× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আন্ধারমানিক নদ

বর্জ্যের স্তূপে ধ্বংসের মুখে জীববৈচিত্র্য

এইচ এম হুমায়ুন কবির, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২:০৫ পিএম

আন্ধারমানিকের পাড় জুড়ে প্লাস্টিক আর পলিথিন বর্জ্যের স্তূপ

আন্ধারমানিকের পাড় জুড়ে প্লাস্টিক আর পলিথিন বর্জ্যের স্তূপ

আন্ধারমানিক নদ। নামেই যেন মন ছুঁয়ে যায়। কিন্তু সেই আন্ধারমানিক এখন মৃতপ্রায়। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার প্রধান নদ। এ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় এ নদ ‘মানিক’ ছড়িয়েছে। 

পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ আন্ধারমানিক নদ দখল ও বর্জ্যের চাপে বিপর্যস্ত। আন্ধারমানিকের পাড় জুড়ে প্লাস্টিক আর পলিথিন বর্জ্যের স্তূপ। প্রতিনিয়ত সেগুলো মিশছে নদের পানিতে। বিনষ্ট হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর তথ্যমতে, আন্ধারমানিক নদের প্রবাহের দৈর্ঘ্য ৩৯ কিলোমিটার আর গড় প্রস্থ ৩৩০ মিটার। এ নদের গভীরতা ১৫ মিটার। এখন প্রতি বছর অন্তত ৫ ফুট কমে যাচ্ছে প্রস্থ। নদটির দুই পার পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাছবাজার, কাঁচাবাজার, কলাপট্টি, লঞ্চঘাট, হ্যালিপোর্ট, ব্রিজের গোড়া এলাকায় নদের তীরের অবস্থা বেহাল। স্থানীয়রা নিয়মিত হোটেল-রেস্তোরাঁর পচা-উচ্ছিষ্ট খাবারসহ নানা রকমের বর্জ্য ফেলছে। তীরে ফেলার কারণে এসব বর্জ্য গড়িয়ে নদে পড়ছে। প্রকাশ্যে এসব বর্জ্য ফেললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দূষণ রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। বিশেষ করে তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা ব্যবসাপ্রতিতষ্ঠানগুলোর কারণেই বেশি নির্যাতনের শিকার নদ। পাড় ধরে হেঁটে গেলে আন্ধারমানিকের তীরে সারিবদ্ধ দোকানঘরের পেছনেও একই চিত্র চোখে পড়ে।

নদের পারে হোটেল-দোকান। এর চারপাশে স্তূপ হয়ে আছে নানা রকমের বর্জ্য। ভাগাড়ের মতো পরিবেশ। ছড়িয়ে রয়েছে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, কাগজের কার্টন, ডাবের খোসাসহ নানা ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী। একটু বাতাসেই সেসব পানিতে গড়িয়ে পড়ছে। শুধু কাঁচাবাজার নয়, নদের পাড় ঘেঁষে থাকা অধিকাংশ মুদি, স্টেশনারি, ওয়ার্কশপ, কলকারখানা প্রতিদিনের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে নদের পার ব্যবহার করছে বছরের পর বছর। একসময় সৌন্দর্যের ষোলকলায় পূর্ণ ছিল আন্ধারমানিক নদ। সেই আন্ধারমানিক নদ সৌন্দর্যে যেন জং ধরতে শুরু করেছে। কিছু মানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছে এ নদ। এমনিতে ছড়া-নালা দিয়ে নদে নামছে ময়লা-আবর্জনা, এর সঙ্গে কেউ কেউ সরাসরি ফেলছে প্লাস্টিক বর্জ্য।

বহুতল পাকা-আধাপাকা ভবনসহ টিনশেড স্থাপনা তোলা হয়েছে আন্ধারমানিকের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। সবচেয়ে বেশি স্থাপনা তোলা হয়েছে আন্ধারমানিকের উত্তর পারে। পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা অন্তত ১০টি ইটভাটার ময়লাও নদে ফেলা হচ্ছে ফ্রিস্টাইলে। পৌরশহরের নাচনাপাড়া ফেরিঘাট থেকে ফিশারি পর্যন্ত আন্ধারমানিকের তীরসহ দখল করে তোলা হয়েছে এসব স্থাপনা। দুই পার পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। এসব চর ভরাটের আগেই গোপনে অনেকেই চাষযোগ্য খাস কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত নিয়ে রেখেছে। আন্ধারমানিকের প্রবাহ কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে অন্তত সাতটি স্লুইস সংযুক্ত খাল ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। পলি পড়ে এবং নতুন চর জেগে ৪০ কিলোমিটার নদটির প্রায় ২৫ কিলোমিটার স্থায়ীভাবে শুকিয়ে গেছে। 

নাচনাপাড়া ফেরিঘাট থেকে ফিশারি পর্যন্ত দূষণের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। এসব স্থানে প্লাস্টিক ও বোতলজাত পরিত্যক্ত সামগ্রীর পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল বর্জ্য, সুপারি ও নারকেলের ছোলা, পচা সবজি ভাসছে। এ ময়লা পানিতে গোসলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করায় তীরবর্তী মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর বাইরে সেখানের জীবাণু থেকে ক্যানসার, যক্ষ্ম ও কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা পর্যন্ত রয়েছে। বিকল্প না থাকায় অনেকেই নদে গোসল করে। নদের পানিতে দূষণ চরম মাত্রায় পৌঁছার কারণে অনেকের শরীরে চুলকানিসহ নানা চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা তাদের উচ্ছিষ্ট ও পরিত্যক্ত সামগ্রী কখনও নদের তীরে, কখনও সরাসরি নদেই ফেলছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদের উভয় পার ঘেঁষে থাকা অধিকাংশ মুদি, স্টেশনারি, ওয়ার্কশপ, কলকারখানা প্রতিদিনের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে নদের পার ব্যবহার করছে বছরের পর বছর। নদে ময়লা পানি বা আবর্জনা ফেলার আগে পরিবেশ নিয়ে ভাবতে হবে সবাইকে। সুন্দর পরিবেশ সুরক্ষা সবারই দায়িত্ব। পরিবেশকর্মী মেজবা উদ্দিন মান্নু বলেন, ‘বছরে ৩ কিলোমিটার জুড়ে প্লাস্টিক ও ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পৌরশহরে মাঝখানে প্রবাহিত খালের স্লুইস দিয়ে প্রতিদিন এক মণ প্লাস্টিক যাচ্ছে আন্ধারমানিক নদে। আমাদের এ নদ একসময় সৌন্দর্যে পূর্ণ ছিল। কিন্তু জং ধরেছে। মানুষ ময়লা-আবর্জনা ফেলার জায়গা মনে করছে একে। বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হয়। সবাই সচেতন না হলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে।’

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় আমি পৌরসভার সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেব।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা