× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সত্যি হতে যাচ্ছে দ্য লাস্ট অব আস!

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৩ ২১:০৬ পিএম

আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৩ ২২:০৪ পিএম

সত্যি হতে যাচ্ছে দ্য লাস্ট অব আস!

বিশেষ এক ছত্রাক সংক্রমণে জম্বিতে পরিণত হচ্ছে মানুষ। অথচ এই ছত্রাক মানবদেহে বেঁচে থাকার কথা নয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এর জিনগত কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে মানুষকে সংক্রমিত করতে শুরু করে এটি। এমনি এক গল্পে আবর্তিত হয়েছে এইচবিওর টিভি সিরিজ ‘দ্য লাস্ট অব আস’-এর ঘটনা।

তবে সত্যি সত্যি জম্বিতে পরিণত না হলেও যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভবত ঘটেছে মেডিকেল ইতিহাসে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে ভয়াবহ ছত্রাক সংক্রমণজনিত প্রাদুর্ভাবের ঘটনা। দেশটির মিশিগানের এক কাগজ উৎপাদন কারখানায় প্রায় ৯৩ শ্রমিকের মধ্যে ব্লাস্টোমাইসিস ছত্রাকের সংক্রমণের লক্ষণ দেখা গেছে। এরই মধ্যে একজন মারাও গেছেন। সেখানকার কর্মীরাই বলছেন, তারা তাদের জীবদ্দশায় এমন কিছু কোনো দিন দেখেননি।

জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ১৯ জনের সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছেন এবং আরও ৭৪ জনের মধ্যেও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আক্রান্ত সবাই কারখানাটির শ্রমিক। এর মধ্যে একজন কয়েক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ধারণা করা হচ্ছে, মানুষকে আক্রান্ত করা সংক্রামক ধাঁচের ব্লাস্টোমাইসিস ছত্রাক কাগজ উৎপাদন কারখানার আর্দ্র পরিবেশে থাকা পচা কাঠ থেকেই এসেছে। মূলত এ ধরনের ছত্রাকগুলো স্যাঁতসেঁতে মাটি ও পাতার আবর্জনার মধ্যে লুকিয়ে থাকে।

ব্লাস্টোমাইসিসের স্পোরগুলো শ্বাস নেওয়ার সময় ফুসফুসকে সংক্রমিত করতে পারে এবং কাশি, ঠান্ডা ও বুকে ব্যথার উপসর্গযুক্ত অসুস্থতার কারণ হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে ফুসফুস থেকে পেশি, হাড়, মস্তিষ্কসহ অন্যান্য অঙ্গে এই ছত্রাক ছড়িয়ে পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (সিডিসি) মতে, ব্লাস্টোমাইসিস সংক্রমণে মৃত্যুর হার প্রতি ১০০ জনে একজন। মিশিগানের একটি কারখানারই এমন পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে এ-সংক্রান্ত গবেষকদের। কারণ পাঁচ বছর ধরে গড়ে রাজ্যটিতে ছত্রাকের সংক্রমণের ঘটনা মাত্র ২৬টি।

এর আগে ২০১০ সালেও ব্লাস্টোমাইসিসের প্রাদুর্ভাবে ৫৫ জন আক্রান্ত হয়েছিল। এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্লাস্টোমাইসিসে ১২১৬ জনের মৃত্যু হয়।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবছর গড়ে ৬ হাজার ৭০০ জন ছত্রাক আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে গড়ে ৬০ জন মারা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ছত্রাক সংক্রমণ আরও সাধারণ হয়ে উঠছে। 

এর জন্য আংশিকভাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দায়ী করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা আশঙ্কা করছেন, ছত্রাক সংক্রমণ মানবতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। 

এর আগে চলতি বছরের প্রথম দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিশ্বে প্রথম কোনো ব্যক্তির শরীরে উদ্ভিদ ছত্রাকের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। চিকিৎসকরা বলেছেন, উদ্ভিদের ছত্রাকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে কাজ করার সময় উদ্ভিদের রোগজীবাণু মানুষের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের শরীরের তাপমাত্রা যথেষ্ট বেশি। এই তাপমাত্রায় ফাঙ্গাসসহ বেশিরভাগ অণুজীবের প্রোটিন বিকৃত হয়ে যায়। তাই তারা আমাদের দেহে টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক উষ্ণতায় কিছু কিছু ছত্রাক উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা পেয়ে যাচ্ছে। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যদি অব্যাহত থাকে তবে অনেক ছত্রাক মানুষের শরীরের তাপমাত্রা সহ্য করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। 


যেভাবে ছত্রাক তার শিকারকে জম্বিতে পরিণত করে

প্রথমে ছত্রাকের স্পোর শরীরে প্রবেশ করে। ছত্রাকটি সেখানে বেড়ে ওঠে এবং আক্রান্তের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া শুরু করে। এরপর আক্রান্ত প্রাণী ফাঙ্গাসের বেড়ে ওঠার জন্য সহায়ক এমন উঁচু স্থানে উঠতে বাধ্য হয়। ছত্রাক তার শিকারকে ভেতর থেকে গ্রাস করে। মৃত্যু পর্যন্ত আক্রান্তের সব পুষ্টি আহরণ করে। এরপর আক্রান্ত প্রাণীর মাথা ফেটে ছত্রাকের দেহ গজিয়ে উঠে স্পোর মুক্ত করে। ওই স্পোর চারপাশে অবমুক্ত করে, যা নতুন কোনো প্রাণীকে আক্রান্ত করে।

এটা কথাসাহিত্যের মতো শোনালেও এভাবে আক্রমণ করা ছত্রাকের বাস্তব উপস্থিতি রয়েছে। যেমন করডিসেপস ও ওফিওকরডিসেপস। ওফিওকরডিসেপস ইউনিল্যাটেরালিস সাধারণত জম্বি অ্যান্ট ফাঙ্গাস নামে পরিচিত, যা পিঁপড়ায় সংক্রমণ ঘটায়। 

বাস্তবে কি কর্ডিসেপস মহামারি বা অন্য কোনো ছত্রাকের মহামারি কখনও ঘটতে পারে? লন্ডনের ট্রপিক্যাল ডিজিজেস হাসপাতালের প্রধান ছত্রাক বিশেষজ্ঞ ডা. নীল স্টোন বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা ছত্রাকের সংক্রমণের বিপদকে অবমূল্যায়ন করছি। আমরা একটি ছত্রাকের মহামারি মোকাবিলার জন্য সম্পূর্ণরূপে অপ্রস্তুত।’

লাখ প্রজাতির ফাঙ্গাস রয়েছে, যা রোগের কারণ হতে পারে। গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রাণঘাতী ছত্রাকের প্রথম তালিকা প্রকাশ করে।

এর মধ্যে এমন কিছু ছত্রাক রয়েছে, যা কর্ডিসেপসের চেয়েও মারাত্মক হুমকি।

ডব্লিউএইচও ১৯টি ছত্রাক চিহ্নিত করেছে, যা দুশ্চিন্তার কারণ। এর মধ্যে রয়েছে একটি মারাত্মক সুপারবাগ ক্যানডিডা অরিস ও মিউকরমিসাইটিস। এগুলো আমাদের শরীরের মাংস দ্রুত খেয়ে ফেলে। ফলে মুখে ক্ষত সৃষ্টি হয়।

ডব্লিউএইচওর ধারণা, ক্যানডিডা অরিসে আক্রান্তদের মৃত্যুহার অর্ধেক। সারা বিশ্বেই এই ছত্রাক রয়েছে এবং সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে। ২০০৯ সালে টোকিও মেট্রোপলিটন জেরিয়াট্রিক হাসপাতালে একজন রোগীর কানে এটা শনাক্ত হয়েছিল।

সূত্র : বিবিসি ডেইলি মেইল, সিএনএন, হিন্দুস্তান টাইমস

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা