× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রতিকারহীন শিশুহত্যা ও নির্যাতন

আহমাদ শামীম

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪২ পিএম

আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৩ পিএম

প্রতিকারহীন শিশুহত্যা ও নির্যাতন

শিশুহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা দিনদিন বাড়ছে। স্বার্থ কিংবা লালসার শিকার হয়ে অকালেই প্রাণ হারাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। কেউ কেউ আজীবন বয়ে বেড়ায় নির্যাতনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। ঘরে কিংবা বাইরে, পরিবার কিংবা সমাজ- কোথাও নিরাপদ নয় শিশুরা। শিশুহত্যা ও নির্যাতন প্রতিরোধে রাষ্ট্রের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে সমাজের সচেতন সব নাগরিককে। এসব ঘটনা যেন প্রতিকারহীন না হয়ে পড়ে। লিখেছেন আহমাদ শামীম

০১ এপ্রিল ২০২৪

ডাস্টবিনে পড়ে ছিল শিশুর বস্তাবন্দি লাশ

চট্টগ্রাম নগরের ফলমন্ডি এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, ডাস্টবিনে পড়ে থাকা একটি বস্তা দেখে স্থানীয় লোকজন পাশে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সার্জেন্টকে জানায়। তিনি থানায় জানালে পুলিশ এসে বস্তা খুলে লাশ পায়। নগরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম ওবায়েদুল হক বলেন, ‘শিশুটির বয়স আনুমানিক ছয় বছর। নাম-পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। শরীরের কোথাও তেমন জখম দেখা যায়নি। কিন্তু চোখ দুটো ফোলা ছিল।’

৩ এপ্রিল, ২০২৪

হত্যার পর ডোবায় লাশ ফেলে দেন সৎ মা

যশোর সদরে গর্ভের সন্তান নষ্ট করায় স্বামীর ওপর ক্ষোভ থেকে ৯ বছরের শিশু জোনাকিকে তার সৎ মা নারগিস বেগম গলা টিপে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ২ এপ্রিলের এ ঘটনায় করা মামলায় যশোরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ইমরান আহমেদের আদালতে ওই নারী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। যশোর শহরের রেলগেট এলাকার মডেল মসজিদের পেছনের পুকুর থেকে জোনাকির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার সৎ মা নারগিসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ১ এপ্রিল সকালে জোনাকিকে গলা টিপে হত্যা করেন নারগিস। লাশ ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রেখে তাকে খোঁজার অভিনয় করেন। এরপর স্বামীকে ফোন দিয়ে জানান জোনাকিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

৩১ মার্চ ২০২৪

শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১

পি‌রোজপু‌রের না‌জিরপু‌রে শিশু-ধর্ষণচেষ্টার অভি‌যো‌গে ঘটনাস্থল থে‌কে অভিযুক্ত শ‌ফিকুল হাওলাদার (২৬) না‌মের এক যুবক‌কে গ্রেপ্তার ক‌রেছে পু‌লিশ। নির্যা‌তিত শিশুর বাবা বাদী হ‌য়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন উপ‌জেলার সেখমা‌টিয়া ইউ‌নিয়‌নের বাবুরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভব‌নের ছা‌দে এ ঘটনা ঘটে। জানা‌ গে‌ছে, শিশুছাত্রী তার সহপাঠী‌দের সঙ্গে বিদ্যালয়ের মা‌ঠে খেলাধুলা কর‌ছিল। এ সময় অভিযুক্ত শ‌ফিকুল মোবাই‌ল নি‌য়ে বিদ্যাল‌য়ের ছা‌দে ব‌সে গেমস খেল‌ছিল। তা শিশু‌টির নজ‌রে পড়‌লে সে কার্টুন দেখার জন্য মোবাইলটি হাতে নেয়। এ সময় শ‌ফিকুল তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। স্থানীয় লোকজন শিশুটির চিৎকা‌রে ঘটনাস্থলে গিয়ে শ‌ফিকুল‌কে মারধর ক‌রে পু‌লিশ‌কে খবর দেয়।

দেশের প্রথম সারির কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক সময়ের শিশু হত্যা ও নির্যাতনের খবর এগুলো। যে শিশুদের বলা হয় আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তারাই স্বার্থের বলি হয়ে কলি থেকে ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরে যাচ্ছে কিংবা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ১৩৯ শিশু। এদের মধ্যে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সি শিশুর সংখ্যা ৭৩ এবং ছয় বছরের কম বয়সি শিশুর সংখ্যা ৩২। এই শিশুদের মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে দুজন, ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে একজন, ধর্ষণচেষ্টার সময় হত্যা করা হয়েছে দুজনকে, শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে ২৫ জনকে, গৃহবিবাদের কারণে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ২৫ জন, বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করেছে ২৭ জন, অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে তিনজনকে, নিখোঁজ থাকা ১৫ শিশুর লাশ উদ্ধার হয়েছে এবং শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৩২টি। দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, ১৩৯টি হত্যার বিপরীতে মামলা হয়েছে মাত্র ৪৬টি!

এ ছাড়াও সংস্থাটির তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৮৬টি। এদের মধ্যে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সি শিশুর সংখ্যা ৪৩ এবং ছয় বছরের কম বয়সি শিশুর সংখ্যা ৫৩। যাদের মধ্যে শিক্ষকের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১২ জন, শিক্ষক দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৬ জন, শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২৩টি, কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬৯ জন, ছেলেশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৪ জন, ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ১৭টি, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার ১৮ জন, অপহরণের শিকার চারজন, অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে দুজন।

২০২৩ সালের পরিসংখ্যান মতে, বছরের প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন কারণে হত্যার শিকার হয়েছে ১২৮ জন শিশু। এ ছাড়াও একই সময়ে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২২৫টি। এ ছাড়াও ২০২৩ সালে সর্বমোট শিশুহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৮৫টি। এদের মধ্যে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সি শিশুর সংখ্যা ২০৬ এবং ছয় বছরের কম বয়সি শিশুর সংখ্যা ১১৬। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র ১৭৫টি। একই বছর শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১০১৩টি। এদের মধ্যে সাত থেকে ১২ বছর বয়সি শিশুর সংখ্যা ১৬২ এবং ছয় বছরের কম বয়সি শিশুর সংখ্যা ৭১। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪২৩টি। 

এর আগের বছর তথা ২০২২ সালের পরিসংখ্যানের দিকে যদি তাকাই, বছরটিতে ৫২৬ জন শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১০৮৮ শিশু। ২০২১ সালে শিশুহত্যার ঘটনা ঘটে ৫৯৬টি এবং ১৪২৬ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়। ২০২০ সালে হত্যার শিকার হয়েছে ৫৮৯ জন শিশু এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৭১৮ জন। 

প্রশ্ন হচ্ছে, শিশুহত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা কেন বাড়ছে কিংবা বলা যায় এ মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসছে না কেন? সংশ্লিষ্টদের মতে, শিশুরা নানা কারণে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। যার দায় কখনোই তাদের নয়। সমাজের সর্বস্তরের শিশুরা প্রতিহিংসার বলি হচ্ছে। পারিবারিক সংকট, সামাজিক সচেতনতার অভাব, বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা, পর্নোগ্রাফি, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের নেতিবাচক প্রভাব, অসাবধানতাবশত মারধর, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধসহ আরও কিছু কারণে ঘটছে ন্যক্কারজনক এমন ঘটনা। সমাজের নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা বেশি যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তাদের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় তারা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। শহরে শিশুদের মানসিক বিকাশে নেই কোনো উদ্যোগ। শিশুদের কৌশলে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করাও অপরাধীদের পক্ষে সহজ হয়।

এ বিষয়ে কথা হয় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের সমাজ এবং পরিবার ওই অর্থে শিশুবান্ধব নয়। মানুষের পাশাপাশি পরিবারগুলোও শিশুর প্রতি নৃশংস আচরণ করে। আমাদের সমাজে যে অস্থিরতা বিরাজমান, এ কারণেই শিশুর প্রতি নৃশংসতা ও হত্যার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং পরিবারে শিশুদের শাসন করতে গিয়ে আমরা শারীরিকভাবে আঘাত করি। পৃথিবীর কোথাও এমনটা নেই, আমাদের দেশেই এখনও এ রীতি চলমান।

এ ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চেয়ে একজন শিশুকে হত্যা করা সহজও বটে। যাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা রয়েছে তারা এ সুযোগ নিচ্ছে। সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি উদ্যোগ শিশুর প্রতি নৃশংসতার বিরুদ্ধে কাজ করছে। কিন্তু সমাজে যতক্ষণ না ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর থেকে আমাদের মুক্তি নেই। যত ঘটনা ঘটে তার বিপরীতে মামলার সংখ্যাও বেশ কম। এর কারণ, সব দুর্ঘটনায় মামলা কম হয়। শিশুদের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটে। মামলা চালানোর খরচও কিন্তু কম নয়। শিশু হত্যা ও নির্যাতনের প্রবণতা কমাতে সমাজে আমরা যারা বসবাস করি তাদের অনেক দায়িত্ব আছে, গণমাধ্যমের দায়িত্ব আছে, সামাজিক সংগঠনগুলোরও দায়িত্ব আছে। শিশুদের বিকাশে আগে অনেক শিশু সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিল। এসব এখন দেখা যায় না। সর্বোপরি শিশুদের প্রতি আমাদের মনোযোগ বাড়াতে হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা