ফারহাত মাইশা অর্পা
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৩৬ পিএম
এয়ারক্রাফট ডিজাইন প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় ও পুরো এশিয়ায় চতুর্থ হয়েছে এমআইএসটির ‘টিম নভোনীল’
মার্কিন ইনস্টিটিউট অব অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিক্স (AIAA) দ্বারা প্রতি বছর আয়োজিত হয় ‘ডিজাইন বিল্ড ফ্লাই (DBF)’। যে প্রতিযোগিতার বিষয় থাকে একটি বিমানের নকশা ও উৎপাদন। বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী একমাত্র দল মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)-এর ‘টিম নভোনীল’।
তারা ১৮ থেকে ২১ এপ্রিল, ২০২৪ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসে এ ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছিল। ৪০টি দেশের মর্যাদাপূর্ণ ১১০টি দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এ দলটি। যেখানে এমআইটি ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানও অংশ নিয়েছিল। টিম নভোনীল দক্ষিণ এশীয় দলগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় এবং এশিয়ায় চতুর্থ। তাদের উদ্ভাবনী নকশা ও বাজেট দক্ষতার জন্য প্রশংসা অর্জন পেয়েছে। প্রতি বছর AIAA প্রতিযোগিতার একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, যার এ বছরের লক্ষ্য ছিল ডেলিভারি, মেডিকেল ট্রান্সপোর্টসহ আরবান এয়ার মোবিলিটি মিশন নিয়ে কাজ করা।
American Institute of Aeronautics and Astronautics (AIAA) প্রতি বছর ডিজাইন, বিল্ড অ্যান্ড ফ্লাই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে; যেখানে বিশ্বব্যাপী এয়ারক্রাফ্ট ডিপার্টমেন্টেরের স্টুডেন্টদের জন্য বাস্তব বিশ্বের উন্নতমানের বিমানের নকশা ও গবেষণা নিয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। মূলত AIAA কর্তৃক আয়োজিত DBF প্রতিযোগিতা একটি উল্লেখযোগ্য ইভেন্ট যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাস্তব বিশ্বের বিমান ডিজাইনের অভিজ্ঞতা প্রদান করে ও এটি উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ দেয়। প্রতি বছর AIAA কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয় এবং সে অনুযায়ী বিমানটির ডিজাইনও বানানো হয়। এ বছর উদ্দেশ্য ছিল Urban Air Mobility (UAM) মিশন প্রদর্শনের জন্য একটি বিমানের নকশা, নির্মাণ ও পরীক্ষা করা।
এ বছর মেডিকেল পরিবহন, যাত্রী পরিবহনসহ আরবান এয়ার মোবিলিটি মিশনগুলো কেন্দ্র করে একটি বিমানের নকশা, উত্পাদন ও আকাশে ওড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিযোগিতাটি তিনটি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমত, দলগুলোকে গত বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে প্রস্তাব ও দলের রোস্টার এবং এ বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ‘ডিজাইন রিপোর্ট’ জমা দিতে বলা হয়েছিল। চূড়ান্ত ধাপে ১৮ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বহুলপ্রত্যাশিত ‘ফ্লাই অফ’ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। টিম নভোনীল দলে ছিল মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যারোনটিক্যাল বিভাগের ৩০ জন তরুণ ও চৌকশ শিক্ষার্থী।
টিম নভোনীল এমআইএসটি অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিক্স ক্লাব (MAAC)-এর সঙ্গে যৌথভাবে সমন্বয় সাধন করে ধারাবাহিকভাবে তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। এ বছরের উদ্ভাবিত প্রজেক্ট ‘আকাশতরী’ ধারণাগত নকশা, বহুবিভাগীয় অপ্টিমাইজেশন, অ্যারোডায়নামিক এবং কাঠামোগত বিশ্লেষণ ও মনুষ্যবিহীন এরিয়াল ভেহিকল (UAV) উৎপাদনে তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। দলটি তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের হয়ে সুনাম বয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
টিম লিডার আসিফ হাসনাইন বলেন, ‘বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরতে ও বাংলাদেশের অবস্থান নিশ্চিত করতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত বোধ করছি। আমাদের কাছে আকাশ এখন আর সীমা নয়।’
টিম নভোনীল মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অ্যারোনটিক্যাল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এয়ার কমডোর মো. আমিনুল হকের প্রতি তাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। শুরু থেকেই দলটিকে নানান সহায়তা প্রদান ও উৎসাহ জুগিয়েছেন তিনি। দলটি এমআইএসটির বায়োমেডিকেল বিভাগের শিক্ষক উশামা, সাব-ইঞ্জিনিয়ার আশিক এবং প্রাক্তন ছাত্র মাহবুব উন নবীর প্রতি তাদের নিরলস সহায়তা, গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) ও বিমান তৈরিতে সহায়ক ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞটা প্রকাশ করে।
টিম নভোনীলের সাফল্য মহাকাশ প্রকৌশলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। তাদের এ বিশ্বসেরা উদ্ভাবন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মহাকাশ আবিষ্কারে এবং বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক ল্যান্ডস্কেপে দেশের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে অনুপ্রাণিত করবে।