প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৫ ১৫:৪৬ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
নবজাতক শিশু একটি পরিবারের আনন্দের বার্তাবাহক! নবজাতকের সঠিক যত্ন নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর যত্নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হচ্ছে জন্মের পর পরই বুকের দুধ পান করাতে শুরু করা। অনেক অভিভাবক বা মুরুব্বিগণ মনে করেন যে বুকে যেহেতু দুধ নামে নাই, সেহেতু শিশুকে বুকে লাগানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু চিকিৎসকগণ বলে থাকেন, জন্মের পর পর যত দ্রুত সম্ভব এমনকি মায়ের গর্ভফুল প্রসব হওয়ার আগেই বাচ্চাকে মায়ের বুকে লাগাতে হবে।
আমরা জানি, শিশুর জন্মের পর পরই প্রথম এক দুই দিন বুকের দুধ নামে না। তখন ঘন হালকা হলুদ রঙের যে শাল দুধ বের হয় সেটি পুষ্টিগুনে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অত্যন্ত উচ্চমান সম্পন্ন। আমরা জন্মের পরপরই শিশুকে বুকের দুধে লাগাবো এবং বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে শুরু করব এতে মার বুকে দুধের প্রবাহ বাড়বে এবং শিশুটি ও দ্রুত দুধ খাওয়ার শিখে যাবে এবং মায়ের বুকের দুধ জমে বুক শক্ত হয়ে যাবে না, মা অনায়াসে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।
শিশুর যত্নে দ্বিতীয় যে জিনিসটি লক্ষ্য রাখতে হবে তা হচ্ছে শিশুকে উষ্ণ রাখা। শিশুকে একটি মোটা তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে না রেখে আমরা কয়েক স্তরে নরম সুতি কাপড় দিয়ে পেঁচাবো। অতিরিক্ত রঙচঙে, জরিযুক্ত বা সিনথেটিক কাপড় দিয়ে শিশুকে পেঁচানো উচিত নয়। বাজার থেকে কাপড় কিনে এনে সরাসরি শিশুকে না পরিয়ে, কাপড়টি যেন ধুয়ে রোদে শুকিয়ে তারপর পরানো হয়।
পরবর্তী যে বিষয়টি
নিয়ে কথা বলবো সেটি হচ্ছে নাভির যত্ন। চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত ধাত্রী বা সেবিকা যে-ই
থাকুন না কেন, প্রসবের পর পরই বাচ্চার নাভিটিকে একটি জীবাণুমুক্ত ব্লেড দিয়ে কাটবেন
এবং, দুটি জীবাণুমুক্ত ক্ল্যাম্প বা সুতা দিয়ে নাভিটিকে বেঁধে দিবেন। এরপর, নাভীতে
একবার একটি ঘন স্পিরিট লাগিয়ে দিতে হবে।
বাসায় আনার পরে আমরা লক্ষ্য রাখব নাভিতে যেন কোন প্রকার সেঁক দেয়া না হয়। এছাড়া কোন মলম বা স্পিরিট দেবারও প্রয়োজন নেই। নাভিটিকে শুকনো পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নাভি ঝরে পড়ে যাবার পরেও নাভিমূলে কোনরকম সেঁক বা মলম দেয়ার প্রয়োজন নেই।
এরপরে যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো তা হচ্ছে শিশুর ত্বকের যত্ন। আমরা শিশুর ত্বকে সরিষার তেল, বিভিন্ন রকমের তেল বা লোশন মেখে থাকি। সরিষার তেল কিন্তু ত্বকের যত্নের জন্য উপকারী নয়, তা যত খাঁটিই খাঁটিই হোক না কেন। অলিভ অয়েল শিশুর ত্বকের যত্নে সবচেয়ে ভালো তেল। শিশুকে আমরা যে কোন একটি বেবি সোপ দিয়ে গোসল করাবো এবং গোসলের আগে বা পরে অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করবো। আমরা মাঝেমধ্যে সকালের নরম রোদে শিশুকে দিতে পারি, আবার লক্ষ্য রাখতে হবে খোলামেলা রাখার ফলে যেন ঠান্ডা না লেগে যায়।। নবজাতকের চোখে বা ভ্রুতে কাজল দেওয়াটা পরিহার করতে হবে, কেননা এতে চোখে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে।
শিশুর যত্নের ব্যাপারে আরেকটি কথা আমরা বলে থাকি, তা হচ্ছে শিশুকে দেখতে অনেক আত্মীয়-স্বজন যেন ঘরে ভীড় না করেন। কেননা আত্মীয়- স্বজনদের মধ্যে অনেকের শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বা ত্বকের সংক্রমণ থেকে থাকে। তা থেকে নবজাতক শিশুটির ত্বকের এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন অসুখ হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় জানাতে চাই, তা হচ্ছে শিশুর বিপদ চিহ্ন সমূহ। যে লক্ষণগুলো দেখলে আমরা একটি নবজাতক শিশুকে অসুস্থ মনে করবো সেগুলোই বিপদচিহ্ন। তার মধ্যে প্রথম যে লক্ষণটি কথা আমরা বলি সেটি হচ্ছে শিশুর শরীর গরম হয়ে যাওযা বা জ্বর আসা (১০০ডিগ্রি বা তার বেশী) অথবা শিশুর শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ( ৯৭ ডিগ্রির কম)। এছাড়া, আমরা যদি দেখি শিশু খাবার খেতে পারছে না বা খাবার খেতে আগ্রহী না, বা শিশু ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে প্রতি মিনিটে ৬০ বারের বেশি, বা বুকের খাঁচা ভেঙে যাচ্ছে, অথবা শিশুটি নিস্তেজ হয়ে পড়ছে, কোনরকম নড়াচড়া করছে না বা খিঁচুনি হচ্ছে অথবা শিশুর শরীরে জন্ডিস দেখা যাচ্ছে যাতে হাত- পায়ের তালু পায়ের তালু হলুদ হয়ে গেছে, তখন আমরা বুঝে নেব যে শিশুটি মারাত্মক অসুস্থ এবং তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
শিশএর যত্ন প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি ব্যাপার আমি বলতে চাই, তা হচ্ছে প্রসূতি মায়ের যত্ন। প্রসব পরবর্তী অনেক মা খুব অসহায় বোধ করেন। মাকে পরিপূর্ণ মানসিক সাপোর্ট দেয়া জরুরী। মায়ের খাবারটি যেন সুষম খাবার হয় আমাদেরকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অনেক সময় প্রসূতি মা নিজের শারীরিক সমস্যা এবং শিশুর যত্নে ব্যস্ত থাকার কারণে ঘুমাতে পারেন না। আমরা পরিবারের সকলে মিলে মাকে ঘুমানোর সুযোগ করে দিব।
পরিশেষে বলা যেতে
পারে, নবজাতকের যত্নের মূল কথাগুলো হচ্ছে প্রসবের পরপর অতি দ্রুত বুকের দুধ পান করানো
এবং শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো, শিশুকে উষ্ণ পরিচ্ছন্ন রাখা, এবং ত্বকে অতিরিক্ত
প্রসাধনে কাজল পাউডার ইত্যাদি ব্যবহার বর্জন করা, নাভী শুকনা ও পরিচ্ছন্ন রাখা, এবং
বিপদ চিহ্ন গুলো লক্ষ্য রাখা।
এই কয়েকটি ব্যাপার
যদি আমরা লক্ষ্য রাখে তাহলে আমরা সঠিকভাবে একটি নবজাতকের বৃদ্ধি বা নবজাতকের যত্ন নিশ্চিত
করতে পারবো