পেরিয়ে বন্ধুর পথ
শফিকুল ভূঁইয়া, সরিষাবাড়ী (জামালপুর)
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪ ১০:৪৫ এএম
আপডেট : ১৮ মে ২০২৪ ১৩:২০ পিএম
জন্ম থেকেই দুই হাত নেই সিয়ামের। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি। পা দিয়ে লিখেই এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ-৩.৮৩। প্রবা ফটো
সিয়ামের জন্ম থেকেই দুই হাত নেই।
পা দিয়েই সে সব কাজকর্ম করে থাকে। তার অদম্য ইচ্ছা সে পড়ালেখা করে সরকারি চাকরি করবে।
অদম্য সিয়াম অভাব, দারিদ্র্য ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে ইচ্ছা আর মনোবল
নিয়েই এগোতে চায়। তার মনে নেই বিন্দুমাত্র কোনো হতাশার ছাপ।
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সে পা দিয়ে লিখেই সফলভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছে সিয়াম। উপজেলার চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় সিয়াম। সব বিষয়ে সে সাফল্যের সঙ্গে ভালো নম্বর পেয়ে পাস করে পেয়েছে জিপিএ-৩.৮৩। এ ফলাফলে খুশি তার বাবা-মা ও শিক্ষকরা।
বিদ্যালয় ও পরিবার সূত্রে জানা
গেছে, উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামের দিনমজুর দম্পতি জিন্নাহ মিয়া ও জোসনা
বেগমের ছেলে সিয়াম। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে সিয়াম ছোট। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত নেই।
কিন্তু থেমে নেই তার পড়ালেখা ও খেলাধুলা। তবে পরিবারের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রাথমিকের
মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় তার পড়ালেখা। বিদ্যালয় থেকে বেতন মওকুফ করলে পুনরায় পড়ালেখা শুরু
করে সিয়াম। ২০১৮ সালে ব্র্যাক শিশুনিকেতন স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে একই ইউনিয়নের
চাপারকোনা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। এরপর কৃতিত্বের সঙ্গে জেএসসি
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সিয়াম। সে এবার ডোয়াইল ইউনিয়নের চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়
থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেছে সিয়াম।
সিয়াম বলেন, জন্ম থেকেই আমার দুই
হাত নেই। পা দিয়ে লিখেই প্রাথমিক ও জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। এবার এসএসসি
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। বড় হয়ে আমি জেলার প্রধান কর্মকর্তা হতে চাই। সাধারণ মানুষের
জন্য কাজ করতে চাই।
সিয়ামের মা জোসনা বেগম বলেন, ‘লেখাপড়ার জন্য সিয়ামকে কখনও বলতে হয় না। নিজের ইচ্ছায় সব সময় পড়ালেখা
করে। অভাবের সংসারে ছেলেকে কীভাবে কলেজে পড়াব, সেটাই এখন বড় চিন্তা।’
চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় অ্যাণ্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আলীমুর রাজি শিবলু বলেন, পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে সিয়াম। অতীতেও আমরা সহযোগিতা করেছি, আগামীতেও করব। একাদশ শ্রেণিতে এই কলেজেই সে যদি ভর্তি হয়, তাহলে সকল বেতন মওকুফ করে দেওয়া হবে। আমরা চাই, সে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে বড় কিছু হোক।