× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ইতিহাস ঐতিহ্যের শশীলজ

শফিক সরকার, ময়মনসিংহ

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:১৪ এএম

ইতিহাস ঐতিহ্যের শশীলজ

অতীত গৌরবের সাক্ষী হয়ে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরঘেঁষে আজও দাঁড়িয়ে আছে নয়নাভিরাম শশীলজ।  জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও এখনও রয়ে গেছে তাদের স্মৃতিবিজড়িত অনেক স্থাপনা। যার মধ্যে অন্যতম শশীলজ। এটি মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত মহারাজের এক অনন্য কীর্তি। যা স্থাপিত হয়েছে একজন নারীকে ঘিরে। দীর্ঘদিন এটি মহিলা টিচার্স ট্রিনিং কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখন এটি প্রত্নতত্ত বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

মুক্তাগাছার জমিদার শ্রীকৃষ্ণ আচার্যর তৃতীয় উত্তরসূরি পুরুষ রঘুনন্দন আচার্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। উপায়ন্ত না দেখে তিনি দত্তক পুত্র গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। গৌরীকান্ত আচার্য চৌধুরীকে দত্তক নেন রঘুনন্দন। মৃত্যুর আগে দত্তক পুত্রের হাতে জমিদারির দায়িত্ব অর্পণ করেন।

জমিদার গৌরীকান্ত আচার্য চৌধুরীও সন্তানহীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। গৌরীকান্তের বিধবা পত্নী বিমলা দেবী দত্তক নেন কাশীকান্তকে। কাশীকান্তের কপালও ছিল মন্দ। দীর্ঘ রোগ যন্ত্রণায় ভুগে সন্তানহীন অবস্থায় তিনিও পরলোকগমন করেন। তার বিধবা পত্নী লক্ষ্মী দেবী আচার্য চৌধুরী পূর্বসূরিদের পথ অনুসরণ করে দত্তক নেন চন্দ্রকান্তকে। চন্দ্রকান্তও অতিদ্রুত পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। তবে হাল ছাড়েননি লক্ষ্মী দেবী। পুনরায় দত্তক নেন তিনি। দ্বিতীয় দত্তক নেন পূর্ণচন্দ্র মজুমদারকে। পরে মহাসমারোহে লক্ষ্মী দেবী দত্তক পুত্রের নতুন নাম রাখেন সূর্যকান্ত আচার্য। তিনিই ছিলেন দীর্ঘ শাসনকর্তা।

প্রায় ৪১ বছর জমিদারি পরিচালনার সময় অনেক জনহিতকর কাজ করেন তিনি। ময়মনসিংহে স্থাপন করেন একাধিক নান্দনিক স্থাপনা। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থল বর্তমান ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে নয় একর জমির ওপর একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন সূর্যকান্ত। নিঃসন্তান সূর্যকান্তের দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে এই ভবনের নাম রাখা হয় শশীলজ। ১৮৯৭ সালের ১২ জুনে ভূমিকম্পে বাড়িটি বিধ্বস্ত হয়। পরে ১৯০৫ সালে ঠিক একই স্থানে নতুনভাবে শশীলজ নির্মাণ করেন তৎকালীন জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী। ১৯১১ সালে শশীলজের সৌন্দর্যবর্ধনে তিনি সম্পন্ন করেন আরও কিছু সংস্কারকাজ। নবীন জমিদারের উদ্যোগে শশীলজ হয়ে উঠে দৃষ্টি নন্দন একটি বাড়ি। 

পুরো বাড়িটি ৯ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। শশীলজের মূল ফটকে রয়েছে ১৬টি গম্বুজ। ভেতরে প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে ছাদ থেকে ঝুলন্ত প্রায় একই রকম দেখতে ঝাড়বাতি। সাধারণ বাসভবন ছাড়াও বাড়িটিতে আছে নাচঘর, স্নানঘর। স্নানঘরে রয়েছে সুড়ঙ্গ। ধারণা করা হয় এই সুড়ঙ্গপথে মুক্তাগাছায় আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মূল ভবনের পেছনভাগেও রয়েছে একটি স্নানঘর। পেছনের স্নানঘরটি দোতলা। এই স্নানঘরে বসে রানী পাশের পুকুরে হাঁসের খেলা দেখতেন। পুকুরটির ঘাট মার্বেল পাথরে বাঁধানো। শশীলজের মূল ভবনের সামনে রয়েছে বাগান। সেই বাগানের মাঝখানে আছে শ্বেতপাথরের ফোয়ারা। মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গ্রিক দেবী ভেনাসের মূর্তি। বাগানের পেছনে লালচে ইট আর হলুদ দেয়ালে নির্মিত শশীলজ। পাশেই পদ্মবাগান। শশীলজের ভেতরে বারান্দা অতিক্রম করে কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেরোলেই রঙ্গালয়। এক পাশে রয়েছে বিশ্রামঘর। বিশ্রামঘরের পর কাঠের মেঝে যুক্ত হলঘর। হলঘরের পাশেই বর্ণিল মার্বেল পাথরে নির্মিত আরেকটি জলফোয়ারা। জলফোয়ারার ঠিক ওপরের ছাদ থেকে নিচে ঝোলানো স্ফটিক স্বচ্ছ কাচের ঝাড়বাতি। ভবনটির পেছনে এক চিলতে উঠান। সবুজ ঘাসের আঁচল পাতা সেই উঠান পেরোলে একটি অপরিসর জলাশয়। জলাশয়ের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে দুটি জরাজীর্ণ ঘাট থাকলেও দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দ্বিতল স্নানঘাটটির সৌন্দর্য সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা