প্রচ্ছদ
আরফাতুন নাবিলা
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪০ পিএম
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:০৫ পিএম
মডেল : অন্তরা; মেকআপ : রেড বিউটি সেলুন; ছবি : ফারহান ফয়সাল
প্রচণ্ড তাপদাহে জীবন ওষ্ঠাগত। বাইরে বেরোলেও যেমন গরম, তেমনই বাসার ভেতরে থাকলেও খুব একটা আরাম পাওয়া যাচ্ছে না। যা-ই খাওয়া হচ্ছে তাতেই যেন গরম আরও বেশি লাগছে। ত্বক পুড়ে যাচ্ছে, কাপড় পরে আরাম হচ্ছে না। সব মিলিয়ে অবস্থা হাতের নাগালে নেই। তবু স্বাভাবিক জীবনযাপন যেহেতু করতেই হবে, নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে সবার আগে। তীব্র এ গরমে ঘরে-বাইরে একটু স্বস্তিতে থাকতে কী করবেন দেখে নিন
বৈশাখের এ তীব্র তাপদাহে ঘরে হোক বা বাইরে স্বস্তি মিলছে না কোথাও। যারা এসির মধ্যে থাকেন সাময়িক স্বস্তি মিললেও যখন এসি থেকে বের হচ্ছেন তখন জীবন হচ্ছে ওষ্ঠাগত; যা আরও বেশি ক্ষতি করছে আমাদের শরীরের। এ ছাড়া এ সময়ে জ্বর, ঠান্ডাসহ হিটস্ট্রোকের মতো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই এ সময়ে শরীরের প্রতি দিতে হবে বিশেষ নজরÑএমনটাই বললেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ সময়ে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। ফলে খুব সহজেই পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি।’
এখন যেমন পোশাক
গরমে পোশাকের দিকে দিতে হবে বিশেষ মনোযোগ। কারণ অস্বস্তিকর পোশাকে শুধু গরমই বেশি লাগে তা নয়, হতে পারে চুলকানি বা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা। এ গরমে সুতি, লিনেন, শিফন, পাতলা খাদি কাপড়ের পোশাক বেছে নিন। আনকোরা নতুন পোশাকের চেয়ে আগের ব্যবহার করা পোশাক বেশি আরামদায়ক হবে। খেয়াল রাখবেন পোশাক যেন ঢিলেঢালা হয়। টাইট ফিটিং পোশাকে রক্ত সঞ্চালন ঠিকভাবে হয় না। এতে শারীরিক সমস্যা হতে পারে। অনেকেই ভাবেন গরমে স্লিভলেস বা ছোট হাতার পোশাক পরলে আরাম লাগবে। অথচ ঘটনা ঘটে উল্টো। হাতের অনেকখানি অংশ উন্মুক্ত থাকে বলে সেখানে সূর্যের তাপ পড়ে। ফলে ত্বক জ্বালাপোড়া হয় এবং পুড়ে কালচে ভাব চলে আসে। এজন্য বড় হাতার পোশাক পরলে এ সময় গরম কম লাগবে। পোশাকের রঙ হালকা হলে ভালো। সাদা, হালকা নীল, হালকা গোলাপি রঙের পোশাক প্রাধান্য দিন। কালো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
ত্বকের সুরক্ষায়
গরমে ত্বকের ওপর দিয়ে বেশ বড় একটা ধকল যায়। আবহাওয়ার পরিবর্তনে ত্বকে দেখা যায় নানা পরিবর্তন। গরম এবং বাইরের ধুলাবালিতে ত্বকে র্যাশ, জ্বালাপোড়াসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। তিন-চার ঘণ্টা পর রিঅ্যাপ্লাই করে নিতে হবে।
রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, ‘মুখে ভারী মেকআপ এ সময় করা উচিত নয়। বাইরে যাওয়ার আগে এবং বাড়ি ফিরে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। বাইরে গেলেও ফেসিয়াল ওয়াইপস দিয়ে মুখ মুছুন। এতে ঘামও মুছবে, ত্বকও শুষ্ক হবে না। ঠোঁটের যত্নে ব্যবহার করুন লিপ বাম বা চ্যাপস্টিক। রোজ গোসল করুন। একাধিকবার গোসলেও ক্ষতি নেই। এ ছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং বাইরে থেকে ফিরে ত্বকে বরফ লাগাতে পারেন। এতে ত্বক ঠান্ডা থাকবে।’
যা যা খাবেন
গরমে সুস্থ থাকতে হলে খাবারের দিকেও মনোযোগী হতে হবে। লাইফস্প্রিংয়ের পুষ্টিবিদ নিগার সুলতানা বলেন, ‘এ সময় অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, মাংস, তেলে ভাজা পরোটা, ফাস্টফুড একদম বাদ দিতে হবে। এমন খাবার খেতে হবে যেগুলো পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। সবজির তালিকায় অবশ্যই রাখবেন কাঁচা পেঁপে, পটোল, ধুন্দল, শসা, চিচিঙ্গা, গাজর, লাউ, পালংশাক, টমেটো ইত্যাদি। তরকারি ঝোল ঝোল করে রান্না করবেন। খেতে পারেন পাতলা ডালও। চর্বি খাবেন না এ সময়। মাংস খেলে ছোট বা মাঝারি সাইজের দেশি মুরগি বেছে নিন। নানা ধরনের শাক, সেদ্ধ ডিম, বুটের ডালের তরকারি খাদ্য তালিকায় রাখুন। যতটা সম্ভব বাড়িতে তৈরি খাবার খান। চা-কফি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। একদমই না পারলে রঙ চা পান করুন।
আমের মৌসুম শুরু হচ্ছে। আম পানিশূন্যতা দূর করতে খুব ভালো কাজ করে। এতে প্রচুর পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম আছে। আম শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া তরমুজ, বাঙ্গিও এ গরমে শরীর ঠান্ডা রাখবে। আখের রস, বেলের শরবত, পুদিনার শরবত, জিরা পানি, মিছরির শরবত, লেবু পানি যতটা পারবেন পান করবেন। চেষ্টা করুন প্রতিদিন একটা ডাবের পানি খেতে। গরমে ঘাম হয় বলে শরীর থেকে পরিষ্কার পানি বেরিয়ে যায়। এ সময় ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স তৈরি হয়। ব্যালান্স ঠিক রাখতে তাই এ পানীয়গুলো পান করা উচিত। খোসাসহ ফল, লেবু ও কাঁচা সালাদ খান।
শিশুর প্রতি যত্ন
গরমে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার হার অনেক বেশি। তাই তাদের যত্নে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। আরামদায়ক পোশাক পরাতে হবে। হাত ধোয়ার অভ্যাস ও নিয়ম শিখিয়ে দিতে হবে। তাজা ফলমূল ও সবজি খাওয়াতে হবে নিয়মিত। প্রতিদিন গোসল করিয়ে সুতি পোশাক পরিয়ে দিন। চুল ছোট রাখুন। অতিরিক্ত ঠান্ডা কিছু খাওয়াবেন না।
বাইরে গেলে সঙ্গে রাখুন