় না।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে মশক নিধনে কেউ সফল হয়েছেন বলে জানা নেই। মশক নিধন নিয়ে প্রায় সব এলাকার নাগরিকরাই মেয়রের ওপর অসন্তুষ্ট।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ

অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে (ডিসিসি) ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত, মোহাম্মদ হানিফ ও সাদেক হোসেন খোকা দায়িত্ব পালন করেন। সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র নির্বাচিত হন মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। বর্তমানে সংস্থাটির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর থেকে মেয়র হিসেবে আছেন মো. আতিকুল ইসলাম। মশা নিয়ে যে নগরবাসী তার ওপর বিরক্ত সেটা নিজের বক্তব্যেই বলেছেন।

সম্প্রতি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জানান, মশার উৎস চিহ্নিত করাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। মশার উৎস ধ্বংস করার জন্য অতিরিক্ত দশজন ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছেন। গতবারের ডেঙ্গুর প্রকোপ গত বছরের তুলনায় বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা নিয়েছেন।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মশক নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তা ছাড়া ড্রোনের মাধ্যমে ২৮ হাজার বাড়ির ছাদে মশার লার্ভা আছে কি না যাচাই করেছেন। মশক নিধনকর্মীরা যাতে ফাঁকি দিতে না পারে, সেজন্য বায়োমেট্রিক হাজিরার ব্যবস্থা করেছেন।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মহানগরীতে মশার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চলতি বছর ২৯১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২২ সাল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৫ হাজার ৫২৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৪ জন।

বর্তমানে রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিসহ অতীতের কেউই মশক নিধন কাজে সফলতা দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগ নাগরিকদের। অথচ শুধু গত দুই বছরে মশক নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ব্যয় করেছে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা।

চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. সরফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ১-২টি ওয়ার্ডে মশক নিধন ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্তত ৫-৭টি রেডজোনে স্প্রে ও ফগিং করা হচ্ছে।

সিলেট

সিলেট নগরীতে মশার দাপট বাড়তে থাকলেও সিটি করপোরেশনের তেমন কার্যক্রম নেই। বছরে দুই কোটি টাকা খরচ করলেও এর সুফল পাচ্ছেন না নাগরিকরা। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান এবং বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী একাধিকবার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময়ে মশক নিধন কাজ নিয়ে কোনো মেয়রের ওপরই সন্তুষ্ট ছিলেন না নগরবাসী।

নগরীর সোনারপাড়া নিবাসী আনিসুর রহমান বলেন, বছরে ২-৩ বার মশা নিধনের লোকজন আসে। আর সারা বছর কষ্টে থাকতে হয়।

খুলনা

চারদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলতে থাকলেও মশক নিয়ন্ত্রণে এখনও তেমন প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। ফলে মশার যন্ত্রণায় পড়েছেন ১৬ লাখ নগরবাসী। তাদের দাবি, ১৯৮৪ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে মেয়রের দায়িত্ব পালন করা কেউই মশক নিধনে সফল হতে পারেননি।

কেসিসির মেয়রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম জানান, এ বছর বৃষ্টি দেরিতে শুরু হওয়ায় দেরিতে মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণ কাজ শুরু করছে কেসিসি। এরই মধ্যে মশা মারার ওষুধ কেনার জন্য টেন্ডার প্রদান এবং ক্রয় আদেশ দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী

মশক নিধনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রসিক) প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও লাভ হচ্ছে না। নগরবাসীর দাবি, দিনেও মশা থেকে নিস্তার মেলে না। ১৯৮৮ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে মিজানুর রহমান মিনু, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু কেউ এই কাজে সফলতার মুখ দেখেননি।

তবে রাসিকের উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৫০ কর্মী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ওষুধ ছিটানোর কাজ করছেন।

কুমিল্লা

মশার যন্ত্রণায় নগরবাসী কষ্ট করলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না সিটি করপোরেশন। ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেছেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু এবং আওয়ামী লীগ নেতা আরফানুল হক রিফাত। এখনও মশক নিধন কাজে নাগরিকদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেননি তারা।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে মশক নিধনে ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এই টাকার মশানাশক সমগ্র সিটিতে মাত্র আড়াই দিন ব্যবহার করা সম্ভব। যার কারণে শুধু কোনো ভুক্তভোগী বাসিন্দা সিটি করপোরেশনকে অবহিত করলে ওই এলাকাতেই স্প্রে করা হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম জানান, বরাদ্দের সঙ্গে বাস্তবতার অনেক ফারাক আছে। তাই মশার উৎসস্থলগুলো ধ্বংস করতে হবে।

বরিশাল

২০০১ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে আহসান হাবীব কামাল, মুজিবুর রহমান সারওয়ার, শওকত হোসেন হিরন এবং সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু মশক নিধন নিয়ে কোনো মেয়রের ওপরই সন্তুষ্ট নন নাগরিকরা। এ সিটি করপোরেশনে মশক নিধনে প্রতি বছর গড়ে এক কোটি টাকা খরচ হয়।

রংপুর

২০১২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করছেন শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু এবং মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তাদের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নগরবাসীর কাজে এলেও মশক নিধনের কোনো সুফল পাননি বাসিন্দারা।

নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) গত দুই বছরে প্রায় চার কোটি টাকা খরচ করেও মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারেনি নাগরিকদের। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ সময় নানা উন্নয়ন কাজ হলেও মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়নি নগরবাসী।

গাজীপুর

২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএনপির অধ্যাপক এমএ মান্নান, আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে এবং ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে আসাদুজ্জামান কিরণ দায়িত্ব পালন করেন। তারা কেউই মশক নিধনে সফল হননি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ময়মনসিংহ

২০১৮ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রশাসক ও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইকরামুল হক টিটু। এলাকার নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলেও মশক নিধনে তিনিও সফলতা দেখাতে পারেননি।

প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর ও বরিশালের প্রতিবেদক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা