প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৫২ পিএম
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:০৭ পিএম
ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি মেরিয়ন বায়োটেক লিমিটেডের অ্যামব্রোনল ও ডক-১ ম্যাক্স সিরাপের ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করল ডব্লিউএইচও। ছবি : সংগৃহীত
ভারতীয় কোম্পানির তৈরি কাশির সিরাপ পান করে বিশ্বের কয়েকটি দেশে সম্প্রতি শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে উজবেকিস্তানে ভারতীয় একটি কোম্পানির কাশির সিরাপ পান করে অন্তত ১৮ শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় অ্যামব্রোনল এবং ডক-১ ম্যাক্স নামের দুটি সিরাপের ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সিরাপ দুটি তৈরি করে ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি মেরিয়ন বায়োটেক লিমিটেড।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে ডব্লিউএইচও জানায়, ওই সিরাপ দুটির গুণগত মান নিম্নমানের। তাই সেগুলোর ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের তা কোনোভাবে পান করানো যাবে না। পান করালে তারা গুরুতর অসুস্থ হতে পারে। এমনকি মারা যেতে পারে।
ডব্লিউএইচওর ল্যাব পরীক্ষায় দেখা গেছে, সিরাপ দুটিতে এমনসব উপাদান রয়েছে, যা তলপেট ব্যথা, বমি, ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। তা ছাড়া সিরাপ দুটি পান করলে প্রস্রাব করতে কষ্ট হতে পারে, মাথাব্যথা হতে পারে, মানসিক অবস্থা বদলে যেতে পারে। এমনকি কিডনিরও সমস্যা হতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত মৃত্যু অনিবার্য করে তুলতে পারে।
এ অবস্থায় মেরিয়ন বায়োটেক লিমিটেডের কাছে ডব্লিউএইচওর পরামর্শ, এই দুটি সিরাপের যে চালানগুলো বাজারে রয়েছে শিগগির তা সরিয়ে ফেলা দরকার এবং আর যাতে বাজারজাত না করা হয় তা নিশ্চিত করা জরুরি।
গত ২৭ ডিসেম্বর উজবেকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ১৮ শিশুর মৃত্যুর জন্য ডক-১ ম্যাক্স সিরাপ পান দায়ী। ভারতীয় কোম্পানি মেরিয়ন বায়োটেক লিমিটেডের অ্যামব্রোনল এবং ডক-১ ম্যাক্স সিরাপে অতিমাত্রায় ডাইথাইলিন গ্লাইকোল এবং ইথিলিন গ্লাইকোল পাওয়া গেছে।
সিরাপে ইথিলিন গ্লাইকোল থাকার কথা নয়। ওষুধে এটি ব্যবহার করা নিষেধ। এটি সাধারণত সাধারণ শিল্প কারখানায় গ্লিসারিন উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
উজবেকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির পর ২৯ ডিসেম্বর বিষয়টি তদন্ত করে দেখার ঘোষণা দেয় ভারত সরকার।
একই দিন মেরিয়ন বায়োটেক লিমিটেড ঘোষণা দেয়, ডক-১ ম্যাক্স সিরাপের উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। তা ছাড়া সিরাপটির গুণগত মান নিয়ে পরীক্ষা করতে নিজেদের কোনো আপত্তি নেই বলেও জানায় নদীয়ভিত্তিক কোম্পানিটি।
স্ক্রলডটইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতঃপূর্বে গত অক্টোবরেও ভারতের চারটি সিরাপের ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করে ডব্লিউএইচও। তখন ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক মেডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের চারটি সিরাপ নিয়ে সতর্ক করা হয়। সিরাপগুলো হলো, প্রোমেথাজিন ওরাল সলিউশন, কফেক্সমালিন বেবি কফ সিরাপ, ম্যাকফ বেবি কফ সিরাপ ও ম্যাগ্রিপ এন কোল্ড সিরাপ।
সিরাপগুলো পানে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় অন্তত ৬৬ শিশুর মৃত্যুর পর ওই সতর্কতা জারি করে ডব্লিউএইচও।
গাম্বিয়া ও ডব্লিউএইচওর আলাদা ল্যাব পরীক্ষায় ওই সিরাপ চারটিতে অতিমাত্রায় ডাইথাইলিন গ্লাইকোল এবং ইথিলিন গ্লাইকোলর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
গত ১৩ ডিসেম্বর ডব্লিউএইচওর ওই সতর্কতাকে বাড়াবাড়ি বলে মন্তব্য করেন ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক জেনারেল ভিজি সোমানি। সোমানির দাবি, গাম্বিয়ায় যে ভারতীয় সিরাপগুলো পানে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তা ঠিক নয়। কারণ, আমরা সিরাপগুলো পরীক্ষা করে দেখেছি। তাতে দেখা গেছে, ওই সিরাপগুলোয় বাড়তি বা বিষাক্ত কোনো উপাদান নেই।
সূত্র : স্ক্রলডটইন।