পেরিয়ে বন্ধুর পথ
মহসিন আলী, বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪ ১১:০৯ এএম
আপডেট : ১৮ মে ২০২৪ ১৩:২৬ পিএম
সড়ক দুর্ঘটনায় এক পা হারায় মিফতাহুল জান্নাত। অদম্য মনোবল আর ইচ্ছাশক্তিতে বলিয়ান হয়ে চলতি বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ লাভ করে। প্রবা ফটো
সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা হারিয়েছিলেন
মিফতাহুল জান্নাত। এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এক
পায়ের ওপর ভর করে ধীরে ধীরে বড় হয়েছে সে। চালিয়ে গেছে লেখাপড়া। যশোরের শার্শা উপজেলার
বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল সে।
মিফতাহুল জান্নাত শার্শা উপজেলার
দক্ষিণ বুরুজবাগান গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। জান্নাত বলেন, জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমি
খুশি। আমার স্বপ্ন, ডাক্তার হতে চাই। যত কষ্টই হোক ভালো করে লেখাপড়া করে আমি ডাক্তার
হব।
২০১৯ সালের ২০ মার্চ ইঞ্জিনচালিত
ভ্যানে করে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল জান্নাত। বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে উল্টোদিক থেকে আসা বিদ্যুৎ বিভাগের একটি পিকআপ
ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে সে মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। এ সময় চালক পিকআপটি তার শরীরের
ওপর দিয়ে চালিয়ে দেন। এতে তার ডান পা ও ডান হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাকে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট
জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে বাদ দেন।
জান্নাতের বাবা রফিকুল ইসলাম উপজেলার
নাভারণে একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। দুর্ঘটনার পর তিনি জমি বিক্রি করে
উন্নত চিকিৎসার জন্য মেয়েকে নিয়ে ভারতের ভেলোরে যান। সেখানে ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে (সিএমসি) তার কৃত্রিম পা লাগানো হয়। রফিকুলের প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা ব্যয়
হয়। এতে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েন। মেয়েকে নিয়ে ভারতে দীর্ঘদিন থাকায় প্রি-ক্যাডেটের চাকরি
চলে যায় রফিকুলের। পরবর্তীতে বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
মেয়েকে দেখাশোনার পাশাপাশি মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকা বেতনে রফিকুলকে ওই বিদ্যালয়ে
অস্থায়ীভাবে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
রফিকুলের সম্পদ বলতে সাড়ে চার শতক
জমি। এই জমির ওপর তিন কক্ষের একটি দালান। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তার সংসার। মিফতাহুল
জান্নাত বড়। ছেলে মুন্তাকিম রাফি (৮) উপজেলার নাভারণ রেলবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। বিদ্যালয়ের বেতন এবং বাড়িতে টিউশনি করে তার মাসে ১০ হাজার টাকার
মতো আয় হয়। এই আয় দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করান তিনি।
জান্নাতের বাবা রফিকুল বলেন, মিফতাহুল
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায়
জিপিএ-৫ পেয়েছিল। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল। এসএসসি
পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতে আমি খুশি। ওর কষ্টটা আমি বুঝি। আমার খুব সামান্য আয়।
তা-ই দিয়ে ওকে আমি লেখাপড়া করিয়ে যাচ্ছি। জান্নাত ডাক্তার হতে চায়। যত কষ্টই হোক আমি
তাকে শেষ পর্যন্ত পড়িয়ে যাব।
বুরুজবাগান পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান বলেন, মিফতাহুল জান্নাত মেধাবী ছাত্রী। এসএসসি পরীক্ষায় সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দুর্ঘটনায় এক পা হারালেও সে মনোবল হারায়নি। এক পায়ের ওপর ভর করে ধীরে ধীরে বড় হয়েছে সে। চালিয়ে গেছে লেখাপড়া। জান্নাত গরিব পরিবারের মেয়ে। আর্থিক সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে সে লেখাপড়ায় আরও অনেক ভালো করবে।