ঈশ্বরগঞ্জ হাসপাতাল
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:১৩ পিএম
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:২৬ পিএম
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। প্রবা ফটো
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভোগান্তির আরেক নাম ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। রোগীদের পথরোধ করে হাত থেকে প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) ছিনিয়ে নিয়ে ছবি তোলাই যেন তাদের মূল কাজ।
এতে করে যেমন তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মানছেন না। ফলে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।
সম্প্রতি হাসপাতালটিতে বাংলাদেশ সরকার এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক নোটিশ টানানো হয়েছে। এতে, সকল ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ না করার জন্য বলা হয়। হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ প্রতিনিধিদের জন্য সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার দুপুর ১টার পর থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাতের নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে এই নির্দেশনা মানছেন না কেউ।
প্রতিনিধিরা সপ্তাহের সাতদিনেই হাসপাতালের সামনে অবস্থান করতে দেখা
যায়। এমনকি রাতেও দেখা মেলে তাদের। আর রোগীরা চিকিৎসকের কক্ষ থেকে
বের হলেই প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) নিয়ে প্রতিনিধিদের চলে টানাহেঁচড়া। এতে বিব্রতকর
অবস্থায় পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ও ভেতরে ওষুধ
কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভিড় লেগেই আছে। রোগীরা বের হলে তাদের
ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাহেঁচড়া করেন সবাই। ছবি তোলেন, দেখেন কোন কোম্পানির ওষুধ লেখা হয়েছে। অনেকেই আবার নিজেদের মোবাইল-ফোন নম্বর দিয়ে রোগী বা তাদের স্বজনদের বিভিন্ন
ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শও দেন।
এভাবে তারা চিকিৎসক ও রোগীদের
চিকিৎসা সেবায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন। কোনো রোগীকে চিকিৎসকের কক্ষে ঢুকতে দেখলেই ১০ থেকে
১২ জন প্রতিনিধি ওই কক্ষের সামনে এবং ভেতরে ভিড় করছেন।
আবার কেউ কেউ রোগীকে অপেক্ষায়
রেখে চিকিৎসকদের সাথে সাক্ষাৎ সেরে নিচ্ছেন। প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে এসব প্রতিনিধিদের নানান অনিয়মের
দৃশ্য।
এভাবেই প্রতিদিন সরকারি
হাসপাতালটিতে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের
শিকার হচ্ছেন রোগী এবং তাদের স্বজনরা।
হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর
স্বজন বলেন, ‘সকাল থেকেই তারা (প্রতিনিধিরা) সেখানকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে অবাধ বিচরণ করতে থাকেন। সেই সঙ্গে তারা
নার্সদের কাছে থাকা রোগীদের ফাইল নিয়েও টানাটানি করেন।’
ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের
শিক্ষার্থী আবুল খায়ের বলেন, ‘ঈশ্বরগঞ্জ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, যে কোন সময় মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের (প্রতিনিধি)
ডাক্তারের রুমে প্রবেশ করেন। তাদের
কারণে সাধারণ রোগীরা বেশ ক্ষুব্ধ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা তাদের সমস্যার কথা
বলার সময় মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ উপস্থিত থাকার কারণে রোগীরা বেশ অস্বস্তিতে পড়েন।’
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া তাসনিম মুনমুন বলেন, ‘হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আসা
লিখিত ও মৌখিকভাবে সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আরও ব্যবস্থা নিব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আসার পর থেকে দালালের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছি। হাসপাতালে কখনো দালাল প্রবেশ করলে আমরা মানব না। দালালের কোন নির্দিষ্ট পোষাক নেই। কখনো রোগী সেজে বা রোগীর আত্মীয় স্বজনের সাথে ঢুকে পড়ছেন তারা। এ ব্যাপারে আরও কঠিন ব্যবস্থা নিব।’