× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নিসর্গে প্রার্থনার ডাক

সুমন্ত গুপ্ত

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:১৫ পিএম

দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ। ছবি : লেখক

দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ। ছবি : লেখক

টিকটিক করে ঘড়ির কাঁটা চলছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। মহাকাল তার পাতা থেকে বিদায় দিচ্ছে এক একটি প্রহর। আর আমরা সেই প্রহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছি নতুন গন্তব্য পানে। আমার সঙ্গে আছেন আমার ভাই সব্যসাচী গুপ্ত আর সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রণব স্যার। বন্ধের দিন তাই আলসেমিতে দিন কাটাই। আমরা এগিয়ে চলছি চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের পানে। সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। তবে আমরা যাচ্ছি পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ দেখতে। পথপ্রদর্শক হিসেবে আছেন প্রণব স্যার। মহাসড়কে বেপরোয়া বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধীরগতিতে চলছি এগিয়ে। সূর্যদেবের প্রভা বেশ তির্যকভাবে পড়েছে মহাসড়কে।

লালাবাজার, তাজপুর, শেরপুর পাড়ি দিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। প্রায় ১২০ মিনিট ধরে আমরা পথে আছি। এবার বিরতি নেওয়ার পালা। কোথায় দাঁড়িয়ে পেটপূজা শেষ করে নেওয়া যায়। স্যার প্রস্তাব দিলেন চলুন পানসিতে পেটপূজা সেরে নিই। স্যারের কথায় সবাই সায় দিল। যেই বলা সেই আমাদের পাইলট মশাই আমাদের চার চাকার যান পানসিতে নিয়ে অবতরণ করলেন। লোকে লোকারণ্য বসার কোনো জায়গা নেই। নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছু সময়। স্বল্প সময়ের মাঝে আমরা বসার আসন পেলাম। খাবারের অর্ডার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মাঝে খাবার পরিবেশন করা হলো। সাদা রুটি, সবজি, ডিম পোচ, পুডিং সবগুলো আইটেম বেশ মুখরোচক। আমরা তৃপ্তিসহকারে খেয়ে বের হয়ে পড়লাম গন্তব্য পানে। দেখতে দেখতে আমরা এসে পৌঁছলাম গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের সামনে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলাম। অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আমরা এসে পৌঁছলাম জান্নাতুল ফেরদৌসের সদর দরজায়। প্রবেশদ্বার পেরিয়ে আমাদের প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হলো। নাম অন্তর্ভুক্তির পর আমরা এগিয়ে গেলাম সম্মুখ পানে। শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ, নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা পেলাম সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ দেখতে দারুণ। শতাধিক সিঁড়ি। এবারে আমাদের অনুরোধ করা হলো নগ্ন পায়ে সিঁড়ি বেয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা নগ্ন পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম। চারদিকে সবুজ পাহাড়ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে আবার সারি সারি চা বাগান। আমরা গুনে গুনে ১৫০ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম মসজিদে। প্রণব স্যার বললেন, জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্‌ মোজাম্মেল হক (রহ.)। ‘মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান। প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে দেখা পেলাম নানা রকমের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান। সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদ ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না-জানা পাখিদের কিচিরমিচির এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরি করেছে। দেখা পেলাম ওই এলাকার বাসিন্দা রইস সাহেবের সঙ্গে। তিনি বললেন, খাজা শাহ্‌ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে। দর্শনীয় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ্‌ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এই খাজা শাহ্‌ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ.) উত্তরসূরি। মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্টহাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এখানে আছে একটা হেলিপ্যাডও। গেস্টহাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল।

তা ছাড়া মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে ঘুরে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদ ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ওরস মাহফিলের। আমরা ঘুরে দেখতে লাগলাম মসজিদের চারপাশ। এক অন্যরকম অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না।

কীভাবে যাবেন

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা