রুবেল আহমেদ, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২০ এএম
সৌখিন সংগ্রাহক আলী মাহমেদ
হারিয়ে যাওয়া পুরোনো দিনগুলোর টুকরো স্মৃতিচিহ্ন জায়গা করে নিয়েছে জাদুঘরে। তবে হারিয়ে যাওয়া অনেক স্মৃতি আবার বেশ বহাল তবিয়তে শোভা পাচ্ছে শৌখিন সংগ্রহকারীদের ঘরে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের বড়বাজার এলাকায় আলী মাহমেদের বাড়ির ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখ পড়বে ৩৫ বছরের একটি বনসাই গাছ। ঘরের ভেতর আরও আছে শতাব্দী প্রাচীন ও দুর্লভ সব জিনিসপত্র।
এমন দুর্লভ সব জিনিসপত্রের সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন আখাউড়া পৌর শহরের বড়বাজার এলাকার বাসিন্দা আলী মাহমেদ। এলাকায় তিনি মোহাম্মদ আলী নামে পরিচিত।
আলী মাহমেদ পেশায় ব্যবসায়ী হলেও লেখালেখি তার নেশা। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৫। ব্লগিংয়ের জন্য পেয়েছেন ডয়চে ভেলের পুরস্কারও।
তিন তলা বাড়ির প্রতিটি কক্ষ, দেয়াল কিংবা সিঁড়ি- সবদিকেই চোখ জুড়াবে এসব জিনিসপত্র। প্রায় ২৫ বছর আগে পুরোনো এসব জিনিসপত্রের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় আলী মাহমেদের। সেই থেকেই সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। এখন তার সংগ্রহে আছে কয়েকশ বছরের পুরোনো ফসিল, রাজপ্রাসাদের ইট এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক সৈনিকের মেডেল।
প্রতিনিয়ত দুষ্প্রাপ্য সব জিনিসপত্র যোগ হচ্ছে আলী মাহমেদের সংগ্রহশালায়। পকিস্তান আমলের পত্রিকা, ১৯৪২ সালের শাড়ি, মহান মুক্তিযুদ্ধের বুলেটের খোসা, রেডিও, টেলিভিশন, দেয়াল ঘড়ি, কলের গানসহ রয়েছে অনেক কিছু। বিভিন্ন স্থান থেকে এসব জোগাড় করেছেন তিনি।
আলী মাহমেদের তিন তলা বাড়িটি গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য, বিশ্বযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় জিনিসপত্র, শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপনে ব্যবহৃত উপকরণসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন ও ব্যতিক্রমী সামগ্রী দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দেয়ালের তাকে সাজানো অসংখ্য বই।
কৃষি উপকরণের মধ্যে যেমন রয়েছে লাঙল, মই, ফলা, দা, কাস্তে, হাতুড়ি, ছাম, ডালা, খুন্তি, ডেকি; আরও রয়েছে হুক্কা, বল্লম, বদনা, পাদুকা, থালাবাটি, কোরবানির ছুরি, কলের গান, ঢাকঢোল, প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ, মঙ্গলসূত্র, মাটির তৈরি তৈজসপত্র, বাঁশের খড়ের পণ্য, ঘোড়ার চাবুক। এ ছাড়া সানাই, বাঁশি, টোপর, ডুলি, জায়নামাজ, তসবিহ, পুঁথিসহ হাজারখানেক জিনিসপত্রে সাজানো এ সংগ্রহশালা। আলী মাহমেদের বাড়িটি দুর্লভ জিনিসপত্রের জাদুঘরে পরিণত হয়েছে।
পুরোনো জিনিসপত্র সংগ্রহকারী আলী মাহমেদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘একটা মানুষের কাছে যত বেশি স্মৃতি থাকবে, সে মানুষটা তত বেশি তরুণ থাকবে, তত বেশি সে অ্যাক্টিভ থাকবে, প্রতিভাবান থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সংগ্রহে থাকা এই জিনিসগুলো দেখে কারও চোখ যদি আবেগ ও স্মৃতিতে ভিজে যায়, বাবা-মার কথা মনে পড়ে যায়, তাহলে এটাই তো আমার সুখ। এটাই আমার আনন্দ। এরচেয়ে আনন্দের কিছু আর হতে পারে না।’
সংগ্রহশালায় আছে মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি। বীরপ্রতীক এমএ জব্বারের দেওয়া গুলির বাক্স, মুক্তিযোদ্ধা জামশেদ শাহর ব্যবহৃত ট্রাউজার এবং আগরতলার সাংবাদিক বিকচ কুমার চৌধুরীর কাছ থেকে পাওয়া ১৯৭১ সালের ‘বাংলার মুখ’ পত্রিকার কপি। এ ছাড়া পুরোনো মডেলের কয়েকটি মোবাইল ফোনও নিজের সংগ্রহে রেখেছেন তিনি। আলী মাহমেদ বলেন, ‘এইটা তো আমার নিজের সম্পদ না। এটা দেশ ও জাতির সম্পদ।’
পুরোনো জিনিসপত্রের সংগ্রহশালাকে নিজেদের ভিত্তি ও অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেন তার পরিবারের সদস্যরাও।