প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩ ১১:২৮ এএম
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৩ ১১:৪৩ এএম
গ্রিক সন্ন্যাসী মিহাইলো টোলোটোস। ছবি : সংগৃহীত
এও কি সম্ভব! একজন জন্মালেন, বড় হলেন, ৮২ বছর পর্যন্ত বাঁচলেন। কিন্তু সারা জীবনে এক মুহূর্তের জন্যও কোনো নারীকে দেখলেন না! হ্যাঁ, সম্ভব।
পৃথিবীতে এমন এক পুরুষ ছিলেন যিনি জীবদ্দশায় কখনও কোনো নারীকে দেখেননি। এমনকি নিজের মাকেও না।
ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম ইউনিল্যাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই ব্যক্তির নাম মিহাইলো টোলোটোস। তিনি ছিলেন গ্রিসের হালকিডিকির বাসিন্দা।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিহাইলো শুধু বন্ধুবান্ধবদের কাছে শুনে এবং বই পড়ে নারীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। কিন্তু কোনো নারীকে সরাসরি দেখেননি।
মনে করা হয়, মিহাইলোর জন্ম ১৮৫৬ সালে। তাকে জন্ম দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তার মা মারা যান। তাই অনাথ হয়ে যান মিহাইলো।
মিহাইলোর মা মারা যাওয়ার পর গ্রিসের মাউন্ট অ্যাথোসের একটি মঠের সন্ন্যাসীরা তাকে দত্তক নেন। সন্ন্যাসীদের মধ্যেই বেড়ে ওঠেন তিনি।
মিহাইলো যে শুধু সন্ন্যাসীদের মধ্যে বড় হয়েছিলেন, তা নয়। ছোটবেলায়ই তিনি সন্ন্যাসীদের আদব-কায়দা রপ্ত করেন। মঠের সন্ন্যাসীদের মতো কঠোর জীবনযাপন করেন ছোটবেলা থেকেই।
মিহাইলো যে মঠে থাকতেন, সেখানে কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলা হতো। তার মধ্যে অন্যতম নিয়ম ছিল, কোনো নারীকে মঠে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়া।
শুধু নারী নয়, গরু, ভেড়াসহ কোনো গবাদি পশুকেও ওই মঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। গ্রিসের ওই মঠের শতাব্দীপ্রাচীন সেই প্রথা আজও বলবৎ রয়েছে।
নারীদের মঠে প্রবেশ করতে না দেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল, সন্ন্যাসীরা সারা জীবন যাতে সঠিকভাবে ব্রত পালন করতে পারেন তা সুনিশ্চিত করা।
তবে মঠের সন্ন্যাসীদের বহির্বিশ্বে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হত। ফলে তারা বাইরে গিয়ে প্রয়োজনে কোনো নারীর সঙ্গেও দেখা করতে পারতেন।
কিন্তু মিহাইলো যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন তিনি কখনওই মাউন্ট অ্যাথোসের ওই মঠের বাইরে যাননি। অবশেষে ১৯৩৮ সালে ৮২ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
মিহাইলোর মৃত্যুর পর মাউন্ট অ্যাথোসের সন্ন্যাসীরা তাকে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে সমাধিস্থ করেছিলেন।
মঠের সন্ন্যাসীরা মনে করতেন, মিহাইলোই বিশ্বের একমাত্র পুরুষ যিনি কখনও কোনো নারীর মুখদর্শন করেননি। তাই সন্ন্যাসীদের মধ্যে তার সম্মান ছিল বেশি।
একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে নাকি এও প্রকাশিত হয়েছিল যে, মিহাইলো কখনও ট্রেন বা বিমানে চড়েননি। এমনকি কোনো সিনেমাও দেখেননি।
১৯৩৮ সালের ২৯ অক্টোবর ‘এডিনবার্গ ডেইলি কুরিয়ার’ সংবাদপত্রে মিহাইলোকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘জীবনে কোনো নারীকে না দেখেই মারা গেলেন গ্রিসের সন্ন্যাসী’-শিরোনামে ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল।
মাউন্ট অ্যাথোসের কোলে ২০টি মঠ রয়েছে। যেগুলোয় বাস করেন প্রায় ২০ হাজার সন্ন্যাসী। ২০টি মঠের মধ্যে ১৭টিতে গ্রিসের সন্ন্যাসীরা বাস করেন। বাকি তিনটিতে বাস করেন সার্বিয়া, বুলগেরিয়া ও রাশিয়ার সন্ন্যাসীরা।
সূত্র : গ্রিক রিপোর্টার