ভূত ভুতু ভুতুম
কামাল হোসাইন
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১২ পিএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১৩ পিএম
অলংকরণ : জয়ন্ত সরকার
মানু কোথায় যে এসে পড়েছে, ঠিক বুঝতে পারছে না। বাড়ির ছাদেই ছিল। কিন্তু এখানে কীভাবে? অচেনা এক জায়গা। এই রাতের বেলা মানু ছাড়া অন্য কেউ হলে এতক্ষণে চোখ উল্টে পড়ে থাকত। কিন্তু সে অনেক সাহসী। এজন্য বন্ধুরা ওকে ওস্তাদ মানে। কদিনের গরমে সবাই নাকাল। অতিষ্ঠ হয়ে মানু ওদের বাড়ির ছাদে উঠেছিল। অবশ্য তখন কেবল সন্ধ্যা যাই যাই করছে। ফুরফুর করে বাতাস বইছে। মিষ্টি হাওয়ায় তাতানো শরীরটা অল্প সময়েই ঠান্ডা হয়ে গেল।
বাড়ির এক কোনায় একটা ঝোপাল কামিনি ফুলের গাছ। এ মুহূর্তে তারই কড়া সুবাস নাকে এসে লাগছে। মন মাতাল করা সেই ঘ্রাণ। আকাশে চাঁদ নেই। চাঁদ উঠতে উঠতে মধ্যরাত। তাই চাঁদহীন আকাশের গায়ে বেশকিছু তারা মিটিমিটি জ্বলছে। নিষ্প্রভ সেই আলো আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতেই ভালো লাগে। মৃদু হাওয়ায় ছোট ছোট পা ফেলে মানু ছাদের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে পায়চারি করছে। ঠিক এ সময় একটা বেসুরো শব্দে মানু সচকিত হয়ে উঠল। মনে হলো কে যেন ঠিক ওর পেছনে ওরই পায়ে পা মিলিয়ে হেঁটে আসছে!
প্রায় আধাঘণ্টা হলো ছাদে এসেছে। এতক্ষণ তো ছিল না ওই শব্দটা! আর কেউ ছিলও না এখানে। তাহলে কে আসছে তার পিছে পিছে! মানু বুঝতে পারল, সে যেই হোক, ওর পিছু ছাড়তে চাইছে না। সতর্ক হলো ও। দেখতে হবে কেসটা কী। চলতে চলতে এবার মানু একেবারে বোঁ করে ১৯০ ডিগ্রি নিজেকে ঘুরিয়ে নিল। উদ্দেশ্য, যে ওর পেছনে নিয়েছে, সরাসরি তার মুখোমুখি হওয়া। কিন্তু কোথায় কে? কেউ নেই! মুহূর্তে অদৃশ্য! তাহলে! কেউ কি ওর সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে? কিন্তু কেন? আর কেউ যদি ওর সঙ্গে লুকোচুরি করেও থাকে, মোটামুটি এই ন্যানো সেকেন্ডের ভেতর কারোই আত্মগোপন করা সম্ভব নয়। তাহলে! এর কোনো উত্তর নেই ওর কাছে। আপাতত বিষয়টাকে মনের ভুল বলেই ভাবল মানু।
কিছুটা থেমে নতুন করে আগের মতো পায়চারি শুরু করল সে। এবার আরও সতর্ক। এক মিনিটও পার হয়নি। পেছনে আবার কারও উপস্থিতি টের পেল সে। হাঁটছে, হেঁটে আসছে মানুর পেছন পেছন। এবার সে আগের মতো চট করে ঘুরল না। পেছনে যে আছে, তাকে কিছুটা সময় দিল। মিনিট দুয়েক গেল এভাবেই।
পেছনের শব্দটা আরও স্পষ্ট হচ্ছে। এতটাই স্পষ্ট যে, যেন কেউ ওর কানের কাছে জোরে জোরে গরম নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অদ্ভুতভাবে হঠাৎ সব অন্ধকার গিয়ে আলোয় ভরে উঠল ছাদটা। একেবারে ফুটফুটে জোছনা! আশ্চর্যজনক হলো, আলোটা কেবল ওদের ওই ছাদটুকুতেই। আশপাশের অন্য সবকিছু ঠিক আগের মতোই ঘনঘোর অন্ধকারে ছেয়ে আছে! কী হতে শুরু করল ওর সঙ্গে? ও আর ভাবতে পারছে না। আবার এও ভাবছে, ঘাবড়ালে চলবে না। ভয়ের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে না মানু। ভাবলে কী হবে? ক্ষণিকেই সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে।
এবার মানু আর সাহস ধরে রাখতে পারল না। ঠান্ডা শরীরটা দ্রুত ঘামে চুপচুপে হয়ে গেল। যেন এইমাত্র পুকুর থেকে ডুব দিয়ে গোসল করে এলো! এর সঙ্গে ওর কণ্ঠস্বরও আটকে গেল। চেষ্টা করল চিৎকার করতে, পারল না। এ রকম মুহূর্তে পেছনে ঘুরতে আর সাহসে কুলাল না। পাও যেন পাথর হয়ে গেছে। ওঠাতে পারছে না। চোখটা কেবল খোলা আছে সব পর্যবেক্ষণ করার জন্যই বোধহয়। তবে ভালো লাগা এটুকুই যে, চিন্তাশক্তি মানুর অটুট রয়েছে। তবে চাইলেও নড়তে-চড়তে পারছে না, আর কিছু বলতেও পারছে না।
এরপর দেখল, একটা ছোট ছায়া তার পাশে এসে স্থির হয়েছে। একটু পর ছায়াটা সরে আসতে লাগল মানুর দিকে। কিন্তু এতক্ষণ ছোট হয়ে থাকা সেই ছায়াটা আর ছোট থাকল না। ছায়াটা আস্তে আস্তে বড় হতে হতে ওর শরীরটাকেই ঢেকে ফেলল। মানে বড় এক ছায়ার চাদরে বন্দি মানু!...
তারপর তেমন কিছু মনে নেই মানুর। মনে হলো ওই ছায়াটাই ওকে পাজাকোলা করে তুলে নিল। কতক্ষণ ঠিক বলতে পারবে না। পরে একটা খোলা মাঠে নিজেকে আবিষ্কার করল মানু। সেই মাঠের এক প্রান্তে দলাইমলাই হয়ে শুয়ে রয়েছে সে। সেখানে তখন আলো-আঁধারির খেলা। সম্পূর্ণ অজানা অচেনা একটা জায়গা। ভয়ে সাহসী মানুর চোখমুখ শুকিয়ে আমসি। কোথায় ও? এখানে তাকে কে তুলে আনল?
এসব প্রশ্নের উত্তর মানুর কাছে নেই। ও একটা কথাই ভাবছেÑ এত দিন ও শুনে এসেছে, অশরীরী কারও ছায়া থাকে না। তাহলে কে ছিল বিরাটকায় সেই ছায়াটার সঙ্গে?