বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস আজ
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৩ ০৯:১০ এএম
আপডেট : ১৭ মে ২০২৩ ১২:০৩ পিএম
ফাইল ফটো
দেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আগে বয়স্কদের মধ্যে রক্তচাপের অধিক প্রবণতা থাকলেও কয়েক বছর ধরে তরুণ জনগোষ্ঠী এই নীরব ঘাতকের শিকার হচ্ছে।
আক্রান্ত হয়েও প্রায় অর্ধেক মানুষ জানেন না তারা উচ্চ রক্তচাপের শিকার। প্রতি তিনজনের একজন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ সেবন করেন। একই সঙ্গে আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে উচ্চ রক্তচাপের রোগী বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আপনার রক্তচাপ সঠিকভাবে পরিমাপ করুন, এটি নিয়ন্ত্রণ করুন, দীর্ঘ দিন বাঁচুন’ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আক্রান্ত হয়েও জানেন না অর্ধেক মানুষ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বজুড়ে দেড়শ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। এ রোগে প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। দেশে উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত মানুষের অবস্থা জানতে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ন্ত্রণহীন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
গবেষণায় বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেয় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। দেশের মুন্সীগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার ১০ অঞ্চলের ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সি ৪ হাজার ৪৪২ নারী ও পুরুষের রক্তচাপ পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায়, এক হাজার ১৪৮ জন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। অর্থাৎ মোট ২৬ শতাংশ মানুষের রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি।
গবেষক দলের প্রধান আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী আলিয়া নাহিদ বলেন, জরিপের অন্তর্ভুক্ত প্রায় অর্ধেক ব্যক্তি জানেন না তারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। উচ্চ রক্তচাপ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ওষুধ সেবন করেন। একই সঙ্গে প্রায় ৫৮ শতাংশ ব্যক্তির রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন কী, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রক্তস্রোত রক্তনালির দেয়ালে যে চাপ সৃষ্টি করে তাই রক্তচাপ। একজন সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ ১২০/৮০ ধরা হয়। ওপরেরটিকে বলা হয় সিস্টোলিক অর্থাৎ রক্তনালির দেয়ালের ওপর রক্তের চাপ এবং নিচেরটিকে বলা হয় ডায়াস্টোলিক অর্থাৎ রক্তনালির দেয়ালের স্বাভাবিক চাপ। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ কিছুটা বাড়তে থাকে। তখন এই পরিমাপ থেকে কিছুটা বেশি চাপকেও স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। তবে ওপরের চাপ ১৪০-এর বেশি এবং নিচের চাপ ৯০-এর বেশি হলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলা হয়।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, রক্তনালি সরু অথবা শক্ত হলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়। বয়স বৃদ্ধি ও ধূমপান রক্তনালিকে শক্ত করে। অপরদিকে চর্বি জমে রক্তনালি সরু হয়। মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথা, চোখে কম ও ঝাপসা দেখা, মেজাজ সব সময় খিটখিটে থাকা, মনোযোগের অভাব উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, উচ্চমাত্রায় লবণ ব্যবহার করায় প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। এর বাইরে ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, হাঁটাচলা/ব্যায়াম না করায় মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ। উচ্চ রক্তচাপে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি বিকল ও চোখের রেটিনা নষ্ট হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্ত থাকতে হলে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ধূমপান ও অ্যালকোহল পুরোপুরি বর্জন করতে হবে। দিবসটি উপলক্ষে আজ বুধবার সারা দেশে বেসরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা সভা, শোভাযাত্রাসহ সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হবে।