× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা

রাকিবুল ইসলাম (রায়পুর), লক্ষ্মীপুর

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১১:১৮ এএম

আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৩২ এএম

ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৯০০ রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসছে। অথচ এতসংখ্যক রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক আছেন মাত্র সাতজন। অপর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির স্বাস্থ্যসেবার মান ভেঙে পড়েছে। রোগীরা রোগব্যাধি উপশম হওয়াটা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছে।

সরকারিভাবে রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট। ২০০৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ৩১ শয্যা থেকে উন্নীত করা হলেও জনবল ও অবকাঠামো সম্প্রসারণ হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে জনবল সংকট চলছেই। হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা চিকিৎসক বাহারুল আলম বলেন, ‘প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য রয়েছেন সাতজন চিকিৎসক। এই চিকিৎসকদের দিয়ে চালছে হাসপাতাল। প্রতিদিন গড়ে ৯০০ রোগী দেখা, ভর্তি রোগী সামলানো, অপারেশন করাÑ সবই করতে হয় আমাদের। প্রায় দুই বছর ধরে কোনো গাইনি বিশেষজ্ঞ নেই। এতে গর্ভবতী নারীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’  তিনি বলেন, গর্ভবতী মায়েদের প্রয়োজনীয় অপারেশন (সিজারিয়ান) অনেক সময় তিনিই বাধ্য হয়ে করছেন। যদিও এটি তার মূল দায়িত্ব নয়।

হাসপাতালে দুজন চিকিৎসক এক দশক ধরে অনুপস্থিত আছেন। একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাদের পদ শূন্য না দেখানোয় নতুন চিকিৎসকও নিয়োগও দেওয়া যাচ্ছে না। এতে চিকিৎসক সংকট অব্যাহত রয়েছে। রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০টি নার্স পদের মধ্যে ২১টি শূন্য। মাত্র ৯ জন নার্স দিয়ে ৫টি ওয়ার্ড চালানো হচ্ছে। রোগীদের স্থানাভাবে অনেক সময় মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। একজন সিনিয়র নার্স বলেন, ‘একাই শিশু, প্রসূতি ও মেডিসিন ওয়ার্ড সামলাতে হচ্ছে। দু-তিনজন নার্স দিয়ে প্রতি শিফটে এত রোগী সামলানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’

হাসপাতালে কোনো ইলেকট্রিশিয়ান নেই। এ কারণে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে বাইরে থেকে লোক ডেকে আনতে হয়। অধিকাংশ সময় লোক না পেলে দিনের পর দিন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে থাকতে হয়। পোহাতে হয় দুর্ভোগ। দীর্ঘ ১৯ বছর পর ২০২২ সালে এক্স-রে মেশিন চালু হলেও আজও কোনো টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়া হয়নি। চিকিৎসকরা নিজেদের চাঁদা দিয়ে বাইরে থেকে একজন টেকনিশিয়ান এনে তার বেতন দিচ্ছেন।

ক্লিনারের অধিকাংশ পদ শূন্য থাকায় পুরো হাসপাতালজুড়ে নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে। বর্তমানে ঝাড়ুদার রয়েছেন মাত্র দুজন এবং ওয়ার্ডবয় মাত্র তিনজন। রোগীদের পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে সেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর বেশিরভাগ পদ শূন্য থাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রম প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ রোগীরা বাধ্য হয়ে উপজেলা কমপ্লেক্সে ভিড় করছেন। এতে মূল হাসপাতালের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার, ডায়াগনস্টিক ল্যাব, এক্স-রে মেশিন, শিশু ও প্রসূতি ওয়ার্ডসহ আধুনিক অবকাঠামো থাকলেও দক্ষ জনবল না থাকায় সেগুলো পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। একজন টেকনিশিয়ান জানান, যন্ত্রপাতি থাকলেও চালাতে পারি না, কারণ সহযোগী জনবল নেই। আবার অনেক মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে, মেরামতের উদ্যোগ নেই।

রায়পুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম আর সুমন বলেন, রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পুরো এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অবস্থা আরও অবনতির দিকে যাবে। দ্রুত শূন্যপদে নিয়োগ ও অনুপস্থিত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা রায়পুরবাসীর প্রাণের দাবি। রোগীরা উন্নত স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত থাকতে চান না।  সাবেক কাউন্সিলর মাঈন ভূঁইয়া বলেন, ‘সরকার হাসপাতাল বানিয়েছে। কিন্তু লোকবলের অভাবে রোগীরা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না।’ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন জানান, রায়পুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংকট সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিস্তারিত জানে। নিয়োগ প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা