লেখা ও আঁকা : স্বপ্নিল কুমার ভদ্র
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৫৬ এএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১২:২১ পিএম
বাস চলেছে হালুয়াঘাটের পথে। খুশিতে অমির মন নেচে উঠছে। অমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে আর ছোট বোন অপর্ণা দ্বিতীয় শ্রেণিতে। বাবা কলেজের প্রফেসর, উদ্ভিদবিজ্ঞান পড়ান। মা কাজ করেন ব্যাংকে। ব্যস্ত জীবনযাপন। ঘরে আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না অমির। কদিন ধরে ভাবছিল এবারের ছুটিতে কোথাও গেলে ভালো হতো। সেদিন বাবা মাত্র কলেজ থেকে ফিরেছেন। বাবার ফোন বেজে উঠল। অমির দাদা ফোন করেছেন। অমির বাবা ফোনে কথা বলা শেষ করে অমিকে ডাকলেন। বাবা বললেন, হ্যাঁ, শোনো একটা সুখবর আছে। অমি চোখ বড় বড় করে বলল, কী বাবা? বাবা বললেন, আগামী শুক্রবার আমরা তোমার দাদাবাড়ি যাচ্ছি। অমির বিশ্বাস হচ্ছিল না। অপেক্ষায় দিন গুনতে লাগল অমি। শুক্রবার খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়ল সে। সবার সঙ্গে বাসস্টেশনে গেল অমি। এই প্রথম সে যাচ্ছে গ্রামের বাড়ি। বাবা টিকিট কেটে রেখেছিলেন আগেই। বাস ছাড়ার আগে সবাই উঠে বসলেন বাসে। অমি বাবাকে বলল, ঠিকানাটা ভালোভাবে নিয়েছ তো? বাবা হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন, আমার বাড়ি আমি চিনব না? কী যে বলিস! যেতে যেতে কত সুন্দর দৃশ্য যে দেখল! গল্প করতে করতে কখন যে হালুয়াঘাটে এসে গেছে অমি টেরই পেল না। বাসস্ট্যান্ডে ছোট কাকু দাঁড়িয়ে ছিলেন। অটোরিকশায় উঠে অমি কাকুর কাছে জানতে চাইল, তাদের গ্রামের বাড়ি গাঙিনার পাড় হলো কেন? কাকু বললেন, ওখানে একটা নদী আছে যার নাম গাঙিনা। আর এই নদীর তীরের গ্রাম বলে গ্রামের নাম গাঙিনাপাড়। কাকু একটু পরে বললেন, এই তো আমরা এসে গেছি। অমি দেখল সরু খালের মতো একটা নদী। আর তার তীরঘেঁষে একটা গ্রাম। ওই তো এক বাড়ির উঠোনে দাদাকে দেখা যাচ্ছে। অমি দৌড়ে গিয়ে দাদাকে জড়িয়ে ধরল। দাদা হেসে বললেন, ‘আরে আমার দাদাভাই কত বড় হয়ে গেছে! এরপর অমি হাত-মুখ ধুয়ে নাশতা সেরে চারদিক ঘুরে দেখতে লাগল। চারদিকে গাছপালা, পাখির ডাক। অমি যত দেখে ততই অবাক হয়। একটু পর ছোট কাকু ও বাবা অমিকে নিয়ে পাড়ার উঠোন দিয়ে হেঁটে হেঁটে একটা জায়গায় যায়। বিকালে সবাই উঠোনে গোল হয়ে বসে অনেক গল্প করে। খুব আনন্দের সঙ্গেই দিন কেটে গেল। দেখতে দেখতে ফেরার দিন ঘনিয়ে এলো। কাল থেকে স্কুল খোলা। এজন্য অমির মন খারাপ। আজকে ময়মনসিংহে ফিরতে হবে। বিকালে অমিরা বাসস্ট্যান্ডে গেল কাকুর সঙ্গে অটোরিকশা চড়ে। তারপর বাসে উঠে বসল। শেষ বিকালের মায়ামাখা সূর্যমামা তাকে বিদায় জানাচ্ছে। যেন বলছে, আবার এসো তুমি। যেতে যেতে অমি বনবনানী আর তার প্রিয় গ্রামের ছবি দেখছিল আর ভাবছিল এই বেড়ানোর স্মৃতি তার মনে গেঁথে থাকবে।
ষষ্ঠ শ্রেণি, ইউনিক প্রগ্রেসিভ স্কুল, ময়মনসিংহ