× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অ্যাসিডজয়ী যোদ্ধাদের ক্যাফে

টি এইচ মাহির

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৫২ পিএম

অ্যাসিড আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেছে শেরোস হ্যাঙআউট নামে ক্যাফে।

অ্যাসিড আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেছে শেরোস হ্যাঙআউট নামে ক্যাফে।

অ্যাসিডসন্ত্রাসের ঘটনা আমরা প্রায়ই শুনি। নারীর প্রতি সহিংসতায় প্রায়ই অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হতো। ঝলসে যেত মুখ কিংবা প্রাণহানি হতো। অ্যাসিড নিক্ষেপে বেঁচে যাওয়া নারীদের ঝলসে যাওয়া মুখ নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়। বিকৃত মুখের কারণে সমাজে তারা এক প্রকার অবহেলিত। লজ্জায় অনেকেই বাইরে যেতে চান না। এক প্রকার লজ্জা ও ট্রমায় একাকী দিন কাটান অ্যাসিডসন্ত্রাসে ভুক্তভোগী নারীরা। তাই ভারতের ছানভ ফাউন্ডেশন অ্যাসিড হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে ভেবেছে। অ্যাসিড আক্রমণ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং অ্যাসিড আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেছে শেরোস হ্যাঙআউট নামে ক্যাফে।


ভারতের বিখ্যাত স্থাপনা আগ্রার তাজমহল থেকে দেড় মাইলের কাছাকাছি এ ক্যাফে গড়ে উঠেছে। যেটি পরিচালিত হয় অ্যাসিড হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্বারা। ২০১৪ সালে ছানভ ফাউন্ডেশন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এ ক্যাফতে কাজ করা বেশিরভাগ হাস্যোজ্জ্বল মহিলাই অ্যাসিডসন্ত্রাসের শিকার। কারও ক্ষতবিক্ষত ত্বক, কারও কারও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারও মুখ ভয়ংকর অ্যাসিডে গলে গেছে। কেউ কেউ একাধিক অস্ত্রোপচার করেছেন। সমাজে ঠাঁই পেতে খুঁজে বেড়িয়েছেন চাকরি। অবহেলিত হয়েছেন সমাজের কাছে। তাদেরই আয়ের উপায় খুঁজে দিয়েছে ছানভ ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি অ্যাসিড হামলার শিকার নারীদের স্বাবলম্বী করতে এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। তারা প্রায়ই অ্যাসিডসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চালায়।

অ্যাসিড হামলা ভারতে একটি অন্যতম ভয়াবহ অপরাধ। সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর মতে প্রতি বছর ভারতে ১ হাজারের বেশি অ্যাসিড হামলা হয়, যদিও বেশিরভাগ হামলার ঘটনাই রিপোর্ট করা হয় না; কারণ মেয়েটি এবং তার পরিবার লজ্জা অনুভব করে এবং আবার হামলার ভয়ও কাজ করে।

২০১৮ সালে Stop Acid Attacks-এর সমীক্ষা অনুযায়ী তাদের কাছে ৪৩০ জন হামলার শিকার জীবিতের তথ্য রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৫০ জনের ওপর আগের দুই বছরে হামলা হয়েছে। সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, প্রায় ৭০ শতাংশ নির্যাতিতা নারী, যাদের মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়া দুর্বৃত্ত দ্বারা হামলার শিকার। অ্যাসিড আক্রমণের উচ্চ হারের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটিÑভারতে প্রায় স্বল্পমূল্যে অ্যাসিড কিনতে পাওয়া যায়।


শেরোস ক্যাফেতেও কাজ করে এমন হামলার শিকার নারীরা। এদের কেউ স্বামী, সৎ-মা, কেউ কুপ্রস্তাব দেওয়া দুর্বৃত্ত দ্বারা অ্যাসিড হামলার শিকার। এদের সবারই নিজ নিজ স্বপ্ন ছিল। কেউ রান্নায় দক্ষ, কেউ ফ্যাশন ডিজাইনে আবার কেউ দক্ষ কেক বানানোয়। কিন্তু অ্যাসিড হামলায় তাদের স্বপ্ন হারিয়ে যেতে বসেছিল। তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে ছানভ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে শেরোস ক্যাফে। শুধু আগ্রায় নয়, লক্ষ্ণৌতেও একটি ক্যাফে আছে। এসব ক্যাফেতে শুধু কফি কিংবা স্ন্যাক্স নয়, আছে লাইব্রেরি, রেডিও স্টেশন এবং তথ্য প্রদর্শনী। এ দুই ক্যাফেতে ৪০ জনের মতো অ্যাসিড হামলার শিকার নারী কাজ করেন। প্রত্যেকেই সমাজে অবহেলিত। এখন প্রত্যেকেই শেরোস ক্যাফেতে আয়ের উৎস খুঁজে নেওয়ার পাশাপাশি সমাজের মুখোমুখি হওয়ার আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন। লজ্জা ও ট্রমা কাটিয়ে তারা নিজ নিজ দক্ষতায় মনোযোগ দিচ্ছেন। কেউ বিউটিশিয়ানের কাজ করছেন, কেউ আগ্রহী ফ্যাশন ডিজাইনে, কাজ করছেন বুটিক নিয়ে, কেউ গহনা তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছেন। তাদের এসব কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে ক্যাফেতেই। আবার কেউ দরিদ্র শিশুদের জন্য স্কুল খুলেছেন।

অ্যাসিডসন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্য থাকে ভুক্তভোগী যাতে সমাজে মুখ দেখাতে না পারে, তাই বিকৃত করে দেয় মুখ। কিন্তু শেরোস ক্যাফের নারীরা এ ভয় জয় করেছেন। তারা এখন জীবিকা নির্বাহ করছেন। জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছেন।

আগ্রার তাজমহলের কাছে হওয়ায় এখানে প্রায়ই পর্যটক আসে। পর্যটকরা তাদের সঙ্গে সেলফি তোলে। তাদের জীবনের গল্প শোনে। তাদের স্বাভাবিক জীবনের জন্য শুভকামনা জানায়। ক্যাফেটি করোনা মহামারিতে স্তিমিত হয়ে গেলেও বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষকতায় আবার চালু হয়েছে। একদল হার না মানা যোদ্ধা এবং ক্যাফের চমৎকার পরিবেশ পর্যটকদের তাজমহলের চেয়ে কোনো অংশেই কম আকর্ষণ করবে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা