সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২ পিএম
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪৩ পিএম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। ছবি : সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি ও অনিয়মের দায়ে উত্তীর্ণ ৫৪৪ জনের ফল বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের প্রক্রিয়াধীন মেডিকেল অফিসার, কনসালটেন্ট, সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ সব নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিএসএমএমইউয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় তৃতীয় দফায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং সুপারিশের ভিত্তিতে পুরো নিয়োগ কার্যক্রম বাতিলের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩ জুলাই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের শূন্য পদে জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে ৫২ পদে ৫৪৪ জনকে নিয়োগ দেওয়ার কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। পদগুলোর মধ্যে কনসালট্যান্ট ৯৬ জন, মেডিকেল অফিসার (মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, অর্থোপেডিকস) ৬০ জন ও সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে ২২৫ জনকে নিয়োগের কথা বলা হয়। এ ছাড়াও বিজ্ঞপ্তিতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ), পরিচালক (আইটি), টেকনিশিয়ান, টেকনোলজিস্টসহ সবমিলিয়ে ৫৪৪ জনকে নিয়োগের কথা বলা হয়।
এরপর ২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৮ ক্যাটাগরির পদে ৪র্থ থেকে ৯ম গ্রেডে ১৭২ জন নিয়োগে পুনর্বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। এরমধ্যে মেডিকেল অফিসার হিসেবে ৬৮ পদে জনবল নিয়োগের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। যোগ্যতা চাওয়া হয় বিএমডিসি কর্তৃক স্বীকৃত এমবিবিএস বা সমমান ডিগ্রি এবং বিএমডিসি কর্তৃক স্থায়ী রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত।
এছাড়াও এই বিজ্ঞপ্তিতে বিভাগীয় প্রার্থী ও বিএসএমএমইউ থেকে প্রাপ্ত পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৬৮ জন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দিতে সে বছরেই (২০ অক্টোবর) লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় ২১ অক্টোবর রাত ৮টার পর। তবে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন থেকে শুরু করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মডারেশন সবকিছুতেই বড় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এমনকি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে উত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনাও ঘটে বলে দাবি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের।
বিএসএমএমইউ রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তৃতীয় দফা তদন্তে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি ও অনিয়মের তথ্য মিলেছে। তাই সিন্ডিটেড সভায় উত্তীর্ণদের ফলাফল বাতিল করে নতুন নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে তদন্তে কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘নিয়োগ প্রার্থীদের কল রেকর্ড, সিসিটিভি ফুটেজ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথনের স্ক্রিনশট ছিল, পেনড্রাইভে প্রশ্ন নেওয়া অভিযুক্ত চিকিৎসকের মিষ্টি বিতরণের ছবিসহ আরও অনেককিছু যাচাই-বাছাই করেছি। সবমিলিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাজে জমা দিয়েছি। বাকি সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে।’
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেনড্রাইভে করে ৩০০ প্রশ্ন চুরি করে সেগুলো চক্রের সদস্যদের কাছে সরবরাহ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জাহিদুল ইসলাম ও কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফয়সাল ইবনে কবির। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান। তারাই চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে তা বিক্রি করেন।