ভূত ভুতু ভুতুম
শরীফ উদ্দিন সবুজ
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১৮ পিএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:২৬ পিএম
কটেজের সামনে সুন্দর একটা বাগান। সাগর কটেজের দরজায় টোকা দিতে যাবে। এমন সময় বের হয়ে এলো সিং থুয়াই। ‘কিরে কোথায় যাচ্ছিস?’ ‘ঢাকায় যাচ্ছি। কাল থেকে আমার ক্লাস শুরু দোস্ত।’টেজের সামনে সুন্দর একটা বাগান। সাগর কটেজের দরজায় টোকা দিতে যাবে। এমন সময় বের হয়ে এলো সিং থুয়াই। ‘কিরে কোথায় যাচ্ছিস?’ ‘ঢাকায় যাচ্ছি। কাল থেকে আমার ক্লাস শুরু দোস্ত।’ ‘অংশুই কোথায়?’ ‘ও কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। তুই থাক। ও আমাকে বলেছে, তুই আজ এখানে থাকবি। হটবক্সে খাবার আছে। তোরা খেয়ে নিস। এ বাড়িতে একটি ভূত থাকে। ওকেও কিছু খেতে দিস। হা হা হা।’ সিং থুয়াই চলে গেল। অংশুই ফোন দিল। ‘দোস্ত তুই আজকের রাতটা কটেজে কাটিয়ে দে।’ ‘কটেজে কাটানোর জন্যই তো এলাম। তুই কই?’‘এক বন্ধুর বাসায় বারবিকিউর আয়োজন করেছে। আমরা কয়েকজন আছি।’ ‘শালা। আমাকে এখানে এনে এখন ফাজলামো হচ্ছে?’ ‘দোস্ত আমি এসে যেতাম। কিন্তু শেষ বাসটা যে চলে গেছে খেয়ালই করিনি। আর পাহাড়ে তো জানিসই যানবাহন তোদের মতো না। অহরহ পাওয়া যায় না। সরি দোস্ত। তুই থাক। আমি সকাল সকাল চলে আসব। এরপর তোকে নিয়ে ঘুরব।’ ‘যা শালা কথা বলবি না।’ মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সাগরের। মোবাইল ফোন আবারও বেজে উঠল। সুমন মল্লিক ফোন দিয়েছে। ‘মামা তুমি নাকি একলা পড়ে গেছ?’ ‘সুমন ফাজলামো করবি না বলে দিচ্ছি।’ ‘মামা। ওই বাসায় একটা ভূত থাকে। তুমি তার সঙ্গে সারা রাত গল্প করে কাটিয়ে দাও। আর যদি ভূতের সঙ্গে সম্পর্ক করতে পারো তাহলে রাতে এখানে পাঠিয়ে দেবে। ভূত এসে রাতে আমাদের বাথরুমের দরজা আটকে দিলেই হবে। তাহলেই বুঝব ভূত এসেছে। হা হা হা।…’
কখন ঘুমিয়ে গেছে খেয়াল নেই সাগরের। ঘুম ভাঙল। গা থেকে হেচকা টানে কেউ চাদর সরিয়ে দিয়েছে। ধরমর করে বিছানায় উঠে বসল সাগর। টর্চ জ্বালাল। আলোয় পুরো ঘর ফকফকে হয়ে উঠল। কোথাও কেউ নেই। অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ল না। দরজা খুলে কটেজের বাইরে এলো।ভয় কেটে গেছে। ঘুম পাচ্ছে। সাগর কটেজের দিকে পা বাড়াল। কটেজের দরজার ফাঁক দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে। সাগর দরজার সামনে যেতেই প্রচণ্ড শব্দে বন্ধ হয়ে গেল দরজাটা। শীতের প্রচণ্ড বাতাস শুরু হলো সঙ্গে সঙ্গেই। সাগর মাথা ঠান্ডা করে সামলানোর চেষ্টা করছে। পারছে না। মনের জোরে সে দরজা খোলার চেষ্টা করল। কিন্তু দরজা খুলছে না। কেউ ভেতর থেকে দরজা ঠেলে ধরে আছে। সাগর সাহস করে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা দিল দরজায়। এবার দরজা খুলে গেল। জোরে ধাক্কা দেওয়ার দরকারই ছিল না। হঠাৎ ঘস করে শব্দ হলো। কেউ গাঁঘেষে পাশের কক্ষের দিকে চলে গেল। হঠাৎই পাশের কক্ষের লাইট বন্ধ হয়ে গেল। কেউ বিছানায় উঠে শুয়ে পড়ছে। চাদর টেনে নিচ্ছে। শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে এলো সাগরের। ব্যাপক ভয় তাড়া করল তাকে। প্রায় ছুটে ঘর থেকে বের হয়ে এলো সে। কটেজ ছেড়ে বেশ কিছু দূর এসে দাঁড়াল। হাফাতে হাফাতে কটেজের দিকে তাকাল। কেউ কি কটেজ থেকে তাকিয়ে আছে? অংশুইর ধাক্কায় ঘুম ভাঙল সাগরের। কটেজের সামনে বাগানে ঘুমিয়ে আছে সে। কখন ঘুমিয়েছে মনে নেই। রাতে কী হয়েছিল বলতে চাচ্ছিল সাগর। অংশুই বলল, ‘পরে বলিস। বুঝতে পেরেছি কী হয়েছে।’ অংশুই বলতে শুরু করল, ‘মারমাপাড়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার এই কটেজ। তার মিংশু নামের এক মেয়ে ছিল। একমাত্র সন্তান। এক দিন মেয়েটি কটেজের পেছনের কক্ষে আত্মহত্যা করে। প্রধান শিক্ষিকা এর পরও কয়েক মাস এখানে থাকতেন। কিন্তু তিনি প্রায়ই কটেজে তার মেয়েকে দেখতেন। সে এসে মার কাছে কাঁদত। তিনি ঘুমিয়ে গেলে তার চাদর টেনে নিত। তাকে জাগিয়ে তার ব্যথার কথা বলত। তিনি ঘুমাতে পারতেন না। শেষে প্রধান শিক্ষিকা বান্দরবান শহরে রাজপাড়ায় তার এক আত্মীয়ের বাসায় চলে গেছেন। অংশুই চা বানাল। সাগর আর অংশু চা হাতে নিয়ে চায়ের বদলে পাহাড়ি ফুলের তীব্র গন্ধ পেল। বিছানার সাদা চাদরের ওপরে একগুচ্ছ পাহাড়ি নিসাহাসা ফুল পড়ে আছে। মিংশু নামের মেয়েটির প্রিয় ছিল এ ফুল।