রাশিয়ার সিরিয়াস ফেডারেল টেরিটরিতে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্ব যুব উৎসব। এ আয়োজনে ১৮০টি দেশের তরুণরা অংশগ্রহণ করে। উৎসবে দেশের প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি রাশিয়ার খান্টি-মাস্কি অটোনমাসের ইয়োগরায় উৎসব ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার। বিস্তারিত লিখেছেন সিফাত রাব্বানী
দীর্ঘ ২২ দিন পর রাশিয়া থেকে ফিরে এলে কথা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সাঈদ মাহাদী সেকেন্দারের সঙ্গে। আলাপকালে প্রথমেই জানতে চাওয়া হয় যুব উৎসবে অংশগ্রহণ করার সুযোগটি কীভাবে এলো? তিনি জানালেন, তিনি সব সময় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা পছন্দ করেন। অক্টোবরে রাশিয়া সরকারের অর্থায়নে এমন বড় আয়োজনের বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেন। বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ শেষে চূড়ান্ত তালিকায় স্থান করে নিতে সক্ষম হন। যখন চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেন তখনকার অনুভূতি নিয়ে বলেন, রাশিয়ার উদ্দেশে বিমানে ওঠার আগ পর্যন্ত যথেষ্ট অস্থিরতা কাজ করেছে কয়েক দিন। যুব উৎসব নিয়ে বললেন, রাশিয়ার সোচিতে স্পোর্টসের জন্য বিশেষায়িত এলাকা রয়েছে। সেখানে তাদের দিনব্যাপী ইভেন্ট থাকত। যুব উৎসবটি উদ্বোধন এবং সমাপনী আয়োজন উভয় সেশনে অংশ নেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
উৎসবে সাংস্কৃতিক আয়োজনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে খুবই ব্যস্ত সময় পার হতো সবার। বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব এবং সাস্কৃতিক ভাব আদানপ্রদানের সুযোগ হয়েছে এখানে। এ ছাড়া দক্ষতা অর্জনেরও সেশন থাকত প্রতিদিন। সবকিছু মিলে প্রাণবন্ত সময় কাটানোর পাশাপাশি দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে। সোচির উৎসব শেষে পরবর্তীতে আঞ্চলিক উৎসব কেমন ছিল? এর উত্তরে বলেন, যুব উৎসবের পর যারা বিভিন্ন আঞ্চলিক উৎসবে অংশগ্রহণের সুযোগ পান, তারা মস্কো চলে যান। দুই দিন তাদের মস্কোর বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা ও শহর ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছিল। এ ছাড়া তারা মস্কোয় বিভিন্ন সেশনেও অংশগ্রহণ করেন। তাদের আঞ্চলিক উৎসব পাঁচ দিনের ছিল। তিনি নির্বাচিত হন খান্টি-মাস্কি অটোনমাসের ইয়োগরা অঞ্চলের উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য। এটি পশ্চিম সাইবেরিয়া এলাকা।
৩৩ দেশের ৭০ জন প্রতিনিধি এখানে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র সেকেন্দারই প্রতিনিধিত্ব করেন। রাশিয়ার সবচেয়ে বেশি তেল উত্তোলন হয় ইয়োগরা অঞ্চলে। সেখানে তিনি ও কয়েকজন সেখানকার জাদুঘর, আদিবাসীদের জীবনাচরণ, স্কেটিং জোন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে পরিচিতি লাভের সুযোগ পেয়েছেন বলে জানান। সেখানকার মানুষের সঙ্গে তাদের দারুণ সম্পর্ক তৈরি হয়। ইয়োগরার গভর্নরসহ স্থানীয় সরকারের সঙ্গে তাদের শিক্ষা-বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয়। সেখানে সেকেন্দার বাংলাদেশ ও রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে এসব বিষয়ে সম্পর্কোন্নয়নের আহ্বানও জানান। রাশিয়ার নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে তার কী অভিজ্ঞতা হলো? এমন প্রশ্নে জানালেন, আঞ্চলিক উৎসবে অংশগ্রহণকারী ১০ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেখার সুযোগ পান। তারা নির্বাচনের পোলিং স্টেশন, ভোটিং সিস্টেম এবং নির্বাচন কমিশন ও পরিচালনা কমিটির সঙ্গে খুব কাছ থেকে নির্বাচন দেখেছেন। সেখানে সাংস্কৃতিক বলয়ের মধ্যে একটি নির্বাচন হয়। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্পোর্টস জোন, ফুডকোর্ট ও সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকে। এটি একদমই ভিন্ন লেগেছে তার। এ ছাড়া গ্রামীণ এলাকাও দেখেছেন। সেখানে অনলাইনে এবং সশরীরে ভোট দেওয়া যায়।
জনসংখ্যা কম থাকায় পোলিং স্টেশনে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। ২২ দিনের সফরে আর বিশেষ কোনো ঘটনা আছে কি নাÑজানতে চাইলে আনন্দের সঙ্গে জানান, তার সোচিতে একটি পরিবারের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ইয়োগায়ও একটি পরিবারে ফ্যামিলি ডিনারে অংশগ্রহণ করে তাদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার সাইরাস বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে তুলে দিয়েছেন তার লেখা গল্পগ্রন্থ ‘প্রেয়সী’ এবং প্রবন্ধগ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধের দর্শন ও বঙ্গবন্ধু’।