× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দক্ষিণডিহি রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি

রফিকুল আলম, অভয়নগর (যশোর)

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৩২ পিএম

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। প্রবা ফটো

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। প্রবা ফটো

যশোর জেলার শেষ সীমানা আর খুলনা জেলার শুরু যে উপজেলা দিয়ে তার নাম ফুলতলা। এ উপজেলারই একটি গ্রাম দক্ষিণডিহি এ দেশের আর দশটি সাধারণ গ্রাামের মতোই। কিন্তু এ গ্রামটি একটি বাড়ির কারণে বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীর কাছে বিখ্যাত হয়ে আছে। তা হচ্ছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি এ গ্রামে অবস্থিত।

এ বাড়িতে জন্মেছিলেন কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী। বিয়ের পর কবি এখানে এসে থেকেছেন। এ বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে কবির অনেক স্মৃতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বিগ্রহপূজা পরিত্যাগ করে নিরাকার ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করার কারণে পুত্রদের জন্য পুত্রবধূ এবং কন্যাদের জন্য জামাতা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই পীরালিরা নিজেদের মধ্যে এমনকি নিকট আত্মীয়স্বজনের মধ্যেও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য হয়েছিল। সেকালে ঠাকুরবাড়ির পুত্রদের বিয়ে ১৯-২০ বছর বয়সে এবং কন্যাদের ১১-১২ বছর বয়সের মধ্যে সম্পন্ন হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অত্যন্ত সুপুরুষ। দেশবিদেশের বাঙালি-অবাঙালি পরিবারের অনেক পাত্রীর সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তা হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সম্বন্ধই স্থির হয়নি। ওইসব কারণে রবীন্দ্রনাথকে ২৩ বছর বয়স পর্যন্ত বিয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। শেষমেশ ঠাকুরদের এস্টেটেরই এক কর্মচারী, দক্ষিণডিহি গ্রামের অধিবাসী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর ১১ বছর বয়সি কন্যা ভবতারিণী দেবীর (ডাকনাম ফেলি) সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে স্থির হয়। এ বিয়ের ঘটকালি করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা দেবীর পিসি দক্ষিণডিহিনিবাসী আদ্যাসুন্দরী দেবী। ঠাকুরবাড়ির প্রথা অনুযায়ী পাত্রের বাড়িতে (জোড়াসাঁকো) ১২৯০ সালের ২৪ অগ্রহায়ণ এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। তরুণ রবীন্দ্রনাথ দেশবিদেশের শিক্ষিত অভিজাত পরিবারের কন্যাদের সংস্পর্শে এলেও তার চেয়ে ১২ বছরের ছোট অপরিণত বয়সের এক গ্রাম্য বালিকাকে বিয়ে করেন। ঠাকুরবাড়ির প্রথা অনুযায়ী ভবতারিণী দেবীর নতুন নামকরণ হয় মৃণালিনী দেবী। বিয়ের পর ভবতারিণী দেবী কন্যাসমাদরে গৃহীত হয়েছিলেন এবং ক্রমেই এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মহিলা হয়ে উঠেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষের ভালোবাসা আদায় এবং ঠাকুরবাড়িতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া তার জন্য সহজ ছিল না। কিন্তু তা-ই তিনি করেছিলেন আপন প্রতিভায়। রবীন্দ্রনাথের বৈবাহিক জীবন স্বল্পস্থায়ী হলেও (আকস্মিক রোগে মৃণালিনী দেবীর মৃত্যু হয়) তা ছিল অত্যন্ত সুখের। প্রিয়তমা পত্নীকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্রে এর বিস্তর প্রমাণ মেলে। দক্ষিণডিহিতে এসে কবির মৌনাবৃত্তি পালনও তার সাক্ষ্য দেয়। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরও দক্ষিণডিহি গ্রামের রামনারায়ণ চৌধুরীর কন্যা সারদা দেবীকে বিয়ে করেন। সে কারণে দক্ষিণডিহি রবীন্দ্রনাথের মাতুলালয়ও বটে। মাতুলালয় থাকার কারণে রবীন্দ্রনাথ ছোটবেলায়ও দক্ষিণডিহি এসেছেন। তবে জমিদারির কারণে শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সেসব স্থানে থেকে তিনি যেসব সাহিত্যকর্ম রচনা করেন, দক্ষিণডিহির ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি। বিয়ের পর কবি বারকয়েক দক্ষিণডিহিতে শ্বশুরবাড়ি আসেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ফুল, ফল আর বিচিত্র গাছগাছালিতে ভরা শান্ত-সৌম এ গ্রামটি রবীন্দ্রনাথকে বেশ টানত। তার অনেক চিত্রে আঁকা গ্রামের দৃশ্যের সঙ্গে এ গ্রামের পরিবেশের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। কবির শশুরবাড়িটিও কম আকর্ষণীয় নয়। এর নির্মাণশৈলী চমৎকার, ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দোতলার থামগুলোয় প্রাচ্যরীতির কারুকাজ। বাড়ির ভেতর দিয়েই দোতলা ও ছাদে ওঠার চমৎকার পাকা সিঁড়ি। দোতলায় প্রশস্ত ব্যালকনি। ব্যালকনিতে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ব্যালকনির সামনে কাঠের তৈরি অপরূপ ফ্রেম বিদ্যমান। ছাদের চারদিকে বাউন্ডারি। এর সামনের দিকটি অলংকৃত। বাড়িটির নিচে চারটি এবং ওপরে দুটি কক্ষ রয়েছে। ছাদেও একটি কক্ষ রয়েছে। বাড়িটি প্রায় দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত এবং পুরো সম্পত্তির আয়তন ছিল প্রায় ৮ একর।


বিশ্বকবির শ্বশুরবাড়িসহ সম্পত্তির বেশির ভাগই এখন বেহাত। দীর্ঘ ৪০ বছর পর বাড়িটিসহ কিছু জমি উদ্ধার হয়। বাড়িটির সামনে ডানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এবং বাঁয়ে মৃণালিনী দেবীর শ্বেতশুভ্র আবক্ষমূর্তি স্থাপন করা হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে এখানে ঘটা করে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে। বাড়িটিকে সাক্ষী রেখেই প্রতি বছর ২৫ বৈশাখ এখানে ঘটা করে পালিত হয় কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী, বসে মেলা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা