× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পেরিয়ে বন্ধুর পথ

ঐতির ভুবনজোড়া আলো

আবুল হাসান, মোংলা (খুলনা)

প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪ ১১:১৪ এএম

আপডেট : ১৮ মে ২০২৪ ১৩:২৭ পিএম

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঐতি রায় শ্রুতিলিখনের মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রবা ফটো

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঐতি রায় শ্রুতিলিখনের মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রবা ফটো

অন্ধজনের কিবা রাত্রি, কিবা আবার দিন, সুন্দর এই পৃথিবী হায়রে রইল অচিন। পৃথিবী দেখা তার অচিন হলেও সব প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে আলোকিত হওয়ার জন্য যুদ্ধে নেমে জয়ী হয়েছে ঐতি রায় (১৫)। জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী মোংলা উপজেলার হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছে। মা শংকরি রায়ের সহায়তায় পড়াশোনা এবং একই এলাকার অষ্টম শ্রেণির বিজয়া হালদার নামে এক শিক্ষার্থীর সহযোগিতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে ঐতি রায়।

সরেজমিনে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া গ্রামের বালুর মোড় এলাকায় তার বাড়িতে কথা হয় ঐতির বাবা অনুপম রায়ের সঙ্গে। আবেগাপ্লূত হয়ে বলেন, জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন তার মেয়ে এই ফলাফল করবে ভাবতেও পারিনি। ছোটবেলা থেকেই মেয়ে পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিল। আমরা সেভাবেই তাকে যত্ন করে স্কুলে ভর্তি করে পড়াশোনা করাই। একমাত্র মেয়েকে তার মা প্রথমে শ্রুতিলেখনীর মাধ্যমে বাড়িতে পড়াশোনা শেখায়। এভাবে করে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় মেয়ে। পরীক্ষার হলে ঐতি রায় মুখস্থ বলত আর একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিজয়া হালদার তা পরীক্ষার খাতায় লিখত। এভাবে সে সবগুলো পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাস করেছে।

ঐতি রায়ের মা শংকরি রায় বলেন, ছোটবেলা থেকে ঐতির স্কুলে এবং পড়াশোনার আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করবেই। এখন সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে। আমরা প্রচণ্ড খুশি, স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্যতা সত্ত্বেও মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান এই দম্পতি। এজন্য  সরকারের সহযোগিতা চান তারা।

মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, দৃষ্টিহীন ঐতি রায়ের এমন প্রতিভায় অবাক হয়েছি। মেধা না থাকলে এমন ফল করা কোনোভাবেই সম্ভব না। এখন ঐতির চোখের চিকিৎসা জরুরি। এ ছাড়া সে যাতে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পাস করা ঐতি রায় বলে, জন্ম থেকে আমি দৃষ্টিহীন। কিন্তু পড়ালেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল আমার। এমন ইচ্ছে থেকেই আমার এই সফলতা পেয়েছি। পড়াশোনার কাজে আমার মা আমাকে সহযোগিতা না করলে আজ এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। মা পাশে বসে রিডিং পড়ত, আমি সেটা মুখস্থ করতাম। এভাবেই লেখাপড়া চালিয়ে এসেছি। পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরির পাশাপাশি আবৃত্তির শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন ঐতি।

ঐতি রায়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ঐতির বাবা অনুপম রায় এবং আমি ছোটবেলার বন্ধু। সে তার দৃষ্টিহীন মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। আমি তাকে বলি আমার স্কুলে দাও, বাকিটা আমি দেখব। এরপর ঐতিকে যত্ন করে ক্লাসে পড়াশোনা করাই। সে ক্লাসে অত্যন্ত মেধাবী ছিল। আজ ঐতি এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পাস করে আমার এবং স্কুলের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তার এই রেজাল্টে দারুণ খুশি। দোয়া করি ঐতি তার মেধা বিকাশিত করে অনেক বড় হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা