× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্বব্যাংক ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ

তিন শিক্ষার্থীর ওয়াটার চ্যাম্পস

গোলাম কিবরিয়া

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০৫ পিএম

আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:০৭ পিএম

বিশ্বব্যাংক ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশের তিন শিক্ষার্থীর টিম ওয়াটার চ্যাম্পস ফাইনাল রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়েছে

বিশ্বব্যাংক ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশের তিন শিক্ষার্থীর টিম ওয়াটার চ্যাম্পস ফাইনাল রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়েছে

বিশ্বব্যাংক ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশের তিন শিক্ষার্থীর টিম ওয়াটার চ্যাম্পস ফাইনাল রাউন্ডের উত্তীর্ণ হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেওয়া প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে তাদের এ অর্জন বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে করেছে গর্বিত।

বিশ্বব্যাংক ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতাটি বিভিন্ন দেশের যুব উদ্যোক্তাদের জন্য উদ্দীপনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আয়োজিত হয়েছিল। এ প্রতিযোগিতার লক্ষ্য ছিল বিশ্বের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পানি সমস্যার সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান আবিষ্কার করা। সমস্যাগুলো ছিল ১. অতিরিক্ত পরিমাণ পানি ২. অপর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ৩. দূষিত পানি ৪. অপ্রবন্ধিত পানি। অংশগ্রহণকারীদের দক্ষতা উন্নত করে এবং বাজারে প্রতিস্থাপনে সফল হতে উদ্যোক্তা, পানি বিশেষজ্ঞ, বিনিয়োগকারী, অন্যান্য উদ্ভাবক এবং বিশ্বব্যাপী সম্প্রদায়ের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ দেওয়া হয়।

এ প্রতিযোগিতাটি বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। প্রতিটি দলের ওপর উল্লিখিত চারটি ট্র্যাক এবং চ্যালেঞ্জের মধ্যে এক বা একাধিক লক্ষ করে সমাধান তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। মূলত এটি একটি প্রকল্প উদ্ভাবন এবং সেটিকে ব্যবসায় রূপান্তরের একটি পূর্ণাঙ্গ মডেল। ৯৫টি দেশ থেকে ১ হাজার ৬৩৩টি দল অংশগ্রহণ করেছে এ প্রতিযোগিতায়। এর মধ্য থেকে ফাইনালের জন্য ৪০টি দল নির্বাচিত হয়েছে।

ওয়াটার চ্যাম্পস টিমের কোঅর্ডিনেটর শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সামিহা তাসনিম ইরা নিজেদের প্রকল্প সম্পর্কে বলেন, ‘জৈব-ইলেকট্রোকেমিক্যাল সিস্টেমে (বিইএস) আমাদের সমাধানের অংশ ব্যবহার করে জীবাণু দূরীকরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, নর্দমার ময়লা পানি পুনর্ব্যবহার ইত্যাদি সফলভাবে সম্পন্ন করা যাবে। বিইএস একটি স্থায়ী পদ্ধতি প্রদান করে যা সম্পদ পুনরুত্থান, শক্তি উৎপাদন এবং পচনের সুবিধা দেওয়ার সহযোগিতা করে। দেশব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ পানির সমস্যা সমাধান বিষয়টি কার্যকরভাবে ঠিক করে। আপনি জানলে অবাক হবেন আমাদের দেশে কেবল ঢাকার তা-ও মাত্র ৩০% নর্দমার পানি পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং বাকি অংশ নোংরা থাকে। আমাদের এ সমাধান প্রত্যাশা করে যে এ সমস্যার একটি কার্যকর উপায় উপস্থাপন এবং জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা হবে। আমাদের প্রকল্প দ্বারা দেশি পর্যায়ে জনগণের স্বাস্থ্যে এবং পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলা সম্ভব হবে।

সুপেয় পানির ব্যবস্থাপনা প্রথা পরিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের দল সুস্থ সম্প্রদায় এবং ইকোসিস্টেম উৎপন্ন করার লক্ষ রাখে। আমরা আমাদের প্রজেক্টের জন্য কাজ শুরু করি গত বছর ডিসেম্বরে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমরা প্রাথমিক প্রজেক্ট সাবমিট করি।’ অংশগ্রহণের চিন্তা কীভাবে এলো এবং কীভাবে টিম গঠন করলেন- এ প্রশ্নের উত্তরে ইরা বলেন, ‘আমরা যখন এ চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে পারি তখন রেজিস্ট্রেশন করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের দেশের নর্দমার পানি পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা করে পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি করাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। আমরা এ বিশ্বজনীন চ্যালেঞ্জ সমাধানে অবদান রাখার উদ্দীপনা পেলাম। খুবই ব্যস্ততম সময়ের মধ্যে কলেজের ছাত্রছাত্রী হওয়ার পরও আমরা মনে করেছি হয়তো চেষ্টা করলে পারি পরিবর্তন আনতে। অনেক সন্দেহের মাঝেও আমরা এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি এবং কাজ শেষে খুবই এক্সসাইটেড ছিলাম যে ভালো একটি সমাধান প্রস্তাবের মাধ্যমে হয়তো ফাইনালিস্টের লিস্টে আমরা চলেও যেতে পারি এবং বাস্তবে তা-ই হয়। আমাদের পরিচয় অনলাইনে।

আমরা বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করি যা আমাদের পড়াশোনায় সাহায্য করে। সে ধারাবাহিকতায় আমরা বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে পরিচিত। এ প্রজেক্টটির সার্কুলার আমরা অনলাইনের মাধ্যমেই পেয়েছি এবং ডিটেইলস দেখে আমরা তিনজন এটা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের কোনো মেন্টর নেই। পড়াশোনা ঠিক রেখে তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আমরা একটি পরিপূর্ণ মডেল তৈরিতে সক্ষম হই যা সফল হলে দেশের পানি খাতে নতুন একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।’

প্রত্যয়ী ইরা আরও বলেন, ‘বিশ্বের ৯৫টি দেশ থেকে ১ হাজার ৬৩৩টি দলের মধ্যে আমরা সর্বকনিষ্ঠ ফাইনালিস্ট হয়েছি এবং বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করেছি। এ সফলতার অংশ হতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করছি। আল্লাহ আমায় আমার দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন এতে আমি কৃতজ্ঞ। এ প্রজেক্টে কাজ করার আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল বিশ্বমঞ্চে দেশের বিশুদ্ধ পানি সংকট তুলে ধরে এর সমাধান বাস্তবায়নে সাহায্য নেওয়া। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজগুলো বেশ কষ্টসাধ্য ছিল, কিন্তু দেশের জন্য ভালো কিছু হতে পারে এ ভাবনা আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে। পরবর্তী ধাপগুলোর জন্য অপেক্ষা করছি। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু অবদান রাখার স্বপ্নটি যেন আমরা পূরণ করতে পারি।’

দলের আরেক সদস্য মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সৌরভ দাশ বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত বোধ করছি ১৮-৩৬ বছর বয়সিদের জন্য উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় সর্বকনিষ্ঠ দলের অংশ হওয়ায়। যাত্রাটি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমরা জানতাম আমরা কিছু দুর্দান্ত প্রতিযোগীর বিরুদ্ধে ছিলাম, যা প্রাথমিকভাবে কষ্টসাধ্য ছিল। বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা ফাইনালে পৌঁছেছি, যা আমাদের কঠোর পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনের প্রমাণ। আমি এ যাত্রার পরবর্তী পদক্ষেপগুলোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।’

ওয়াটার চ্যাম্পস টিমের সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী প্রমি বলেন,  এ রকম একটি অর্জনের অংশীদার হয়ে আমার নিজের কাছে খুবই ভালো লাগছে। এ বছর আমার এইচএসসি থাকায় কলেজ ও পড়াশোনার চাপে খুব একটা ভালোমতো আমি কাজে খেয়াল দিতে পারিনি তাই ফাইনালিস্ট হওয়ার সে রকম আশাও ছিল না আমার। তবে আমি ভাবিনি এতেই আমরা এত বড় অর্জন হাতে পেয়ে ফেলব। যখন প্রথম শুনি আমরা সিলেকটেড হয়েছি আমার খুবই অবাক লেগেছিল এবং এতে আমি প্রচণ্ড খুশি হয়েছি, ভবিষ্যতে পড়াশোনার পাশাপাশি এ ধরনের প্রকল্পে কাজ করে যেতে চাই আমি। বিশ্বব্যাংকের এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের মানুষের পানি সমস্যার সমাধানে অবদান রাখব এবং তাদের কাছ থেকে ফান্ড নিয়ে দেশের পরিবেশ খাতে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে ভূমিকা রাখতে আমি আগ্রহী।’

প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ড ৮ মে। এদিন বিশ্বব্যাপী বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সিইও- মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলাসহ অনেকে উপস্থিত থাকবেন এবং ৪০টি ফাইনালিস্ট দলের অনলাইনে ইন্টারভিউ নেবেন। এর মধ্যে ২০টি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

স্বপ্ন ও সম্ভাবনা

ওয়াটার চ্যাম্পস প্রজেক্ট ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ইয়ুথ ইনোভেশন চ্যালেঞ্জে ফাইনালে বিজয়ী হলে ছয় মাসের অ্যাক্সিলেটর প্রোগ্রামে ট্রেনিং নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে, যেখানে তাদের ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির সিইও মেন্টর করবেন এবং প্রয়োজনীয় সব অর্থ বিশ্বব্যাংক বহন করবে। ওয়াটার চ্যাম্পস তাদের দক্ষতা এবং ফান্ডিংয়ের সাহায্যে দেশে এ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করবে। ওয়াটার চ্যাম্পস প্রজেক্ট পানি বিশুদ্ধকরণের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। তিন শিক্ষার্থীর প্রাথমিক পরিকল্পনা ঢাকাকেন্দ্রিক। সফলতার ভিত্তিতে ধীরে ধীরে পরে সমগ্র দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তারা আশা করছে, এ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের পানি সংকট বৃহৎ আকারে লাঘব হবে এবং বিদ্যুৎ খাতেও অবদান রাখবে




শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা