× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ইতিহাসের অবিস্মরণীয় লালবাগ দুর্গ

নাজমুল করিম ফারুক

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:০৯ পিএম

লালবাগ কেল্লা। ছবি : লেখক

লালবাগ কেল্লা। ছবি : লেখক

ঢাকা শহরের যতগুলো বিনোদন স্থান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম এবং ইতিহাসের অবিস্মরণীয় নাম লালবাগ কেল্লা। মুঘল আমলে বাংলার ঐশ্বর্য আর সমৃদ্ধির পরিচায়ক লালবাগ দুর্গ ৩০০ বছরের ইতিহাসলালিত। অনেক কিছু নষ্ট ও ক্ষয় হয়ে যাওয়ার পরও লালবাগ দুর্গের অবশিষ্ট অংশটুকু সৌন্দর্য আর স্থাপত্য কৌশলে অনুপম। সেজন্যই ঐতিহাসিক দুর্গ লালবাগ কেল্লা।

সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র, মুঘল রাজপুত্র আজম শাহ বাংলার সুবেদার থাকাকালীন ১৬৭৮ সালে এটার নির্মাণকাজ শুরু করেন। তিনি বাংলায় ১৫ মাস ছিলেন। দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য পিতা সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। এ সময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়। সুবেদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে পুনরায় বাংলার সুবেদার হিসেবে ঢাকায় এসে দুর্গের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন। ১৬৮৪ সালে এখানে শায়েস্তা খাঁর কন্যা ইরান দুখত রাহমাত বানুর (পরী বিবি) মৃত্যু ঘটে। কন্যার মৃত্যুর পর শায়েস্তা খাঁ এ দুর্গটিকে অপয়া মনে করেন এবং ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে অসমাপ্ত অবস্থায় এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।


লালবাগ কেল্লার তিনটি প্রধান স্থাপনার একটি হলো পরী বিবির সমাধি। শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ত্যাগ করার পর এটি এর জনপ্রিয়তা হারায়। ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়েছিল; এটিই ছিল প্রধান কারণ। রাজকীয় মুঘল আমল সমাপ্ত হওয়ার পর দুর্গটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে যায়। ১৮৪৪ সালে এলাকাটি ‘আওরঙ্গবাদ’ নাম বদলে ‘লালবাগ’ নাম পায় এবং দুর্গটি পরিণত হয় লালবাগ দুর্গে।

দুর্গের ভেতর হাম্মামখানাসহ একটি সুরম্য দ্বিতল দরবার হল, একটি সমাধিসৌধ, তিন গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ ও একটি পুকুর রয়েছে। তিনটি সুদৃশ্য তোরণ ছাড়াও দক্ষিণ এবং পশ্চিমের দুর্গ প্রাচীর নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর একটি করে পলকাটা তোপমঞ্চ রয়েছে।

দুর্গের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপত্য নিদর্শন দক্ষিণ তোরণ। ত্রিতল এই তোরণটির সম্মুখভাগের সুউচ্চ দুই দিক দুটি সরু মিনার দ্বারা সুশোভিত। দক্ষিণ তোরণের পশ্চিম পাশে প্রায় ১০০ ফুট দীর্ঘ আয়তাকার একটি ছাদহীন কক্ষ রয়েছে। দক্ষিণ প্রাচীরকে পেছনে রেখে তৈরি এই কক্ষের সম্মুখভাগে ছয়টি উন্মুক্ত দরজা রয়েছে। দক্ষিণ তোরণ থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ ও সেখান থেকে উত্তরে ৪৫০ ফুট পর্যন্ত দুর্গ প্রাচীর রয়েছে। দক্ষিণ প্রাচীরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি হলো কামান বসানোর জন্য নির্মিত প্রায় অষ্টকোনাকৃতি ৫টি বুরুজ। এই দুর্গ প্রাচীরে পরী বিবির সমাধি বরাবর দক্ষিণে একটি আয়তাকার কক্ষ রয়েছে। প্রবেশদ্বারহীন এই কক্ষটি আসলে একটি বৃহৎ চৌবাচ্চার তলদেশ। এটি একটি অন্ধ প্রকোষ্ঠের ওপর নির্মিত।


চোখ বুলালেই দেখা যাবে লালবাগ মসজিদ। মসজিদের চার কোণের চারটি অষ্টকোনী মিনারের ওপরের অংশ ইট-সুরকিতে তৈরি নিরেট ছোট গম্বুজ দ্বারা সুশোভিত। বাংলাদেশের মধ্যে পরী বিবির সমাধিই একমাত্র স্থাপত্যকীর্তি, যেখানে মার্বেলপাথর, কষ্টিপাথর এবং বিভিন্ন রঙের ফুল-পাতা শোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে এর অভ্যন্তরভাগ অলংকৃত করা হয়েছে। দক্ষিণ ও উত্তর তোরণের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ২৩৫ ফুট বর্গাকৃতি একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরের ১৩০ ফুট পশ্চিমেই রয়েছে দ্বিতল দরবার হল। ১৭০০ শতাব্দীর শেষের দিকে এই সুরম্য দ্বিতল ভবনটি বাংলার সুবেদারদের বাসভবন হিসেবে নির্মিত হয়।


দরবার হলের স্বল্প পরিসরের মধ্যেই একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। কক্ষের ভেতরে যেসব প্যানেল এবং কুলুঙ্গি রয়েছে, এগুলোর আসল বৈশিষ্ট্যের কোনোরূপ পরিবর্তন না করে এগুলোকেই প্রদর্শনী আধার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রদর্শিত দ্রব্যাদির মধ্যে মাত্র দুটি জিনিস লালবাগ দুর্গের ইতিহাসের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এর একটি হচ্ছে পরী বিবির সমাধির আলগা অবস্থায় প্রাপ্ত কালোপাথরে উৎকীর্ণ লিপি ও আজম শাহের একটি প্রতিকৃতি। বাকি জিনিসগুলো লালবাগ দুর্গের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও মুঘল আমলের দীর্ঘ ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। এই প্রত্নগুলোর মধ্যে রয়েছে মুঘল আমলের অস্ত্রশস্ত্র, পাণ্ডুলিপি, মুদ্রা, মৃৎশিল্প, কার্পেট, ক্ষুদ্রাকার চিত্র, হস্তলিপি, শিলালিপি ও রাজকীয় ফরমান ইত্যাদি। শনিবার ও সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত হয়তো আপনার জন্যই দুর্গ খোলা থাকে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা