সরেজমিন ঢামেক ও কুর্মিটোলা হাসপাতাল
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৩ এএম
ছবি: সংগৃহীত
ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে। অনেক জায়গাতেই ভর্তির সুযোগ মিললেও শয্যা মিলছে না। দেখা যাচ্ছে, রোগীরা মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের অনেকেই জানেন না, কীভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেন। অন্য রোগের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারেন, তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
খুলনা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন সুরাইয়া বেগম। প্রথমে প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথা ছিল। কয়েক দিন পর শরীর দুর্বল হতে থাকে। ভালো হয়ে যাবে ভেবে হাসপাতালে যাননি। একসময় অবস্থার অবনতি হলে ডেঙ্গু পরীক্ষা করান স্থানীয় একটি হাসপাতালে গিয়ে। সেখানে ডেঙ্গু ধরা পড়লে ঢাকায় এসে ভর্তি হন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।
শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে সুরাইয়া বেগম, দেরি করে হাসপাতালে গেছি। পরে দেখি ডেঙ্গু হইছে। প্লাটিলেট অনেক কমে গেছে। পা ফেলতে পারি না, শরীর এত দুর্বল হয়ে গেছে। মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় এসে চিকিৎসা নিচ্ছি।
সরেজমিন গতকাল শুক্রবার হাসপাতালটির মহিলা ওয়ার্ডে দেখা যায়, বেশিরভাগই দেরি করে হাসপাতালে এসেছেন। এই হাসপাতালে ৭২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে বরিশালের নুশরাত জাহান (২৭) তিন দিন হলো এই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রথমে পাতলা পায়খানা হয়। তারপর জ্বর আসে। বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। পরে ডাক্তার দেখানো হলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। কিন্তু বাসায় তো সবসময় সতর্ক ছিলাম। তাও ডেঙ্গু হইয়া গেল। দুইটা বাচ্চাকে মায়ের কাছে রেখে আসছি। কবে যে সুস্থ হবো জানি না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা যায়, সেখানে ভর্তি রোগীদের মধ্যে পুরুষ রোগীই বেশি। তাদের একজন আজিমপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান (৩২)। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পাশেই বসে ছিলেন তার স্ত্রী ও ছোট ভাই। স্যালাইন খেতে খেতে তিনি বলেন, বাসায় মশা কামড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাসে সেদিন আসার সময় মশা কামড়াচ্ছিল। আবার অফিসেও কামড় দিতে পারে। আমরা সব সময় মশারি টানিয়ে ঘুমাই। হঠাৎ শরীর খারাপ হয়ে যায়। প্রথমে জ্বর আসে হালকা, শরীরে ব্যথা হয়, বমি হয়। বাসাতেই ছিলাম। কিন্তু বমি হওয়ায় শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। পরীক্ষা করানোর পর দেখি ডেঙ্গু হয়েছে। তারপর প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া শুরু করল।
রিকশাচালক সুমন মিয়া (২৮) পাঁচ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি। হাসপাতালের নতুন ভবনের পাঁচতলায় গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, নিউমোনিয়া হয়েছিল। পরে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এই কয়েক দিন রিকশা চালাইতে পারতেছি না। ইনকাম নাই। এইদিকে আমার শরীরও খারাপ হইতেছে।
নরসিংদীর মো. জামিলের জ্বরের সঙ্গে পেটে ব্যথা হয়। প্রথমে নরসিংদীর সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে প্লাটিলেট কমে গেলে রক্তক্ষরণ দেখা দেয়। যে কারণে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি যে এলাকায় থাকি ওইখানে আমার মতো অনেকেরই ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। সরকারিভাবে ডেঙ্গুর ওষুধ কিছু দিতে দেখি না। আবার অনেকে বোঝেও না ডেঙ্গু কী জিনিস। আমি নিজেও প্রথমে বুঝি নাই।
বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন শামীমা আক্তার। ডেঙ্গু আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, হঠাৎ মেয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। পরে যে বাসায় কাজ করি উনার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসি। এর আগে জ্বর ছিল অল্প। টেস্টের রেজাল্ট দেখে ডাক্তার বলছে, ডেঙ্গু। মেয়ের অবস্থা ভালো না। অনেক ঘুরছি। সিট খালি নাই। সেজন্য নিচেই বিছানা করা লাগছে। প্রতিদিন রোগী আসতেছে। সবারই তো চিকিৎসা করানো লাগবে। কিছু করার নেই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ১১৬ জন রোগী ভর্তি আছে। চাপ সামলাতে অন্য হাসপাতালেও রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অক্টোবরে ১৩৫ থেকে ১৪০ জন রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকত। তবে এখন একটু কমেছে। প্রতিদিন প্রায় ১২০ থেকে ১৩০ জন ডেঙ্গু রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, নভেম্বরে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী কমে আসে। সে তুলনায় এবার অক্টোবরের মতোই আছে। চাপ সামলাতে অনেক রোগীকে আমরা ডিএনসিসি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি। কমপ্লিকেটেডে যারা তাদের আমরা রাখছি। ডেঙ্গু রোগী এখন সারা বছরই থাকে। তবে নভেম্বর থেকে জানুয়ারিতে সাধারণ তেমন রোগী থাকে না। এবার রোগীর প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে।