ভূত ভুতু ভুতুম
রিক্তা রিচি
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১৪ পিএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:২৫ পিএম
তাহিয়ার দাদাভাই ও ছোট চাচ্চু শহর থেকে তার জন্য অনেক খেলনা নিয়ে এসেছে। বড়-ছোট গাড়ি, রকিং ঘোড়া, ক্লে সেট, কাগজের অরিগ্যামি, বারবি পুতুল কত্ত কী! খেলনাগুলোর মধ্যে কিছু খেলনা আবার রিমোর্ট কন্ট্রোল। এত্ত খেলনা পেয়ে সে ভীষণ খুশি। র্যাকের মধ্যে একটি একটি করে সেগুলো সাজিয়ে রেখেছে। এক দিন বিকালে ক্লে সেট খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেল তাহিয়া। ক্লে দিয়ে বানানো মাছও পাচ্ছে না। তাহিয়ার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। কোথায় গেল তার খেলনা ভেবে কূল পাচ্ছে না। ওদের বাড়ির উঠোনের এক প্রান্তে ঠিক রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া একটি বট গাছে আছে। গাছটি নাকি শতবর্ষী! তাহিয়া শুনেছে এখানে নাকি একটি ভূতের পরিবার থাকে। সেই পরিবারে ২২টি বাচ্চা ভূত। সেই বাচ্চা ভূতগুলো আবার সারা দিন গাছের পাতায়, শাখায়, কাণ্ডে ঝুলে থাকে। বাচ্চা ভূতদের কেউ দেখতে পায় না। কখনও কখনও রাত-বিরাতে টিনের চালে ঢিল মারে। এসব ভেবে ভেবে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল তাহিয়া। তারপর অন্য খেলনা নিয়ে খেলতে শুরু করল। পরদিন সন্ধ্যায় বটগাছের নিচে সত্যি সত্যি দেখতে পেল ক্লে দিয়ে বানানো তার মাছ। সেটা কেমন এবড়ো থেবড়ো হয়ে গেছে। মাছের ওপর মোটা দাঁতের কামড়! আরেক দিন তাহিয়ার মা ইলিশ মাছ ভেজে রান্না ঘরে রাখতেই সেখান থেকে ৫-৭টা পিস কিছুক্ষণের মধ্যে উধাও। তা নিয়ে সবাই তো অবাক।
বড় চাচা উঠোনের শেষ প্রান্তের দিকে নতুন একটি বিল্ডিং তুলবে। তার মাপজোখ দিচ্ছিল সদর থেকে ডেকে আনা সার্ভেয়ার মামা। তিনি জানালেন ওখানে বিল্ডিং তুলতে হলে বট গাছটাকে কেটে ফেলতে হবে। এ ছাড়া কোনো উপায় নেই। পরদিন আবার সার্ভেয়ার, গাছ কাটার কাঠুরেরা এলো। ঘণ্টাখানেক পরে গাছ কেটে ফেলা হবে। ভূতের বাচ্চারা তো ভীষণ বিপদে পড়েছে। এই গাছ কেটে ফেললে তারা কোথায় যাবে! খুব কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল সবাই।
এদিকে বড় চাচ্চু, বাবা, ছোট চাচ্চু সবাই ভাবল নতুন কিছুর জন্য গাছটা কেটে ফেলাই ভালো। কিন্তু তাহিয়া তাতে রাজি হলো না। বড় চাচ্চুকে ঠিক বলে দিয়েছেÑ গাছ কাটা যাবে না। স্কুলের ম্যাম বলেছে গাছ কাটা ভালো নয়। এই গাছ ছায়া দেয়, বাতাস দেয়। পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ক্লান্ত পথিকদের শান্ত করে। এই গাছের নিচে বসে পথিক জিরিয়ে নেয়। সেবার যখন বড় ঘূর্ণিঝড় হলো তখন এই গাছ আরও অনেক ছোট গাছকে বাঁচিয়েছে।
তাহিয়ার কথা শুনে বড় চাচ্চু আপ্লুত হয়ে গেল। এ গাছ না কেটে কীভাবে নতুন বিল্ডিং বানানো যায় তাই ভাবল। কাঠুরেদের চলে যেতে বলল। বাচ্চা ভূতের দল তাহিয়ার কথা এবং বড় চাচ্চুর কথা সব শুনেছে। বিপদ থেকে বাঁচায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। আগের করা ভুল কাজের জন্য ভীষণ অনুতপ্ত হলো। তার ঠিক মাস দুই পরের কথা। এক দিন গভীর রাতে ২২টি ভূত মিলে গান করছিল, গাছে নাচছিল। এমন সময় দেখতে পেল তাহিয়াদের বাড়িতে কয়েকজন চোর ঢুকেছে। তারা জানল ও টিন কেটে ঘরে ঢোকার ফন্দি করছে। তাদের কাছে আছে এমনই এক মেশিন, যা দিয়ে টিন কাটলে শব্দ হবে না। যখনই চোরের দল টিন কাটতে শুরু করেছে তখন ১০টা বাচ্চা ভূত কুকুররূপে নিচে নেমে এলো এবং বিকট শব্দ করে ঘেউ ঘেউ শুরু করল। আর বাকিরা গাছ থেকে চালে ঢিল ছুঁড়তে শুরু করল। ভয়ে চোরের দল দিল ভোঁ দৌড়। মাগো, বাবাগো, বাঁচাও, বাঁচাও বলে পালিয়ে গেল।