মেহেদী হাসান শিয়াম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০৭ এএম
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৬ এএম
ছবি : সংগৃহীত
নিমগাছ থেকে মিলছে মিষ্টি রস। স্বাদ অনেকটা খেজুর রসের মতো। সেই রস সংগ্রহ করতে গাছটির তলায় ভিড় করছেন কৌতূহলী মানুষ। গাছটিতে কেউ ঝুলিয়ে রেখেছেন প্লাস্টিকের বয়াম। কেউ ঝুলিয়েছেন পানির বোতল। অনেকে আবার লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন রস সংগ্রহের পাত্র গাছে ঝুলাবেন বলে। নিমগাছের সেই রস হাতে নিয়ে চেটেপুটে খাচ্ছেন মানুষজন। বলছেন, ‘আজব তো! তিতা গাছে মিষ্টি রস।’
এই ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গড়াইপাড়া গ্রামে। সে গ্রামের নাসির আলীর বাড়ির উঠানে রয়েছে এই নিমগাছ। প্রায় দুই দশক আগে গাছটি সেখানে লাগানো হয়। এখন সেই গাছ থেকে মিলছে কি না মিষ্টি রস! অনেকেই রোগবালাই থেকে মুক্তির আশায় এই রস সংগ্রহ করছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে মিষ্টি রস বের হচ্ছে এই নিমগাছ থেকে। প্রথম দিকে বের হতো অল্প। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, ততই পরিমাণে বাড়ছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রামে। তারপর থেকে ভিড় জমছে গড়াইপাড়ার এই বাড়ির উঠানে। উৎসুক জনতা এখন এ গাছের ডাল-পাতা তো নিচ্ছেই, পারলে ছালবাকলও তুলে নেবে, এমন অবস্থা।
গ্রামের মোবারক আলী বললেন, ৬৫ বছরের জীবনে কখনও এমন অদ্ভুত ঘটনা দেখিনি। নিমগাছের সবকিছুই তিতা বলে জানি। কিন্তু এই গাছ থেকে কি না বেরুচ্ছে মিষ্টি রস। আমিও খেয়ে দেখেছি।
চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় দুসপ্তাহ ধরে হঠাৎ করেই নিমগাছটি দিয়ে ফেনাসহ মিষ্টি রস বের হচ্ছে। অনেকেই এ খবর শুনে রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এ গাছের রস নিয়ে যাচ্ছে। অনেক মানুষের বিশ্বাস, এটি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন গাছ।’
কলেজছাত্র ওসমান আলী বলেন, ‘নিমগাছটি থেকে বের হওয়া রসের ঘ্রাণও খেজুরের রসের মতো। এ রস খেলে রোগবালাই থেকে মুক্ত হওয়া যাবে বলে অনেকই তা সংগ্রহ করছেন।’
দূরের এক গ্রাম থেকে আকতারা বেগম গড়াইপাড়ায় এসেছেন শুধু নিমগাছের রস সংগ্রহ করতে। শরীরের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে তিনি রস সংগ্রহ করতে এসেছেন। আকতারা বলেন, ‘ডায়াবেটিসসহ দীর্ঘদিন ধরে মাজা ও পা ব্যথার সমস্যায় ভুগছি। লোকমুখে শুনিছি নিমগাছ দিয়ে মিষ্টি রস বেরুচ্ছে। এই রস খেয়ে রোগবালাই ভালো হচ্ছে।’
নিমগাছটির মালিক নাসির আলী বলেন, ‘বাড়ির উঠানোর এ গাছ স্থানীয় একটি মসজিদে দান করা হয়েছে। এবারই প্রথম নয়, এর আগেও এমন মিষ্টি রস বের হয়েছিল। তবে এবারই এমন সাড়া পড়েছে। মানুষজনের মধ্যে এই রস সংগ্রহ করার হিড়িক পড়েছে।’
এদিকে মাটির গুণাগুণ ও আশপাশের বিভিন্ন পরিবেশের প্রভাবে নিমগাছের রসের স্বাদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক একেএম শফিকুর রহমান বলেন, ‘এমন ঘটনা খুব কম দেখা গেলেও একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। মাটির নিচের গুণাগুণসহ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে এমন হতে পারে। এমন হতে পারে যে, গাছটি দ্রুতই আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে।’ নিম গাছের এই মিষ্টি রস পানের বিশেষ কোনো গুণ বা উপকারিতা নেই বলেও জানান তিনি।