× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এইচএমপিভি

প্রতিরোধ করা না গেলে মহামারির শঙ্কা

পারভেজ খান

প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:২৫ পিএম

আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:০৪ পিএম

প্রতিরোধ করা না গেলে মহামারির শঙ্কা

হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি নামে একটি ভাইরাস নতুন করে আলোচনায় এসেছে। চীন, মালয়েশিয়া, জাপান ও ভারতের মতো বাংলাদেশেও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে হইচই শুরু হয়ে গেছে ভাইরাসটি নিয়ে। অনেকে মনে করছে, যথাযথভাবে প্রতিরোধ করা না গেলে এটি করোনার মতোই ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাইরাস নতুন কিছু নয়। এটি অনেক আগেই আমাদের দেশে শনাক্ত হয়েছে। তবে সাবধান থাকতে হবে এটা যেন মহামারি আকারে ছড়িয়ে না পড়ে। কারণ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তা আরও বড় সংকট তৈরি করতে পারে।

ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রশ্নে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগও সতর্ক। ভাইরাসটি নিয়ে নতুন করে গবেষণাও শুরু করেছে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআর। সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগীয় সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

চীনা বিশেষজ্ঞরাও সেখানকার গণমাধ্যমকে বলেছেন, এইচএমপিভি নতুন কোনো হুমকি নয়। চীনা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের গবেষক ঝেং লিশু সাংবাদিকদের বলেছেন, এইচএমপিভি একটি সাধারণ ভাইরাস, যা ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও ভাইরাসটির সংক্রমণ বৃদ্ধির হার কম এবং অস্পষ্ট লক্ষণের কারণে বিজ্ঞানীরা প্রায় দুই দশক আগে প্রথমবারের মতো এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত করতে পেরেছেন।

এই ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা বা টিকা নেই বলে উল্লেখ করেছেন চীনের বিশেষজ্ঞরা। 

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী চীনের বিশেষজ্ঞরাও রোগীর যত্নের ওপর জোর দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্রাম, হালকা খাবার এবং উপযুক্ত পোশাক পরা। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া, পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখা এবং জনাকীর্ণ স্থান এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নতুন আতঙ্ক এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব বেড়েছে চীন, মালয়েশিয়া, ভারতের পাশাপাশি জাপানেও। ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে এরই মধ্যে সেখানে আক্রান্ত হয়েছে অনেকে। প্রতিরোধ করা না গেলে ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাপানের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

দেশটির অনেক বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, ২০২৫ সালে আবার করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হতে পারে। যদিও কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা এখনই দেওয়া সম্ভব নয়।

যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল হেড বলেন, আরও একটি মহামারির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবেÑ তা নিশ্চিত না হওয়ায় আগাম মহামারির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিজিজ এক্স’। হাম, কলেরা, বার্ড-ফ্লু ও স্ক্যাবিসের মতো প্রায় ১১টি রোগকে সম্ভাব্য মহামারির তালিকায় রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে এইচএমপিভির সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে।

চীনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, করোনার সময়ে হাসপাতালে যেভাবে ভিড় তৈরি হয়েছিল, একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবেও। অভিন্ন অবস্থা দেখা যাচ্ছে জাপানেও। 

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) মহামারি ও সংক্রামক ব্যাধি গবেষণা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ বিষয় নিয়ে কাজ করে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন সোমবার (৬ জানুয়ারি) প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এই রোগ নিয়ে সেভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। এটি বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। এখানে ২০১৭ সালে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয়। প্রতিবছরই এ রকম দুয়েকজন রোগীর সন্ধান মেলে। তবে অন্যান্য সংক্রামক বা ভাইরাসজনিত রোগের মতোও এই রোগে যাতে আক্রান্ত না হতে হয়, সে কারণে সতর্কতার বিকল্প নেই।’ 

একই কথা বললেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন।

এই গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার মতে দেশে এটা নতুন কোনো ঢেউ নয়। তবে এটাকে হালকা করে দেখা বা অবহেলা করারও কিছু নেই। চীন, মালয়েশিয়া বা ভারত এটাকে কেন এতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে- সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে রোগটি নতুন না হলেও এটা বাস্তব যে এইচএমপিভি সচরাচর শনাক্ত হয় না। ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-জ্বর, শরীর ব্যথা নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। তাদের ভেতরেও এই ভাইরাস থাকতে পারে। আমি মনে করি, যেহেতু আশপাশে একটা ঢেউ দেখা দিয়েছে, এই মুহূর্তে সরকারি পর্যায়ে এটিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’

ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘এইচএমপিভি একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা ওপরের ও নিচের শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এটি সব বয়সের ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে। তবে শিশু, বয়স্ক ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যারা ডায়াবেটিস অথবা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য ভাইরাসটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।’

আইইডিসিআরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. নওশের আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভাইরাসটি নিয়ে আসলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তারপরও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। অনেকে হয়তো সামান্য জ্বর বা সর্দি-কাশি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তারা যেন দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে, আলাদা থাকতে পারে, সেজন্য সামাজিক সচেতনতা ও সহায়তা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইইডিসিআর এ ব্যাপারে আগের চেয়ে অধিকতর সতর্ক। প্রতিবেশী দেশগুলোতে এইচএমপিভি নতুন করে আলোচনায় আসায় তারাও এই ভাইরাস নিয়ে আরও গবেষণার কথা ভাবছে।’

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে জনসাধারণকে মাস্ক ব্যবহার এবং বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ২০২০ সালের করোনা মহামারির পর এবার চীনে নতুন এক ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে সেখানকার হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসের প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। 

চীনের পর মালয়েশিয়া এবং সবশেষ ভারতেও এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সেসব দেশের জনসাধারণকে মাস্ক ব্যবহার এবং বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। 

কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. জাকিয়া ফেরদৌসী খান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এইচএমপিভির উপসর্গগুলো ফ্লু ও অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মতোই। শীতের মৌসুমে ভাইরাসটি একটু বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছেÑ কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট। গুরুতর ক্ষেত্রে ভাইরাসটি ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।’

তিনি জানান, এইচএমপিভির ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা উন্মেষ পর্ব সাধারণত তিন থেকে ছয় দিন। সংক্রমণের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো বিভিন্ন সময়কাল ধরে স্থায়ী হয়। তবে এইচএমপিভি ভাইরাস বড় কোনো হুমকি নয় এবং বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণের লক্ষণগুলো প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে ধীরে ধীরে কমে যায়।

ডা. জাকিয়া বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইচএমপিভির সংক্রমণ মৃদু হয়। তবে কিছু শিশুর দেহে সংক্রমণের পর নিউমোনিয়া হতে পারে। শিশু, বয়স্ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, দুর্বলতা, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।’

ভারতে দুই রোগী শনাক্ত

ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সোমবার এক প্রতিবেদেন বলেছে, ভারতে প্রথমবারের মতো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে তিন ও আট মাস বয়সি দুই শিশুর দেহে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে।

আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সাম্প্রতিককালে কোনো ভ্রমণের রেকর্ড নেই। দুই শিশুর শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাসের যে স্ট্রেনের সংক্রমণ হয়েছে, সেটির সঙ্গে চীনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের স্ট্রেনের কোনো যোগ রয়েছে কি না- তা এখনও জানা যায়নি। যদিও চীনে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে এইচএমপিভি ভাইরাস সংক্রমণের কোনো সংযোগ নেই বলে দাবি করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কর্ণাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দীনেশ গুন্ডু রাও এ নিয়ে সোমবার দুপুরে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেন। রাজ্যবাসীকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন কর্ণাটকের স্বাস্থ্য সচিব হর্ষ গুপ্তা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা