প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২২ ১৬:২৩ পিএম
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:৫০ পিএম
উটের পিঠে চড়ে ছবি তুলছেন পর্যটক। ছবি; সংগৃহীত
কাতারে উটের জকি হিসেবে কাজ করেন শাহীন। তিনি বালির ওপর শুয়ে চোখ বন্ধ করে সামান্য বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পেলেও তার উটের বিশ্রামের সময় নেই। বিশ্বকাপ উপলক্ষে দেশটিতে আসা ১০ লাখেরও বেশি ফুটবলপ্রেমী তাদের এ সফরকে স্মরণীয় রাখতে দোহারের আশপাশে সব জায়গাতেই ভ্রমণ করছে। রাজধানী দোহার বাইরে মরুভূমিতেও চলছে তাদের ঘোরাফেরা। এতে করে বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছে না মরুভূমির জাহাজ নামে খ্যাত প্রাণী উটের।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটকেরা খেলা দেখার পাশাপাশি কিছু নির্দ্দিষ্ট ইচ্ছে পূরণেই এখানে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে- উটের পিঠে চড়া, বাজপাখির সঙ্গে ছবি তোলা এবং ঐতিহ্যবাহী বিপণিবিতানে ঘুরে বেড়ানো।
তাদের হাউস মেটাতে বিশ্রামহীন কাজ করে যাচ্ছে মরুভূমির উটেরা। শুক্রবার বিকালে পতাকা হাতে বা ফুটবল টিমের ইউনিফর্ম পরা শত শত দর্শক উটে পিঠে চড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ফলে বিশ্রামের জন্য শুয়ে থাকা উটগুলোকে টেনে উঠিয়ে দেওয়া হয়।
উটের পিঠে চড়ে ২৮ বছর বয়সী জুয়ান গল বলেন, ‘এটি সত্যিই খুব দারুণ এক অনুভূতি, কারণ এতে (উট) চড়ে আপনি নিজেকে অনেক লম্বা বোধ করবেন।’ জুয়ান আর্জেন্টিনা দলের ভক্ত। যিনি অসাধারণ এ দলের খেলা দেখতে অস্ট্রেলিয়া থেকে এক সপ্তাহের জন্য কাতার এসেছিলেন।
কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের মতো এমন একটি বিশাল উদ্যোগ নেওয়ার জন্য উটের মালিক ও পরিচারকেরাই সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট। কারণ এ আয়োজনের কারণে তারা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি টাকা আয় করতে পারছেন।
৪৯ বছর বয়সী সুদানের এক বেদুঈন উট পালক আলী জাবের আল-আলি বলেন, ‘প্রচুর অর্থ আসছে। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। তবে এতে চাপও বেশি।’
আল-আলি ১৫ বছর আগে কাতারে এসেছিলেন। আল-আলি জানান, তার কোম্পানি উট নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ এবং সপ্তাহান্তে ৫০ বার চক্কর দেয়। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকে তারা সকালে ৫০০ ও সন্ধ্যায় ৫০০ বার চক্কর দিচ্ছে। তার কোম্পানি উটের সংখ্যাও ১৫ থেকে ৬০টি পর্যন্ত বাড়িয়েছে। তিনি জানান, ট্যুর গাইডরা দ্রুত চক্কর শেষ করাতে চান। তাই উটের ওপর চাপ বেড়েছে। এতে করে প্রাণীরাও বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। আল-আলী বলেন, তিনি উটগুলোর মুখ দেখেই বলে দিতে পারেন তারা এখন কেমন বোধ করছে। যখন তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, সাধারণত তখন এরা উঠতে চায় না বা কোনোভাবে উঠে দাঁড়ালেও আবার বসে পড়ে।
আল-আলি বলেন, ‘আমি বেদুঈন একটি পরিবার থেকে এসেছি যারা উটের যত্ন নেয়। আমি তাদের ভালোবেসে বড় হয়েছি।’
কিন্তু হুট করে পর্যটক বেড়ে যাওয়ায় উটেদের বিশ্রামের সময় কমে গেছে। একটি সংক্ষিপ্ত রাইড বা চক্কর দিতে হয় মাত্র ১০ মিনিটে। তবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্তও রাইড চলে। স্বাভাবিকভাবে প্রতি পাঁচটা রাইডের পর উটগুলো বিশ্রাম নিতে পারত। কিন্তু এখন পর্যটকের চাপ বাড়ায় উটগুলোকে বিশ্রাম ছাড়াই ১৫ থেকে ২০টি রাইড, কখনো বা ৪০টির মতো রাইড দিতে হচ্ছে।
আল আলি বলেন, তার দিন শুরু হয় ভোর সাড়ে ৪টায়। সে সময় ঘুম থেকে উঠে তিনি উটগুলোকে খাওয়ান এবং পর্যটকদের বহনের জন্য তৈরি করেন। সূর্যোদয়ের নিখুঁত মুহূর্ত ধরে রাখতে খুব ভোরেই আসতে শুরু করেন পর্যটকেরা। তাদের রাইড দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছবিও তুলে দেন আল-আলি।
একসময় অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের মতো কাতারিবাসীর পরিবহনের একটি অত্যাবশ্যক বাহন ছিল উট। এখন পর্যটকেরা শখ করে উটে চড়ে ভ্রমণ করে থাকেন।