× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্বাদ অর্থ ঐতিহ্যে : রাজশাহীর মিষ্টিপান

রাজু আহমেদ

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১৪:১০ পিএম

আপডেট : ০৪ মে ২০২৪ ১৭:৫৮ পিএম

৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে পান চাষ হয়ে আসছে রাজশাহী জেলায়। বর্তমানে বছরে এখানে উৎপাদিত হয় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার পান। পবা উপজেলার পানের বরজের যত্ন নিচ্ছেন এক কৃষক। ছবি : লেখক

৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে পান চাষ হয়ে আসছে রাজশাহী জেলায়। বর্তমানে বছরে এখানে উৎপাদিত হয় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার পান। পবা উপজেলার পানের বরজের যত্ন নিচ্ছেন এক কৃষক। ছবি : লেখক

সম্প্রতি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে রাজশাহীতে উৎপাদিত ‘মিষ্টিপান’। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বছরে এ জেলায় উৎপাদিত পানের বাজারমূল্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা; যা এ অঞ্চলের আমের বাজারের চেয়েও বড়।  রাজশাহীর মিষ্টিপানের নানা দিক নিয়ে আজকের আয়োজন। লিখেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রাজু আহমেদ-

রাজশাহীর মাটি ও জলবায়ু পান চাষের উপযোগী হওয়ায় এ অঞ্চলে তামলি জমিদারের উত্থান ঘটে। তামলি জমিদারের ইতিহাস ৫০০ বছরের বেশি পুরোনো। সে অর্থে রাজশাহীর অর্থনীতির সঙ্গে পান বহু যুগ ধরেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মুঘল আমলে পান ব্যবসায়ীরা পানের পাশাপাশি ভেষজ ওষুধের ব্যবসা করতেন। সে সময় তারা ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশে রাজশাহীর সুস্বাদু পান পাঠাতেন। 

এখনও দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজারে দিন দিন বাড়ছে রাজশাহীর পানের চাহিদা। ফলে স্থানীয় কৃষক পান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ ভেষজগুণ থাকায় ওষুধশিল্পে ব্যবহার হচ্ছে পান। ঝুঁকি কম এবং লাভজনক হওয়ায় রাজশাহীর কৃষি অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে পান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

মানভেদে ২ হাজার ৪৮ পিস বা ১ পোয়া পানের বর্তমান বাজারমূল্য ৫-৬ হাজার টাকা। চলতি বছরে বাজারে পানের যে দর তা নিকট অতীতে কৃষক দেখেনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে রাজশাহীতে আমের চেয়েও পান চাষ লাভজনক বলে জানিয়েছে কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় প্রতি বছর আড়াই হাজার কোটি টাকার পানের ব্যবসা হচ্ছে। পান এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থকরী ফসল। স্থানীয় কৃষক পানকে ‘সোনার পাতা’ বলে। পানকে বলা হয় ‘ক্যাশ ক্রপ’ (অর্থকরী ফসল)। আর কৃষকের কাছে পানের বরজ হলো ব্যাংকের মতো। যখন প্রয়োজন হয় তারা বরজ থেকে পান তুলে সরাসরি বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে।

রাজশাহীতে প্রধানত মিষ্টি পান, সাচি পান ও দুধস্বর জাতের পান চাষ হয়। একটা সময় রাজশাহীর পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলায় পানের চাষ সীমাবদ্ধ থাকলেও চাহিদা ও মুনাফা বেশি হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহীর ৯টি উপজেলাতেই পান চাষের বিস্তার ঘটেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক তথ্যে দেখা গেছে, গত এক যুগে প্রায় ২ হাজার ৫৬৪ হেক্টর জমিতে পান চাষের পরিধি বেড়েছে। আর এ সময়ের মধ্যে পানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণের বেশি।

রাজশাহী জেলায় একক পানের হাটের মধ্যে মোহনপুর উপজেলার একদিলতলা হাট, বাগমারা উপজেলার মচমইল পানের হাট, দুর্গাপুর উপজেলার দাওকান্দি ও পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর পানের হাট অন্যতম। এসব হাট সপ্তাহে দুই দিন বসে। শুধু একদিলতলা হাটেই সপ্তাহে প্রায় আড়াই কোটি টাকার পান বিক্রি হয়। এসব পানের অধিকাংশই ঢাকায় যায়। সেখান থেকে যায় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, রাজশাহীর হাটগুলো থেকে পান সরাসরি বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করা গেলে বা আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রেতারা এখান থেকে পান নিলে কৃষক উপকৃত হতো। 

মোহনপুর উপজেলার পান চাষি জসিম, বাবু, বাগমারা উপজেলার সাইফুল ইসলাম, করিমসহ অন্য কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পানকে সোনার পাতার সঙ্গে তুলনা করা হয়। অন্যান্য কৃষিফসলের তুলনায় পান চাষে লাভের পরিমাণ বেশি। বর্ষা মৌসুমে শুধু মড়ক লাগার একটু ভয় থাকে। প্রতি বিঘা পানের বরজে বেড়া, ছাউনি, শ্রমিক, পানের লতা এসবসহ এক থেকে দেড় লাখ টাকা প্রাথমিকভাবে খরচ হয়। পরের বছর থেকে খরচ খুবই সামান্য হয়। সাধারণত একটি পানের বরজ তৈরির পর মাটির আইল, বেড়া, ছাউনি সংস্কার ছাড়া ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত এক পানের বরজ দিয়েই কাজ চলে। বৈশাখ থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত পানের ভরা মৌসুম। ভাদ্র থেকে মাঘ পর্যন্ত পানের উৎপাদন কম হয়। ফাল্গুনে বাড়ন্ত লতি নিচে নামিয়ে দিতে হয়। ফলে এ সময় পানের উৎপাদন হয় না বললেই চলে।

পান চাষি জসিম জানান, ভালো পান হলে ১০ কাঠার বরজ থেকে বছরে পান বিক্রি করে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। অন্য সব পণ্য কেজি বা লিটারে বিক্রি হলেও পান বিক্রি হয় বিড়া, খাচি বা গাদি হিসেবে। ৬৪ পানে ১ বিড়া, ১৫ বিড়ায় ১ খাচি এবং ৫০ বিড়ায় ১ গাদি।

বাগমারার পানের পাইকার জমসেদ ও মোহনপুরের আলাউদ্দিন জানান, রাজশাহীর মিষ্টি পান সারা দেশ এমনকি বিদেশেও সমাদৃত। রাজশাহীতে উৎপাদিত পান ঢাকা, ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, নীলফামারী পাঠানো হয়। এ ছাড়া অনেক সময় ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদেশেও পান রপ্তানি করি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, হিসাবের সুবিধার্থে কেজিতে পানের দাম নির্ধারণের পদ্ধতি বের করা হয়েছে। দেখা গেছে, একটি পানের ওজন গড়ে ৫ গ্রাম। সে হিসেবে ৩২ বিড়া পানের ওজন ১০ কেজি। আর ১০ কেজি পানের দাম গড়ে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। সে হিসেবে মানভেদে ১ কেজি পানের দাম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। ১ হাজার কেজি বা ১ টন পানের দাম ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, পান চাষে ঝুঁকি ও রোগবালাই কম থাকায় জমি ফাঁকা না রেখে পান চাষ করতে কৃষককে মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এ জেলায় পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিটি হাটে সপ্তাহে প্রায় ২ কোটি টাকার পান বেচাকেনা হয়। গেল তিন বছরে জেলায় উৎপাদিত পান বিক্রি করে প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছে। তবে চলতি বছর এ আয় আরও বাড়বে। বাজারে পানের দাম ঠিক থাকলে এ বছরও একই পরিমাণ ব্যবসা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, রাজশাহীর মিষ্টি পান সারা দেশের পাশাপাশি বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে। রাজশাহীতে উৎপাদিত পান প্রতি বছর দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকায় বিক্রি হয়। রেশম ও আমের পাশাপাশি পানও অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা