× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চেনা মেঘালয়ের অচেনা পথ

শূন্য সাগর

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:০৪ পিএম

আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:১৭ পিএম

পাহাড়ের বুক চিরে অঝোরধারায় নামছে ঝরনা। ছবি : লেখক

পাহাড়ের বুক চিরে অঝোরধারায় নামছে ঝরনা। ছবি : লেখক

চতুর্দিকে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘ। মেঘের চাদর সরিয়ে কখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তো কখনও উঁকি দিচ্ছে সূর্য। পাহাড়ের বুক চিরে অঝোরধারায় নামছে ঝরনা। মেঘালয়ের অফট্ৱেকে এমন কিছু ঝরনা ও ট্রেকিং রুট নিয়ে লিখেছেন অভিযাত্রী শূন্য সাগর-

অগণিত ঝরনা আছে মেঘালয়ের পাহাড়ি ভাঁজে ভাঁজে। অনেকেই সিলেটে বা সুনামগঞ্জে ঘুরতে গিয়ে আফসোস করেন এই ঝরনা দেখে। পাগল ঝরনাপ্রেমীদের জন্য আমাদের এই মেঘালয়ে অফট্রেইল ঝরনা ট্রিপ, যেখানে আমরা এমন কিছু ঝরনা দেখব যেগুলো সচরাচর আমরা দেখতে যাই না। দূরে ভিউপয়েন্ট থেকে দেখার থেকে এই ট্রিপ হবে প্রতিটি ঝরনা উপভোগের চেষ্টা। চেষ্টার অংশ হিসেবে আমাদের ৭ পার্টের ট্রিপ প্ল্যানের পঞ্চম পার্টে আমরা যাচ্ছি ইস্ট খাসি হিলস ও জইন্তা হিলসের অফবিট ঝরনা উপভোগ করতে। এ ছাড়াও থাকছে ব্যাম্বু ট্রেকের রোমাঞ্চকর অভিযান।

ট্রেকিং শুরু হয় মেঘালয়ের পাইনুরসাল্লা মহকুমার খাসি গ্রাম ওয়াহখেন থেকে। শিলং থেকে ডাউকির পথে যেতে পড়ে এই গ্রাম।

নোহকালিকাই জলপ্রপাত

নোহকালিকাই জলপ্রপাত ভারতের মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলায় অবস্থিত। ৩৪০ মিটার বা ১১১৫ ফুট উঁচু থেকে সশব্দে আছড়ে পড়ে। ভারতের সবচেয়ে উঁচু জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে একটি। স্থানীয় খাসি ভাষায় ‘নোহকালিকাই’ নামের অর্থ ‘কালিকাইয়ের লাফ’।

চতুর্দিকে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘ। মেঘের চাদর সরিয়ে কখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তো কখনও সামান্য উঁকি দিচ্ছে সূর্য। পাহাড়ের বুক চিরে অঝোরধারায় নামছে ঝরনা। ইস্ট খাসি হিলের রংযাইরতেহ গ্রামের নোহকালিকাই ঝরনার অপরূপ দৃশ্য দেখতে ভিড় জমান বহু পর্যটক। স্থানীয়দের দাবি, শুধু সৌন্দর্যই নয়, নোহকালিকাই ঝরনার নামকরণের নেপথ্যে রয়েছে যন্ত্রণার কাহিনী। সেই কাহিনী শুনে আনন্দের মাঝেও চোখে জল আসে পর্যটকদের। খাসিদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। বিয়ের পর সাধারণত স্বামী ঘরকন্না করতে চলে আসেন স্ত্রীর বাড়ি। অর্থ উপার্জনের দিকটি মূলত সামলান মহিলারা। বাড়ির কাজ দেখভাল করেন স্বামী। সমাজের নিয়ম মেনে বেশ সুষ্ঠু জীবন চলছিল রংযাইরতেহ গ্রামের বাসিন্দা লিকাইয়ের। তবে বেশি দিন সুখ স্থায়ী হলো কই? মাত্র ১৯ বছর বয়সে স্বামীহারা হলেন লিকাই। এক সন্তানকে নিয়ে শুরু হলো বৈধব্য যাপন। জঙ্গলে কাঠ বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করেই মা-মেয়ের সংসার চালান লিকাই। ইতোমধ্যেই এক যুবকের মনে দাগ কাটলেন লিকাই। কিন্তু মেয়ে থাকায় দ্বিতীয়বার আর ঘর বাঁধতে রাজি হননি একলা মা। তবে ওই যুবকের অসীম ধৈর্য। ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য যেন সবকিছুই করতে পারেন তিনি। তাইতো লিকাইয়ের চোখে আবারও সাজানো সংসার গড়ে তোলার স্বপ্ন বুনতে লাগলেন ওই যুবক। বেশ কয়েক দিন পর রাজি হয়ে যান লিকাই। আবারও বিয়ে করলেন তিনি। সামাজিক রীতি অনুযায়ী লিকাইয়ের বাড়িতে এসে সংসার করতে শুরু করলেন যুবক।


দিনে লিকাই কাজ করেন আর মেয়েকে সামলান ওই যুবক। রাতে বাড়ি ফিরে মেয়েকে নিয়ে সময় কাটতে থাকে লিকাইয়ের। প্রথম কয়েক দিন বেশ ভালোই লাগছিল তার। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রীকে একা চেয়েও পাশে পাননি যুবক। তবে তার জন্য লিকাইয়ের মেয়েকে দায়ী করতেন তিনি। রীতিমতো আক্রোশ তৈরি হয়ে যায়। লিকাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেই এক রত্তিকে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করতেন যুবক। যদিও তা ঘুণাক্ষরে টের পাননি লিকাই। এক দিন কাজ সেরে বাড়ি ফিরে মেয়েকে দেখতে পাননি তরুণী। হাজার খোঁজখবর করতে করতেই দিব্যি মাংস দিয়ে ভাতও খেয়ে ফেলেন লিকাই। এরপর পান সাজাতে বসেন। কিন্তু ওই কাজ করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ লিকাইয়ের। দেখছেন পানের বাটা থেকে বেরোচ্ছে কাটা আঙুল। মায়ের মনে ক্যু ডেকে ওঠে। এ আঙুল যে মেয়ের ছাড়া কারও নয়, তা বুঝতে এক মুহূর্তই যথেষ্ট।


ইতোমধ্যেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন লিকাইয়ের দ্বিতীয় স্বামী। পাহাড়ের কোল থেকে তাকে টেনে বের করে আনেন গ্রামবাসীরা। নিজে মুখে লিকাইয়ের স্বামী স্বীকার করে কেবলমাত্র আক্রোশের বশেই মেয়েকে খুন করে তিনি হাড় ফেলে দেন ওই ঝরনায়। মেয়ের মাংসই মাকে রান্না করে খাওয়ান তিনি। তবে এত কিছুর মাঝে আঙুলটি ফেলতে ভুলে যায়। তাই খুনের কথা টের পেয়েছে লিকাই। এ কথা শুনে শোকে পাথর হয়ে যান সন্তানহারা মা। কারও কথা না শুনে দৌড়ে যান ঝরনার কাছে। সেখানেই ঝাঁপ দেন তিনি। আর কেউই লিকাইকে খুঁজে পাননি। তারপর থেকে লিকাইয়ের নাম অনুযায়ী ওই ঝরনার নাম হয়েছে নোহকালিকাই। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ঝরনার জলেই যেন অমরত্ব লাভ করেছেন লিকাই।

সুইট জলপ্রপাত

হ্যাপি ভ্যালি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শিলংয়ের এই সুইট জলপ্রপাতটির উচ্চতা প্রায় ৯৬ মিটার। এই জলপ্রপাতটি একদিকে যেমন ‘সর্বাধিক সুন্দর’, অন্যদিকে তেমনই ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক’ হিসেবে বিখ্যাত।


বর্তমানে এই জলপ্রপাতটির প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং নির্মাণকার্য দুর্বল হওয়ায় পর্যটকদের এই জলপ্রপাতের কাছে যাওয়া নিষিদ্ধ। জলপ্রপাতের আশপাশে খেজুরগাছ দ্বারা পরিপূর্ণ। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির গাছ যেমনÑ ইউটিপোরিয়াম, ল্যান্টানা, রুবাস, ফার্ন, ওসমান্ডাস্ট্রাম, দারুচিনি এবং ফেজোপটারিস দেখতে পাওয়া যায়।

স্থানীয় মানুষেরাই এই জলপ্রপাতটিকে ভয়ংকর বিপজ্জনক জলপ্রপাত বলে চিহ্নিত করেছে। শোনা যায়, এই জলপ্রপাতটি দেখতে যদি কেউ বিজোড় সংখ্যায় যায় তাহলে তারা নাকি জোড় সংখ্যায় ফিরে আসে। তবে এই জলপ্রপাতে বহু আত্মহত্যা এবং অসংখ্য মৃত্যুর গল্প রয়েছে


মেঘালয়ে ব্যাম্বু ট্রেক

কখনও কুয়াশামাখা, কখনও ঝুপ করে বৃষ্টি। কখনও ঝলমলে রোদে গা পুড়িয়ে পাহাড়ি পথে হেঁটে যাওয়া। চড়াই-উতরাইয়ে ক্লান্ত হলে ফ্লাস্কে রাখা কফি বা চায়ে চুমুক। পাহাড়ের ঢালে পাশে পড়ে থাকা বড় পাথরের ওপর একটু বিশ্রাম। ট্রেক মানেই নিজেকে অন্যভাবে খুঁজে পাওয়া। অনেকটা ঠিক ভিড়ের মাঝে একলা হয়ে যাওয়া। যারা ট্রেক করতে ভালোবাসেন, তারা এ কথার সঙ্গে একেবারেই সহমত পোষণ করবেন। কারণ ট্রেকের নেশা এমনই, যে একবার গেলে, বারবার যেতে চাইবেন। তাই এই লেখা একেবারেই ট্রেকপ্রেমীদের জন্য। এই ট্রেক পয়েন্ট বিপজ্জনক হলেও ভারী সুন্দর। মেঘালয়ের মাওরিংখাং, এখানকার ব্যাম্বু ট্রেক খুবই জনপ্রিয়। যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাদের জন্য একেবারে পারফেক্ট এই ট্রেক। এই ট্রেককে মাওরিংখাং ট্রেকও বলা হয়ে থাকে। ট্রেকাররা এই ট্রেককে দেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক ট্রেক পয়েন্ট নামেও ডেকে থাকেন। মেঘালয়ের ওয়াহখেন গ্রাম থেকে মূলত শুরু হয় এই বাম্বু ট্রেক। ট্রেকটা পুরোটাই বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে করতে হয়। ঝরনা, নদী, খাদ, জঙ্গল, পাহাড় পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। এই সেতুর সবচেয়ে নজরকাড়া বৈশিষ্ট্যই হলো এই বাঁশের সাঁকোটি গ্রামের মানুষদের হাতে তৈরি। মূলত দড়ি দিয়ে বাঁশকে বেঁধেই তৈরি করা হয়েছে সেতুটি। স্থানীয়দের কথায়, খুব কম মানুষই এই ট্রেক শেষ করতে পারেন। স্থানীয়দের কথায়, অনেক সময়ই হাওয়ার চোটে এই সাঁকো নড়তে থাকে। যা কিনা ট্রেকের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং।

বাম্বু ট্রেকিং শুরু হয় মেঘালয়ের পাইনুরসাল্লা মহকুমার খাসি গ্রাম ওয়াহখেন থেকে। শিলং থেকে ডাউকির পথে যেতে পড়ে এই গ্রাম।


অবশ্যই মনে রাখুন

১. বাম্বু ট্রেক করার সময় অবশ্যই পরুন এমন জুতো, যা পিছলে যাবে না। হিল জুতো একেবারেই নয়।

২. শীতকালেই এই ট্রেক করুন।

৩. জলের বোতল, শুকনো খাবার সঙ্গে রাখুন। তবে প্লাসটিক কিন্তু এখানে নিষিদ্ধ।

৪. বাম্বু ট্রেক করার সময় কোনো আবর্জনা ফেলবেন না।

৫. ঢিলেঢালা পোশাক একেবারেই নয়। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে এড়িয়ে চলুন এই ট্রেক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা